পথ চলতে চলতে বহুদূর এগিয়ে এসেছেন মোঃ আব্দুল মুহিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে নিয়েছেন জীবনের ভিত। নানামুখী কাজের মধ্যদিয়ে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন কমিউনিটির সেবায়। নিজেকে কর্মমুখরতায় জড়িয়ে রাখতে পছন্দ করেন। একদা বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে বসে যে স্বপ্ন তিনি দেখতেন এখন আমেরিকার মিশিগান শহরে তারই বাস্তবায়ন করে চলেছেন বেশ উদ্যোমের সাথে। স্বপ্ন তো একটাই মানুষের পাশে থাকা, যেকোনো সঙ্কটে উত্তরণের পথ তৈরি করে দেওয়া। পিতা মোঃ আব্দুর রকিব ও মাতা জেসমিন পারভীনের আদরের সন্তান মোঃ আব্দুল মুহিত বর্তমানে আমেরিকার মিশিগান রাজ্যে মা-বাবা সহ স্ত্রী তাসনীম আক্তার চৌধুরী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন।
মোঃ আব্দুল মুহিতের জন্ম ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলায়। ২০১০ সালে ইংরেজি সাহিত্যে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করে উচ্চ শিক্ষার্থে পাড়ি জমান বিলেতে। ইংল্যান্ডের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে সাফল্যের সাথে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। অতঃপর ২০১৬ সালে চলে আসেন আমেরিকায়। কর্মজীবন শুরু বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়েই। একটি কম্পিউটার এন্ড ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ স্পোকেন সেন্টারে শিক্ষকতা দিয়েই শুরু হয় কর্মজীবন।
বর্তমানে তিনি ডেট্রয়েট সিটির ডেট্রয়েট ইকোনমিক গ্রোউথ কর্পোরেশনে ডিস্ট্রিক বিজনেস লিয়াইসন প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।
ডেট্রয়েট ইকোনমিক গ্রোউথ কর্পোরেশন ডেট্টয়েট সিটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করছে। অভিবাসীদের সার্বিক উন্নয়ন, স্থানীয় ব্যবসা এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান সফলতার সঙ্গে কাজ করে থাকে। এছাড়াও ডেট্রয়েট মেয়র অফিস, সিটি কাউন্সিল এবং ডেট্রয়েটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে এমন প্রতিটি সংস্থা এবং উদ্যোগের সাথে নিবিড় অংশীদারি হিসেবে কাজ করছে ডেট্রয়েট ইকোনমিক গ্রোউথ কর্পোরেশন।
করনাকালীন সময়ে ছোট ব্যবসায় বেশ ধস নামে, অনেকেই গুটিয়ে নেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেখানেই সক্রিয় ভূমিকা রাখেন আব্দুল মুহিত।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন খাত হতে অনুদান এবং সহজশর্তে ঋন দেওয়ার মাধ্যমে আবারও সচল করেন। পিপিই ডিস্টিবিউশন সহ সঙ্কটকালীন সময়ে নানা ধরণের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়িকে তাদের ব্যবসা ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহযোগিতা করেন।
এছাড়াও প্রণোদনার মাধ্যমে ব্যবসা ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তায় কাজ করছেন। নতুন ব্যবসায় লাইসেন্স সহ যাবতীয় রকমের পারমিট ও ব্যবসায়িক পরিদর্শন সহায়তা এবং পুরাতনদের বিভিন্ন খাত হতে আর্থিক অনুদান ও ঋন প্রদানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার ক্ষেত্রে আব্দুল মুহিত তাঁর কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করছেন।
