সৈয়দ মহসিন একজন সফল রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেইনার। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর রয়েছে অগাধ জ্ঞান এবং তিনি এ ক্ষেত্রে সাফল্যও দেখিয়েছেন। একজন ট্রেইনার হিসেবে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘বস এজেন্টস একাডেমি’। তাঁর জীবনের নানাকথা উঠে এসেছে গল্প-আড্ডায়। বাংলা সংবাদ পত্রিকার পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন।
সৈয়দ মহসিন: আমার পুরো নাম সৈয়দ মহসিন। আমার পৈত্রিক নিবাস মৌলভীবাজার জেলার শমসেরনগরে। তবে আমাদের সিলেট শহরের সদর উপজেলার টুকেরবাজারে নিজস্ব বাসা রয়েছে। আমার অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রা আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে।
আপনার জন্মস্থান ও বড় হয়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।
সৈয়দ মহসিন: আমার জন্ম বাংলাদেশে হলেও বড় হয়েছি সৌদি আরবের জিদ্দায়। মাত্র ছয় মাস বয়সে আব্বু-আম্মুর সাথে আব্বুর কর্মস্থল সৌদি আরবে চলে আসি। আমার আব্বু দীর্ঘ তেইশ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। এরপর আমার বয়স যখন তেরো বছর, তখন আমরা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আসার পর, আমি প্রাথমিকভাবে নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় নিয়েছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি আমার গাঁয়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে আবার যুক্ত হয়ে যাই।
আপনার পড়ালেখা সম্পর্কে জানতে চাই।
সৈয়দ মহসিন: আমার পড়ালেখার শুরুটা জিদ্দাস্থ এম্বেসি স্কুলের বাংলা মিডিয়ামে। এরপর বাংলাদেশে চলে আসলে আমি সিলেট নগরীর আখালিয়াস্থ সিলেট রাইফেল্স পাবলিক স্কুল (বর্তমানে বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ) থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি পাশ করে স্কলার্সহোম শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসে ভর্তি হই। ২০০৬ সালে এইচএসসি পাশের পূর্বেই আমি আমেরিকায় চলে আসি। এখানকার পার্শিং হাইস্কুল ডেট্রয়েট থেকে এইচএসসি পাশ করি। এরপর ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ব্যাচেলর সম্পন্ন করি।
আমেরিকায় আপনার কর্মজীবনের শুরুটা জানতে চাই।
সৈয়দ মহসিন: বড় ছেলে হিসেবে পরিবারে কন্ট্রিবিউশন করতে হতো বিধায় কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমাকে ফুলটাইম জব করতে হতো। আমি প্রথমে সেভেন মাইল রায়ান চার্চেস চিকেন জব করি। এরপর ফার্স্ট ফুড রেস্টুরেন্ট, টাবিশ শপ এবং আবার চার্চেস চিকেনে কাজ করি। এছাড়া এনওয়াইএক্স কোম্পানিতে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করেছি। এরপর ওই কোম্পানির ব্যাকক্রাফট হওয়ায় আমি বুঝতে পারলাম যে, ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে আমার ভবিষ্যত থাকবে না। এ সময় আমি ‘রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড’ গ্রন্থটি পড়লে আমার চিন্তাধারা বদলে যায় এবং নতুন কিছু করার প্রেরণা পাই।
আপনার ব্যবসার শুরুটা সম্পর্কে জানতে চাই।
সৈয়দ মহসিন: ২০০৯-২০১১ এ তিনবছরের মধ্যে আমার বন্ধুদের অনেকেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইনকাম করছেন। এটা দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম, ক্রেগলিস্ট থেকে ফোন ও আইপ্যাড কিনবো এবং এরপর তা অ্যামাজনে বিক্রি করবো। তিন থেকে চার বছর এ কাজ করে বেশ লাভবান হই। প্রথমে আমরা ইলেকট্রনিক্স দিয়ে শুরু করেছিলাম। পরে ডিজাইনের প্যারাডক্সসহ মিশিগান মল থেকে অনেক কিছু ক্রয় করে বিক্রি করি। অ্যামাজন আমাদেরকে সাটডাউন শুরু করলে তখন আমি নিজের টাকাগুলো তুলে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ইনভেস্ট করি। আমি তখন ফোরক্লোজারের মাধ্যমে ঘর কিনতাম এবং এক মাসের মধ্যে বিক্রি করে ফেলতাম। এতে আমি যথেষ্ট লাভবান হই।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং-এর যাত্রা শুরু কবে?
সৈয়দ মহসিন: আমার রিয়েল এস্টেট সেলস-এ প্রবেশের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। একসময় আমি আমার ইনভেন্টরিগুলো পার্টনারদের কাছে সেল করে রিয়েল এস্টেট বিজনেসে মনোনিবেশ করি। এরপর ডেট্রয়েটে একটি ইনভেস্টমেন্ট ফার্মে ট্রানজেকশন প্রসেসর হিসেবে কাজ করি। সেখানে প্রতিদিন নতুন ডিল খুঁজে বের করতে হতো। আমার লাইসেন্স থাকায় আমি নিজেই তাদেরকে অফার করতাম। এরপরই আমার নতুন যাত্রা শুরু হয়।
আপনার ‘বস এজেন্টস একাডেমি’ যাত্রার শুরুর গল্পটা জানতে চাই।
সৈয়দ মহসিন: রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে বিল্ড আপ করার জন্য অনেক কিছু শিখতে পারি। যা মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে উদ্বুদ্ধ করে। এরপরই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিই। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হয়। ‘বস এজেন্টস একাডেমি’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বর্তমানে একশত বিশজন এজেন্ট কাজ করছেন, যারা রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে ডেভেলপ করার পদ্ধতি জানেন এবং সফল হচ্ছেন।
আপনার একাডেমি নিয়ে স্বপ্নের কথা শুনতে চাই।
সৈয়দ মহসিন: ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১০০০ জন রিয়েল এস্টেট এজেন্টকে আমার একাডেমি থেকে যথাযথ ট্রেনিং দিতে চাই। তারা বিজনেসকে ডেভেলপ করে তাদের স্বপ্নপূরণের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন। আমি বিশ্বাস করি, সঠিক প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা তাদেরকে সফলতার শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
বাংলা সংবাদ-কে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
সৈয়দ মহসিন: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন