আবুল কাসেম
২ নভেম্বর ২০২২, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

জনগণের সেবক হিসাবে তাঁদের পাশে থাকতে চাই

জনগণের সেবক
মঞ্জুর শাফী চৌধুরী এলিম

বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এবং বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর শাফী চৌধুরী এলিম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রামিক শহরে বেড়াতে এলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের কন্ঠস্বর বাংলা সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক ইকবাল ফেরদৌস এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন।

সাক্ষাৎকারে তিনি আমেরিকায় বসবাসের স্মৃতিচারণসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলা সংবাদ পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হলো:-

আপনার পরিচিতি জানতে চাই?

আমার নাম মঞ্জুর শাফী চৌধুরী এলিম। আমার বাবা মৃত মুহিবুর রহমান চৌধুরী এবং আমার মাতার নাম মেহেরুন্নেসা খানম চৌধুরী। আমার স্ত্রীর নাম হচ্ছে সুবিনা আহমদ চৌধুরী। আমার দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। বড় মেয়ে মিশিগানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে মাধ্যমিকে লেখাপড়া করছে।

তারা বর্তমানে মিশিগানে থাকে। আমার জন্ম ১৯৬৮ সালে। আমি সিলেট তথা বাংলাদেশের খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠ মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) থেকে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করি। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে প্রবাস জীবন শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ছিলাম তারপর ২০০০ সালে নিউইয়র্ক থেকে মিশিগানে চলে আসি।

আমেরিকাতে প্রথম কাজ কি ছিল?

আমেরিকায় পাড়ি জমানোর পর প্রথমে আমি রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করি। আমি রেস্টুরেন্টের ফন্টে কাজ করতাম। সপ্তাহে ছয়দিন কাজ করতে হতো।

আমেরিকাতে আপনার প্রথম ব্যবসা সম্পর্কে বলুন?

আমেরিকায় আমি, মুরাদ ও টুকন মিলে প্রথম বিলিয়ার্ড বোর্ড এর ব্যবসা শুরু করেছিলাম। পাশাপাশি আমাদের ফাস্টফুডের ব্যবসাও ছিল। তারপর যখন মিশিগান আসি তখন নিজের রেস্টুরেন্টের কাজের অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে আমি নিয়াজ ও লিটু মিলে ‘আলাদিন রেস্টুরেন্ট’ নামে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করি।

নিউ ইর্য়কে ব্যবসায় সাফল্য না পেলেও মিশিগানে আলহামদুলিল্লাহ ব্যবসায় সফলতা আসে। তাই বলে প্রথম ব্যবসাগুলোর অভিজ্ঞতা যে কাজে লাগেনি এমন নয় বরং প্রতিটি ব্যর্থতাই সফলতার বীজ রোপন করে।

আমরা শুরুর গল্প জানতে চাই?

শুরুটা অনেক কষ্টের ছিল। কারণ আমরা যখন নিউইয়র্ক থেকে এখানে আসলাম, তখন এখানে (মিশিগানে) রেস্টুরেন্ট এ খাওয়ার প্রচলন এতোটা গড়ে উঠেনি। সবার ধারণা ছিল মিশিগানে রেস্টুরেন্ট চলবে না। কারণ এখানে কোন ইয়াং ক্রাউড নাই। আবার বেশিরভাগ বাংলাদেশি প্রবাসী এখানে পরিবারের সাথে বসবাস করে ফলে বাইরে গিয়ে খাওয়ার প্রবণতা ছিল না। আমরা যখন এখানে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করি তখন কাস্টমার তৈরি করা ছিল সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

এক কথায় এখানে এই ব্যবসার পরিবেশ রেডি (প্রস্তুত) ছিল না। আর যত টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছিল তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ আমরা বিনিয়োগ করেছিলাম। কারণ আমাদের ওই সময় প্রাথমিক খরচে কিছুটা ভুল ত্রুটি ছিল।

বাংলাদেশে কত সালে ফিরে গেলেন?