নতুন প্রজন্মের প্রতি পরামর্শ দিতে গিয়ে আব্দুল মুহিত বলেন, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধার সময়ে খুব সহজে অনেক কিছু জানা যায় তাই এই প্রজন্মের তরুণরা অনেক স্মার্ট। তাদেরকে নেটওয়ার্কিং খুব শক্ত করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিক্ষা জীবন আর কর্মজীবন এক হয়না। এক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন একান্ত প্রয়োজন। নেটওয়ার্কিং কর্মক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে থাকে। মানুষের নিকটবর্তী হওয়ার সু্যোগ তৈরি করে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এডুকেশন লাইফ আর প্রফেশনাল লাইফ এক হয়না। এক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন একান্ত প্রয়োজন। নেটওয়ার্কিং কর্মক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে থাকে। মানুষের নিকটবর্তী হওয়ার সু্যোগ তৈরি করে।
আব্দুল মুহিত এগিয়ে চলার পথে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন পিতা-মাতার। ইংরেজি ভাষার প্রতি তার বরাবরই আগ্রহ ছিল। এখনো মনে আছে তার পিতার এনে দেয়া “অ্যাডভান্সড লার্নার্স ফানশ্যনাল ইংলিশ” বইটির কথা যা পেয়ে তার আনন্দের সীমা ছিলনা। সেই থেকে আব্দুল মুহিত তার পিতার উৎসাহে ইংরেজি ভাষার প্রতি আরও বেশী মনযোগী হয়ে উঠেন এবং শিক্ষাজীবনে ইংরেজি সাহিত্যকেই বেছে নেন এবং সফলতার সাথে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেন। স্ত্রী তাসনীম আক্তার চৌধুরীর সহচার্য সকল ভয়কে জয় করতে সহায়তা করছে নিত্যদিন।
বাংলাদেশি কমিউনিটির সেবায় নিবেদিতপ্রাণ আব্দুল মুহিত মনে করেন, কমিউনিটির মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে অভিজ্ঞতা বিনিময় প্রোগ্রাম খুবই জরুরি। হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে সমাজে সবার সঙ্গে শান্তিতে মিলেমিশে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়।
নিজের কর্মযজ্ঞে চ্যালেঞ্জ কতটুকু জানতে চাইলে আব্দুল মুহিত জানান, প্রতিটি কাজই চ্যালেঞ্জের। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। আমাদের কমিউনিটির মানুষগুলোর মধ্যে নানা ধরণের ভয়ভীতি সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে যারা এখনও আমেরিকার পরিপূর্ণ নাগরিকত্ব পাননি তাদের মধ্যে নানা রকমের আতঙ্ক কাজ করে কোনো সেবা নিতে গেলে। এগুলো পরিহার করতে আমাদের আরও সক্রিয় ভুমিকা রাখা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে আমার অবস্থান থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি মানুষ যেনো তার ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারে এটাই আমাদের চাওয়া।
নিজের কর্মক্ষেত্র বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আব্দুল মুহিত পছন্দ করেছেন কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানকে। কর্মের দরজা অনেক দিকেই খোলা ছিলো কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছেন মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রতিষ্ঠানকে। মিশিগানে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন গ্লোবাল ডেট্রয়েট নামে এক কমিউনিটি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক সংস্থার সাথে যারা বাংলাটাউনে আব্দুল মুহিতের হাত ধরে তাদের কাজ শুরু করে।
বর্তমানে ডেট্রয়েট ইকোনমিক গ্রোউথ কর্পোরেশনে কাজের মধ্যদিয়ে জন্মভূমির মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নে সদা সর্বদা পাশে থাকতে পারছেন। নিজের সম্প্রদায়ের কল্যাণে সরাসরি অবদান রাখতে পারায় গৌরব অনুভব করেন। চাইলেই কেউ নিজের পছন্দের কর্মক্ষেত্র খুঁজে পায়না এক্ষেত্রে আব্দুল মুহিত বেশ সৌভাগ্যবান।
মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগটি হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে প্রথমে গ্লোবাল ডেট্রয়েট এবং বর্তমানে ডেট্রয়েট ইকোনমিক গ্রোউথ কর্পোরেশন। পরম প্রশান্তি নিয়ে নিজের সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন জীবনের ভিত গড়ে নেওয়া আব্দুল মুহিত।
আরও পড়ুনঃ
মন্তব্য করুন