“প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে দেশ সমৃদ্ধ হবে” - তাহমিন

“প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে দেশ সমৃদ্ধ হবে” – তাহমিন

তাহমিন আহমেদ জন্ম এবং বেড়ে উঠা বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। তারা আট ভাই এবং পাঁচ বোন। বাবা কন্ট্রাক্টরী ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিলেন। সেই সুবাদে পারিবারিক ভাবে আট ভাই ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত। তিনি ১৯৯০ সালে পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বসবাস করতে শুরু করেন। মিশিগানে অবস্থানকালে হোটেল ম্যানেজমেন্টের নিয়ে লেখাপড়া করে পনের বছর যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার হোটেল ইন্ড্রাস্ট্রির বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন। ২০০৫ সালে বিদেশের মায়া ত্যাগ করে নাড়ির টানে সিলেট প্রত্যাবর্তন করেন।

সিলেটে কিভাবে ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হলেন সে প্রসঙ্গে তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “২০১০ সালে আমি সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক নির্বাচিত হই। এখানে আমি দুই মেয়াদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলাম। এরপর সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স প্রতিষ্ঠিত হলে এর পরিচালক হিসেবে আমি যোগদান করি। তারপর ২০১৮ সালে আমি সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে উক্ত পদে দুই বছর দায়িত্ব পালন করার পর আমি এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক নির্বাচিত হই। চলতি বছরে (২০২২ সাল) দুই বছর মেয়াদে আমি সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। করোনাভাইরাস মহামারী এবং সিলেটের ভয়াবহ বন্যায় আমাদের চেম্বার অফ কমার্স ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এর প্রভাবে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছি। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করছি।” প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ যে সকল প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ আসুন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি। সেজন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল পর্যন্ত যে রূপরেখা দেখিয়েছেন আমরা সেই রুপরেখা বাস্তবায়নে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি আমাদের প্রবাসী তরুণ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা ক্ষেত্রকে যেন আরও এগিয়ে নিতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।”

অনেক প্রবাসী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের ধাপগুলো কি অতিক্রম করা লাগতে পারে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ প্রথমত আমি বলতে চাই যারা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে চায় তাদের পারিবারিক অবস্থান থেকেই ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন হতে হবে। যেমন একজন রিয়েল এস্টেট বিজনেস করবে, তার জায়গা আছে সেজন্য সে ব্যবসায়ে নেমে যাবে এমনটা করলে হবে না। এমনটি না করার জন্য আমি পরামর্শ দিব। আপনি বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনারা বাংলাদেশে একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে যাবেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের অবশ্যই বিনিয়োগকারী ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে যেতে হবে। বাংলাদেশ সরকার এক্ষেত্রে অনেক সুযোগ-সুবিধা রেখেছেন।

বাংলাদেশের বিনিয়োগ করতে সংশ্লিষ্ট জেলার চেম্বারে সাথে হন তাহলে তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং সঠিক দিকনির্দেশনা পাবেন। “সবথেকে বড় সমস্যা যেটা পড়ে প্রবাসীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেটি হল তাদেরকে অনেকগুলো লাইসেন্স করতে হয়। অনান্যদেশে অনলাইনে লাইসেন্স করা গেলেও বাংলাদেশ এ খাত এখনো পুরোপুরি ডিজিটাল হতে পারেনি। তবে এবিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং কাজ চলছে। আমি মনে করি, যদি প্রবাসীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে, তাহলে আমরা এই জাতিকে সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করতে পারব বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সূচনা থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৩টি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার মেম্বার বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে ইনভেস্টর ভিসা বা বিনিয়োগকারী ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট যোগাযোগ করা যেতে পারে। বিনিয়োগকারী ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বিনিয়োগ নিরাপদ হবে।”

প্রবাসীরা বাংলাদেশের কোন কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারেন। তিনি সে প্রসঙ্গে বলেন, “একজন প্রবাসী বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের কৃষি, পর্যটন, প্লাস্টিক এবং মৎস্য শিল্পসহ যেকোনো উদীয়মান সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারেন। মনে করি যে সকল দক্ষ প্রবাসী ভাইবোনেরা দেশে-বিদেশে কাজ করছে তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আমরা যদি বাংলাদেশে তাদের মেধা এবং দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমাদের বাংলাদেশ অচিরেই উন্নত দেশে পরিণত হবে।”