আবুল কাসেম
২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

প্রবাসে দলাদলি, মারামারি, রক্তারক্তি আর কত? এতে বাঙালি কমিউনিটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে

গত ২১শে ফেব্রুয়ারির পর মিশিগানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ঘটনার ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়েছে এবং এ নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রাম্যাক শহরে গত ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে হ্যামট্রাম্যাক সিটি হল প্রাঙ্গণে শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক দেয়া নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত।

মিশিগানে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক সংগঠন রয়েছে। একটা হচ্ছে স্টেট অন্যটা হচ্ছে মহানগর, এছাড়াও রয়েছে, ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন। সম্প্রতি একই দলের নামে আরেকটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং এই দলের নেতা কর্মীরা শহিদদের উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক দেয়ার সময় অন্যরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর গালাগালি, ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে হ্যামট্রাম্যাক সিটি কর্তৃপক্ষ (যারা বিগত কয়েক বছর যাবত হ্যামট্রাম্যাক সিটি হল প্রাঙ্গণে শহিদদের উদ্দেশ্যে অস্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করে পুষ্পস্তবক দেয়ার আয়োজন করছেন) অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর মধ্যরাতে উভয় দলের নেতা কর্মীরা একটি রেস্টুরেন্টের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে আবার কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে, এতে একজনের মাথা ফেটে যায় এবং তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে এবং পরিস্থিতি শান্ত করে। পুলিশ এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে। সেই রক্তাক্ত ছবি, পুলিশ যে একজনকে গ্রেফতার করেছে, গালাগালির ভিডিও ও ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে।

মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন করার কথা ভাবগম্ভীর পরিবেশে কিন্তু সেটা যখন হাতাহাতি ও মারামারির পর্যায়ে পৌঁছায় তখন এর উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়।

গত কয়েক বছর যাবত হ্যামট্রাম্যাক সিটি কর্তৃপক্ষ সিটি হল প্রাঙ্গণে শহিদদের উদ্দেশ্যে অস্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণ করে পুষ্পস্তবক দেয়ার আয়োজন করে আসছেন যা মিশিগান প্রবাসী প্রতিটি বাঙালির গর্বের ও আনন্দের বিষয়। আরো আনন্দের বিষয় হ্যামট্রাম্যাক সিটির উদ্যোগে সিটি প্রাঙ্গণে স্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপনের কার্যক্রম চলছে, এর বাজেট ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ডলার, ফান্ডের সংস্থান হলেই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, ইতোমধ্যেই ফান্ডের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা শুরু হয়েছে।

কিন্তু এ ধরনের অনাকাঙিত ঘটনা মানুষের মনে রেখাপাত করে এবং পরবর্তীতে এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করে যা আমাদের জন্য শুভ নয়, বিশেষ করে এখানে জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা শিশু কিশোর, কিশোরীদের জন্য। এসব ঘটনায় তাদের মধ্যে আমাদের কমিউনিটি নিয়ে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয় এবং এসব অনুষ্ঠানে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।

মিশিগানে যে এটাই এ ধরনের প্রথম ঘটনা তা নয়, এর আগেও খেলা, মেলা, কনস্যুলেট অফিসের অস্থায়ী কার্যালয়ের কার্যক্রম নিয়ে মারামারি, মামলা, গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক এমন ঘটনায় মিশিগান প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মিশিগানে প্রায় অর্ধ লক্ষ বাঙালির বাস।

এখানে বাঙালি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের সংখ্যা তিন শতাধিক। কিন্তু একটি শক্তিশালী বাঙালি কমিউনিটি বিনির্মাণে এসব সংগঠন সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন।

শুধু যে মিশিগানে এমন ঘটনা ঘটেছে তা নয়, গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণ দিতে আসলে এর পক্ষে আওয়ামী লীগ জাতিসংঘ ভবনের সামনে জন সমাবেশ করে অন্যদিকে এর প্রতিবাদে বিএনপি আরেকটি সমাবেশের আয়োজন করে। পরের পাতায়।

এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে গালাগালি, ধাক্কাধাক্কি, ধাওয়া, পালটা ধাওয়া ও হাতাহাতি, মারামারির ঘটনা ঘটে, এতে বেশ কয়েকজন আহত হন, পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

সেই ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যাতে দেখা যায় একদলের নেতা কর্মীরা অন্য এক দলের এক বড় নেতাকে বেধর মারপিট করছে, তিনি এ থেকে বাঁচার জন্য আকুতি করছেন কিন্তু প্রতিপক্ষ নির্বিকার।

এসব খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম, পত্রিকা ও টিভিতে ছাপানো ও দেখানো হচ্ছে যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এসব খবরে কে আওয়ামী লীগ করেন আর কে বিএনপি করেন তার খবর আসে না, এখানে খবর হয় বাংলাদেশের মানুষের অর্থাৎ আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের (বাংলাদেশি আমেরিকান)।

আমরা প্রবাসে যে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি না কেন প্রতিটি বাঙালিই বাংলাদেশের একেকজন প্রতিনিধি। আমরা এখানে কোন ভাল কাজ করলে, উদ্ভাবন করলে তাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, আবার খারাপ কিছু করলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সুন্দর কমিউনিটি উপহার দেয়া, তাদের বাংলা, বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর জন্য কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে দলাদলি ভুলে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

আমাদের পরিচয় আমরা বাঙালি, আমরা সুন্দর একটি জীবন ও জীবিকার জন্য বাংলাদেশ থেকে উন্নত বিশ্বে এসেছি, এখানের সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরাও যে ভাল কিছু করতে পারি তা বহির্বিশ্বেকে দেখিয়ে দিতে হবে, তাতেই হবে আমাদের সার্থকতা।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লেখক ইশতিয়াক রুপু’র স্মৃতিচারনমূলক গদ্যের বই ‘জলজোছনার জীবনপত্র’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ফ্যাশন ও উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে পণ্য তৈরিতে জোর হুয়াওয়ের

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের জন্য অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ দল

প্রবাসে দলাদলি, মারামারি, রক্তারক্তি আর কত? এতে বাঙালি কমিউনিটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ বিশ্বব্যাংকের (এমডি) অ্যানা বেজার্ড এর

বিপিএল এর কিছু প্লেয়ার এর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কোচ হাথুরু

বসে বসে কাজ, ডেকে আনে সর্বনাশ

বড়লেখায় ভাষা শহীদদের প্রতি নিসচা’র শ্রদ্ধা নিবেদন: নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ

প্রতিদিন শ্যাম্পু করা ও হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার কি চুলের ক্ষতি করে?

রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ কী?

১০

যেসকল দেশের নাগরিকরা ভিসা ছাড়া উমরাহ পালন করতে পারবেন

১১

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলো আর্জেন্টিনা

১২

হার্ট সতেজ রাখতে প্রয়োজন খাদ্যভ্যাসে ৫টি পরিবর্তন

১৩

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর উপায়

১৪

টং টং: বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিশু

১৫

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি: ২ বাংলাদেশি যুবক নিহত

১৬

রাশিয়ায় কারাবন্দী বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যু

১৭

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড: নতুন চুক্তিতে সাকিব-শান্তদের বেতন

১৮

পাকিস্তানের নির্বাচনে যেভাবে ভূমিকা বদল হল ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফের

১৯

মিয়ানমার সংকট: চীন-ভারতের স্বার্থ আর বাংলাদেশের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

২০