হাসান আব্বাসী; কন্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে হেসেছেন বিজয়ের হাসি

সময়ের অপচয় করা নিজের অজ্ঞাতসারে স্রষ্টার দান ও মহিমাকে অবহেলা করারই শামিল। কর্মতালিকা প্রণয়ন করে প্রতি মুহূর্তেই বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যেতে পারে অথচ ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে চিন্তায় মগ্ন থেকে অসংখ্য সুযোগ আমরা হাতছাড়া করি। হাসান আব্বাসী সেই কাজটি একটুও করেননি বরং সময়কে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে আজ তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল। উদ্যোক্তা হিসেবে স্মার্ট ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছেন তিনি।

ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে সমাজকে বদলে দেওয়া সম্ভব। সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে কাজের গুরুত্ব বোঝা। নিজের কাজ কেউ যখন একাগ্রতা, নিষ্ঠার সাথে পালন করে তখন তার সফলতা আটকানো অসম্ভব। সে সফল হবেই।

নানামূখী ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণের ফলে মাঝেমধ্যে ব্যর্থও হয়েছেন তাতে তিনি মোটেও বিচলিত ছিলেন না বরং সেই ব্যর্থতাকে সফলতার সিঁড়ি হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন। জন্ম বাংলাদেশে হলেও কৈশোর-তারুণ্যের দিনগুলি কেটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি রাজ্যের প্যাসাইক কাউন্টির বৃহত্তম শহর প্যাটারসনে। জমির আহমেদ ও হেনা আহমেদের সুযোগ্য সন্তান হাসান আব্বাসী প্যাটারসনের জন এফ কেনেডি হাই স্কুলে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি মিশিগানের ওয়েইন স্টেট ইউনিভার্সিটি হতে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিষয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। স্ত্রী জাকিয়া আব্বাসী, দুই মেয়ে হুমায়রা আব্বাসী ও ইকরা আব্বাসীকে নিয়ে বসবাস করছেন মিশিগান অঙ্গরাজ্যে।

শিক্ষাজীবন শেষে যোগ দেন চাকুরিতে। গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ক্রাইসলারে ভলোই কাটছিলো দিন কিন্তু একটি বিষয় খুব নাড়া দেয় হাসান আব্বাসীর মনে আর সেটা হচ্ছে চাকুরী জীবনে স্বাধীনতার অভাব। সেইসাথে রয়েছে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের চিন্তা। সকল প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিলোনা তাঁর বর্তমান অবস্থানই বলে দেয়। অন্তত এক ডজন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা। নিজের শিক্ষাজীবন ও চাকুরি কালীন সময়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন নেক্সট টেক ট্রেনিং। একই সঙ্গে হৃদয়ে গাঁথা মানবসেবার চিন্তা থেকে ফার্মেসি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন। তিনি ওয়ারেন শহরের খুবই পরিচিত আইস্কিপ্ট ফার্মেসির কর্ণধার।

গৎবাঁধা জীবনের সঙ্গে তাল না মিলিয়ে হাসান আব্বাসী হাঁটছেন সৃজনের তরে। ব্যবসা মানে মানুষের সেবা, ব্যবসা মানে জনকল্যাণ, সমাজের সেবা ইতিমধ্যে তিনি তার কাজের মধ্যদিয়ে প্রমাণ দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা, প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি। করোনাকালীন সময়ে সবাই যখন ঘরবন্দি তখন আইস্কিপ্ট ফার্মেসির মাধ্যমে বয়স্ক মানুষের চিকিৎসা বিষয়ক সেবা নিশ্চিত করেছেন হাসান আব্বাসী।

তিনি মনে করেন, “ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে সমাজকে বদলে দেওয়া সম্ভব। সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে কাজের গুরুত্ব বোঝা। নিজের কাজ কেউ যখন একাগ্রতা, নিষ্ঠার সাথে পালন করে তখন তার সফলতা আটকানো অসম্ভব। সে সফল হবেই। মানুষ মাত্রই আমরা সব সময় নতুন কিছু না কিছু করতে চাই। কখনো পারি, কখনো হয়তো পারি না। কিন্তু আমাদের আশা থাকে, অবশ্যই কিছু ভালো হবে; তা যতই খারাপ সময়ই যাক না কেন।

আমরা শত বাধা আর প্রতিকূলতার মাঝেও স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, ভালো কিছু করার প্রত্যাশায় থাকি। সব বাধা পেরিয়ে জয় করার প্রত্যয়ে নতুন দিগন্তের দিকে পা বাড়াই। সেখানে আশা ভঙ্গের ব্যাপার থাকবে। তারপরও সেই পথে পা বাড়ানোর মধ্যেই সকল আনন্দ। আমি খুবই আশাবাদী মানুষ।”

আশাবাদীর দিন কাটে আনন্দে, যেমন কাটছে হাসান আব্বাসীর। সময়কে পুরোদস্তুর সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আত্ম উন্নয়নের পাশাপাশি অসংখ্য লোকের ভাগ্য গড়ে দিচ্ছেন তার পরিচালিত নেক্সট টেক জব ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান দ্বারা। ‘ট্রেনিং আওয়ার কমিউনিটি টু এ বেটার ফিউচার’ শ্লোগান নিয়ে পথচলা প্রতিষ্ঠান নেক্সট টেক জব ট্রেনিং যুব সমাজকে সময়ের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং প্রযুক্তিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের পদ্ধতি শেখা নয় বরং প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ কোর্সগুলো দ্বারা বাস্তবতার সঙ্গে লড়ার কৌশলও রপ্ত করা যায়। এমনকি যারা আগে কখনো কম্পিউটার স্পর্শ করেননি তাদের জন্যও নেক্সট টেক জব ট্রেনিংয়ে বেশকিছু সহজ কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কোর্সগুলোর গ্রহণের মাধ্যমে উপকৃত হয়ে অনেকেই মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কাজ করছেন।

জীবনে সাফল্যের জন্য কী প্রয়োজন এমন প্রশ্নের জবাবে হাসান আব্বাসী বলেন, আমি মনে করি, জীবনে সাফল্যের জন্য সততা, পরিশ্রম আর লক্ষ্য- এই তিনটি থাকলে মানুষ ঠিকই সফল হবে।

হ্যাঁ, এই তিনের সমন্বয়ে হাসান আব্বাসীও সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন। এ যাত্রাপথে তাঁকে অনেকেই উৎসাহ যুগিয়েছেন তবে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তাঁর পিতার নিকট হতে।

নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনেক আশাবাদী হাসান আব্বাসী। মিশিগানের মূলস্রোতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে চান তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠানকে শীর্ষ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।

ব্যবসাক্ষেত্রে যখন কেউ কথা দিয়ে কথা রাখতে না পারে এই বিষয়টি পীড়া দেয় হাসান আব্বাসীকে। আবার মানুষের উপকারে যখন নিজেকে বিলিয়ে দেন এবং উপকারভোগী মানুষ যখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তখন ভালোলাগায় ভরে ওঠে হাসান আব্বাসীর মন। নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন নিত্যদিন।

নতুন মানুষ, নতুন সম্পর্ক এবং নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ জয়ের লক্ষ্যে পরিশ্রম, প্রত্যয় ও স্বকীয় পরিকল্পনা দিয়ে সাবলীলভাবে পথ হাঁটছেন হাসান আব্বাসী। জয়ের মন্ত্র শেখাই আছে তাঁর এখন সেই মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে চান আশ-পাশের সবাইকে।