এটা একটা ভালো প্রশ্ন। আমি বাংলাদেশে ২০১২ সালে ফিরেছিলাম। কারণ দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকার সময় আমার চিন্তা ছিল কোন সুযোগ পেলেই আমি বাংলাদেশে যাবো‌।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে গিয়ে কী উদ্যোগ গ্রহণ করলেন?

আমার বাংলাদেশের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন আমাকে বাংলাদেশের পাওয়ার বিজনেস (বিদ্যুৎ ব্যবসা)-এর সম্ভাবনার কথা জানান। তখন আমি আমেরিকা থেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুরু করি। তাছাড়া প্রবাসের অনেককেই এই খাতে বিনিয়োগ করতে আমি উৎসাহিত করি। সিলেটে আমরা বারাকা পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানি গঠন করে এই খাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

আমাদের প্রথম বিনিয়োগ ছিল ফেঞ্চুগঞ্জে। পরিমাণ ছিল ২০৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৭৫ শতাংশ হচ্ছে লোন এবং ২৫ শতাংশ আমাদের নিজস্ব অর্থ। এটাতে আমাদের দেশের প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই বিনিয়োগ করেছেন। এখানে আসলে আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ছিল। এরপর বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি হিসেবে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড গঠন করে চট্টগ্রামে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করছি।

আপনাদের কোম্পানির বর্তমান ভ্যালুয়েশন কত?

এখন ৪টি প্রজেক্ট মিলে আমাদের কোম্পানির ভ্যালুয়েশন দুই হাজার কোটি টাকার মতো। যা শুরু হয়েছিল মাত্র ২০৫ কোটি টাকা দিয়ে।

আপনারা কি নতুন বিনিয়োগকারী নিচ্ছেন?

আমরা নতুন কোনো প্রজেক্ট গ্রহণ করলে নতুন বিনিয়োগকারী নিয়ে থাকি। এখন আমাদের দুটি নতুন প্রজেক্ট চলমান সেখানে আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন তারা বিনিয়োগ করেছে।

আমরা তাদের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা নতুন কোন বিনিয়োগকারী নিচ্ছি না তবে আবারও নতুন কোন প্রজেক্ট গ্রহণ করলে নতুন বিনিয়োগকারী নেওয়া হবে।

বাংলাদেশে বতর্মানে ব্যবসা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিবেশ কেমন?

বতর্মানে বাংলাদেশে ব্যবসা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সবচেয়ে ভালো সময় বিরাজমান। বর্তমান সরকার নানামূখী সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের।

ব্যবসা ক্ষেত্রে কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

সমস্যা তো আছেই। আমরাতো এই দেশের (যুক্তরাষ্ট্রের) সাথে বাংলাদেশকে তুলনা করতে পারিনা। সেটা হলো আমরা অনেকেই যে সেক্টরে ব্যবসা শুরু করি সেই সেক্টরে আমাদের অনেক কিছুই জানার থাকেনা। আমাদের এক্সপেক্টেশন (প্রত্যাশা) টা অনেক বেশি থাকে। সেটা বিবেচ্য বিষয়।

বিশেষ করে আমি যখন এই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে যাই, তখন বাস্তবতাটা একটু ভিন্ন ছিল। আমাদের সবকিছু গুছিয়ে নিতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। আমি মনে করি আমাদের কিছু দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ রয়েছে, সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে এবং সেইসাথে ওয়ানস্টপ সার্ভিসগুলো ব্যবসার জন্য খুবই জরুরি। এখন এইসব ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আগে এত সহজ ছিল না। আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে ব্যবসায়ীরা কিন্তু এখনকার মতো সহযোগিতা পেত না।

একসময় আমাদের পাওয়ার (বিদ্যুৎ) সেক্টরে কোন অরগানাইজেশন ছিল না। আমাদের একত্রিত হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। আমাদের এখন পাওয়ার সেক্টরের জন্য একটি সংগঠন রয়েছে। তার নাম বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস এসোসিয়েশন। সংক্ষেপে আমরা বিপ্পা বলে থাকি‌। আমিও এই সংগঠনের একজন ডিরেক্টর। এই সংগঠন থাকার কারণে এই সেক্টরে ব্যবসা করা অনেকটা সহজ হয়েছে।

প্রবাসীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে গেলে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করতে পারে?

