প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ সম্মানজনক নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয় ১৯০১ সালের ১০ ডিসেম্বর। এ পুরস্কারের শুরুতে রসায়ন, পদার্থ, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তি-এই পাঁচ শাখায় নোবেল দেওয়া হতো। এরপর যুক্ত করা হয় অর্থনীতি। সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তাঁর রেখে যাওয়া অর্থে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবরে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আয়োজিত হয় নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ১৮৯৫ সাল থেকে। ওই বছর জনহিতৈষী সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল এই পুরস্কারের প্রচলন করেন। তবে পুরস্কার প্রদান শুরু হয় ১৯০১ সাল থেকে। প্রতি বছর প্রত্যেক বিজয়ীকে একটি স্বর্ণপদক, একটি ডিপ্লোমা সনদ এবং নোবেল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কিছু অর্থ প্রদান করা হয়। এর অর্থমূল্য মোট ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা বা প্রায় ১০ লাখ ৬৭ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো! বিজয়ীদেরকে নোবেল লরিয়েট বলা হয়। ২০২৪ সালে যারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাদেরকে নিয়ে বাংলা সংবাদের বিশেষ আয়োজন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন
চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শরীরতত্ত্বে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন। ৭ অক্টোবর নোবেল কমিটি তাদের নাম ঘোষণা করে। মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার ও জিন নিয়ন্ত্রণে ট্রান্সক্রিপশন পরবর্তী ভূমিকা বিষয়ক গবেষণার জন্য তারা এই পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের গবেষণা কোনো প্রাণীর দেহ গঠন ও কাজ কীভাবে করে, তা বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের হ্যানোভারে জন্ম নেন ভিক্টর অ্যামব্রোস। তিনি ১৯৭৯ সালে এমআইটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বার্কলিতে জন্ম নেন গ্যারি রাভকুন। তিনি ১৯৮২ সালে হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন মার্কিন বিজ্ঞানী জন হোপফিল্ড ও কানাডিয়ান বিজ্ঞানী জিওফ্রে হিন্টন
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী জন হোপফিল্ড ও কানাডিয়ান বিজ্ঞানী জিওফ্রে হিন্টন। তারা মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির সাহায্যে আর্টিফিশিয়াল নিউরন নেটওয়ার্ক ডিজাইন করে এই পুরস্কার লাভ করেন। হোপফিল্ড বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আর হিন্টন অধ্যাপনা করছেন কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যলয়ে। জন হপফিল্ড নিউরাল নেটওয়ার্কের এমন একটি কাঠামো তৈরি করেছেন, যা তথ্য জমা করে রাখার পাশাপাশি আবার পুনর্গঠন করতে পারে। অন্যদিকে হিন্টনের পদ্ধতিটা একটু আলাদা। তিনি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরির একটি বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। সেটা বিভিন্ন ডাটার ভৈতর থেকে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের ডাটা খুঁজে বের করতে পারে। ৮ অক্টোবর সুইডিশ নোবেল একাডেমি এই পুরস্কার ঘোষণা করে।
রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পার
২০২৪ সালে রসায়নে নোবেল পেয়েছেন তিন মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পার। কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন এবং প্রোটিনের কাঠামো তৈরির গবেষণার জন্য এই পুরস্কার লাভ করেন। ৯ অক্টোবর সুইডিশ নোবেল একাডেমি এই পুরস্কারের ঘোষণা দেয়।
সাহিত্যে নোবেল পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান ক্যাং
দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান ক্যাং ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ১০ অক্টোবর সুইডিশ নোবেল একাডেমি তার নাম ঘোষণা করে। মানব জীবনের দুঃখ-কষ্ট কাব্যিকভাবে রূপায়ন করার স্বীকৃতি হিসেবে হান ক্যাংকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রথম ২০১৫ সালে ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। তার জন্ম দক্ষিণ কোরিয়ার শহর গোয়াংজুতে। তার পরিবার ছিল সাহিত্যানুরাগী। লেখালেখির পাশাপাশি হান কাং শিল্প ও সংগীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
শান্তিতে নোবেল জয় পেলো জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন
২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেল জয় করে নিলো জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। ১১ অক্টোবর নরওয়ের রাজধানী অসলোর নোবেল ইনস্টিটিউট থেকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। নরওয়েজিয়ান কমিটি জানায়, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টা এবং পরমাণু অস্ত্র আর কখনো ব্যবহার করা যে উচিত নয়, সেটি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য জাপানের সংগঠনটিকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে ১৯৪৫ সালে পারমাণবিক বোমা হামলা হয়েছিল। এই হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে ১৯৫৬ সালে নিহন হিদানকায়ো নামের সংগঠনটি গঠিত হয়।
অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিন মার্কিন অর্থনীতিবিদ
অর্থনীতিতে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন আমেরিকার তিন অর্থনীতিবিদ ড্যারেন আসেমগ্লো , সাইমন জনসন ও জেমস এ. রবিনসন। বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান কীভাবে গঠিত হয় এবং সমৃদ্ধিতে এর প্রভাব কেমন, তা নিয়ে কাজ করার জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন তারা। বিভিন্ন দেশের সমৃদ্ধিতে এত পার্থক্য কেন দেখা যায়, তা নিয়ে নতুন ধারণা দিয়েছেন এ ত্রয়ী অর্থনীতিবিদ। ১৪ অক্টোবর সুইডেনের স্টকহোম থেকে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে মার্কিন এই তিন অর্থনীতিবিদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বছর নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শেষ হলো।
মন্তব্য করুন