বাংলাদেশে তারা প্রথমত পাওয়ার সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারে। তাছাড়া ফার্মাসিটিক্যাল, ফিশিং (মৎস), পোশাক এবং আইটি সেক্টরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভবনা রয়েছে, সেখানেও বিনিয়োগ করতে পারেন।

আপনার রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রের কথা একটু জানতে চাই?

আমি যদিও একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়েছি, তবুও আমি নিজেকে একজন সমাজকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। আমি সেই লক্ষ্যেই কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে আমি দেখতে পাই যে, আমি যদি রাজনীতিতে সংযুক্ত হই তাহলে আরও বেশি করে সমাজের জন্য কাজ করতে পারব।

আর নির্বাচিত হলে আরেকটু বেশি বড় করে করা যাবে। আসলে সেটা সত্যি হয়েছে। কারণ আমি গত তিন মাস আগে নির্বাচিত হওয়ার পরে দেখেছি যে আমার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার এলাকার মানুষের উন্নয়নে কল্যাণমূখী কাজে আমি নিবেদিত থাকতে চাই। জনগণের ভালোবাসা অর্জনে প্রয়োজন নিষ্ঠা ও সততা। নির্বাচনের সময় এলাকার মানুষের আমার এবং আমার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা আমাকে আজীবনের জন্য ঋনী করে রেখেছে। আমি জনসেবায় নিজের জীবন সপে দিয়েছি।

প্রবাস জীবনে যারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছেন তাদের বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?

বতর্মানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক দেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে গিয়ে নিজ দেশের সম্মানকে ক্ষুণ্ণ করছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি মনে করি প্রবাসীরা যে দেশে অবস্থান করবেন সেই দেশের আইন মেনে রাজনীতি চর্চা করবেন, তাহলে তা দেশের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে।

আপনি বাংলা সংবাদ পত্রিকা পড়েছেন। এটা সম্পর্কে আপনার অনুভূতি শুনতে চাই?

মিশিগানে বাংলা পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়ার যে আবেগ-অনুভূতি সেটা তৈরি করেছে বাংলা সংবাদ। আমাদের কমিউনিটির ইতিবাচক সংবাদ তুলে ধরছে বাংলা সংবাদ। এই পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালা আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে যুক্ত থেকে মিশিগানের বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করছে। ইতিবাচক কাজে বাংলা সংবাদের উৎসাহগুলো অব্যাহত থাকুক শুভ কামনা রইলো।

আরও পড়ুনঃ “প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে দেশ সমৃদ্ধ হবে” – তাহমিন

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওয়ারেন কমিউনিটি লিডারশিপ সম্মাননায় ভূষিত হলেন কবির সুমন

লটারিতে ১ লাখ ডলার জিতে নিলেন জামি হকিন্স

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ এবং নানান সুবিধা

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার বাতিলে আইন করছে পোল্যান্ড

কমলা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণায় বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি

হাসপাতালে মাহাথির মোহাম্মদ

কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করছেন রিয়েলেটর মুহিবুল হাসান চৌধুরী

পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মনে করেন ট্রাম্প

মটর সিটি ক্যারাম টুর্নামেন্ট ২০২৪- সম্পন্ন

১০

ভবানীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদ-এর আত্মপ্রকাশ

১১

আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে বিলেতে আলোচনা ও কবিতা পাঠ

১২

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ড্রোন কিনছে ভারত

১৩

আশাবাদী হওয়ার উপায়

১৪

ক্যান্সারের চিকিৎসা : সহজ ও কঠিন

১৫

ঢাবি শিক্ষক ছাড়া কি ভিসি হওয়া যায় না

১৬

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিন মার্কিন অর্থনীতিবিদ

১৭

মিশিগানে তিন দিনের প্রচারণায় কমলা হ্যারিস

১৮

মিশিগানে বিশ্ব সিলেট সম্মেলন-২০২৫ আয়োজনের উদ্যোগ

১৯

কমলা হ্যারিস এবং টিম ওয়ালজের সমর্থনে হ্যামট্রামিকে অফিস উদ্বোধন

২০