মানুষ যদি হয় তার স্বপ্নের চেয়ে বড়। তাকে কি আটকানো যায় কোন মন্তব্যের পরাশক্তি দিয়ে? আত্মবিশ্বাস আর বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে পৌঁছানো যায় এক অনন্য উচ্চতায়। তেমনি একজন মানুষ তিনি হলেন তায়েফুর রহমান। জন্ম তার চায়ের পাতায় ঘেরা মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। শৈশবের দুরন্তবেলা কেটেছে সবুজে আবৃত্ত নিজ গ্রামেই। দুষ্টুমি আর সারাদিন ছোটাছুটি করে দৌড়ে বেড়ানোর এক অন্যতম মুহূর্ত ছিল তার। বাড়ির পাশে সবুজে ঘেরা পাহাড় এখনো দোলা দিয়ে যায় তার মন।
বিবাহিত জীবনে তায়েফুর রহমান দুই কন্যা সন্তানের জনক। বাবা লুৎফুর রহমান পেশায় ছিলেন শিক্ষক। তিনি জীবনে বাবাকে খুব ভালোবাসতেন। পড়াশুনা চলাকালীন সময়ে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন এবি ব্যাংক লিমিটেডে। শিক্ষা জীবনে তায়েফুর মদন মোহন থেকে ম্যানেজমেন্টে মার্স্টাস শেষ করেন। পরে ২০১০ সাল পর্যন্ত সিনিয়র অফিসার হিসেবে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন।
২০১০ সালে তিনি ভাগ্যের সন্ধানে আমেরিকায় পাড়ি জমান। সেখানে নতুন করে শুরু করেন জীবন। আবার নতুন ভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন, নতুন চাকরি। খুব ধৈর্য্য ধরে লেগেও ছিলেন বলে ভাগ্যও ধরা দিয়েছিল। ২০১৫ সালে আমেরিকায় প্যানাসনিক অটোমোটিভের সিস্টেম ভ্যালিডেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ২০২০ সালে ফোর্ড মোটর কোম্পানিতে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
জীবন চলার পথে বাঁধা যদি আসে, থাকবেনা হয়ত কেউ তোমার পাশে কি করবে তুমি তখন? অন্যকে দোষারোপ করে ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে বাঁধা মেনে নেবে? জীবন চলার পথে অনেক বাধাই আসবে এ সকল বাধাকে বাধা মনে করলে জীবন থেমে যাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখে চলতে হবে দুর্বার গতিতে। সফল হওয়া সহজ নয়। এটা নারী কিংবা পুরুষ যেকোন মানুষের জন্যই কঠিন কাজ। জীবনের যে কোন ক্ষেত্রেই সফল হতে গেলে নিজেকে নিজের যত্ন নিতে শিখতে হবে। যদি নিজেকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব না দেওয়া যায়, তাহলে জীবনের ভারসাম্য খুঁজে পাবেন না। তাই তায়েফুর জীবনের এই পযর্ন্ত আসতে যত বাধা এসেছে সকল বাধাই নিজের আত্ববিশ্বাস আর মেধার জোরে সুস্থ মাথায় সমাধান করেছেন তিনি। নিজের প্রতি বিশ্বাসই তাকে এই পযর্ন্ত আসতে সাহায্য করেছে।
নিজের সততা নিয়ে কাজ করলে একদিন সফলতাও আসে পুরস্কারও আসে। তেমনই তায়েফুর নিজের কর্মদক্ষতার জন্য পেয়েছেন সম্মাননা যা তায়েফুর রহমানকে বিশেষ ভাবে উৎসাহ যুগিয়েছে। অনুপ্রেরণা ছাড়া জীবনে সফল হওয়া বড় কঠিন। তাই সফল হতে গেলে জীবনে অনুপ্ররণা খুব প্রয়োজন। আর তায়েফুরের জীবনে এই পর্যন্ত আসতে পর্দার আড়াল থেকে যে ব্যক্তি তায়েফুর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তারা হলেন হলেন তার মা এবং স্ত্রী।
জীবন চলার পথে মানুষের একটি ভালোবাসার জায়গা থাকে। আর তায়েফুরের ভালোবাসার জায়গা ক্রিকেট। ফুলটাইম কাজ এবং পরিবারকে সময় দেয়ার পাশাপাশি ক্রিকেট নিয়ে তায়েফুরের চিন্তার জগত বিশাল। খেলা প্রেমী তায়েফুর খেলাকে ভালোবেসে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সাথে নিজেকে নিয়েছেন জড়িয়ে। দীর্ঘ আট বছর ধরে খেলাধুলার বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করে আসছেন তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশি কমিউনিটির যারা ক্রিকেট খেলে থাকেন তাদের জন্যও বাংলাদেশ ক্রিকেট এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। যেকোনো আয়োজন দলগতভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সঠিকভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করে বলেই তার বিশ্বাস।
ক্রিকেট তার খুব প্রিয় একটি খেলা। যেটা তিনি দেখেও মজা পান, খেলেও মজা পান, এই খেলার আয়োজন করেও আনন্দ পান। বাংলাদেশের টাইগাররা যখন খুব ভালো করে তখন তায়েফুরকে খুব আনন্দিত করে। তিনি চান টাইগাররা গর্জে উঠুক। টাইগাররা খুব ভালো খেললে ক্রিকেটের প্রতি সবার ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তার বিশ্বাস।
ক্রিকেট নিয়ে তায়েফুরের চিন্তার দুনিয়া সুবিশাল। বাংলাদেশ ক্রিকেট এসোসিয়েশন অব মিশিগান এর মাধ্যমে ৬ বছর ধরে বাংলাদেশি আমেরিকানদের জন্য তারা টুর্নামেন্টের আয়োজন করে যাচ্ছেন। বিগত দু’বছর যাবত বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা মিশিগানের এই টুর্নামেন্ট অংশগ্রহন করেছিলেন যা মিশিগানের লোকাল খেলোয়ারদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।
তায়েফুর মনে করেন যে এখানে কোয়ালিটি সম্পন্ন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা উচিত। যেখানে বিভিন্ন দেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা খেলবে এবং স্থানীয় নবীন খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হবে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা হিসেবে আরো বৃহৎ পরিসরে ক্রিকেট লীগ, টুর্নামেন্টের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং ক্রিকেটকে কিভাবে জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় করা যায় সেদিকে নজর দিবেন। যেখানে নিয়মিতভাবে এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় দলের খেলোড়রা খেলবে। খেলোয়াড়দের এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করাতে চান যেন প্রবীণ খেলোয়াড়দের খেলা দেখে নতুন খেলোয়াড়রা উৎসাহিত হয়। এ বছরই মিশিগান ক্রিকেট এসোসিয়েশনের নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
২০২০ সালে তায়েফুর তার বাবাকে হারিয়ে হয়ে যান নিস্তব্ধ। আজও তায়েফুর তার বাবার স্মৃতি মনে করেন। তিনি ছিলেন আস্থা, ভরসা আর পরম নির্ভরতার নাম। তিনি মনে করেন বাবা এমন এক বৃক্ষ, যে বৃক্ষের ছায়ায় আস্থার খোরাকে বেঁচে থাকার শক্তি পায় সন্তান। প্রতিটি সন্তানের কাছেই বাবা মানে শক্তি আর সাহস। বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। বাবাকে ভীষণ ভালোবসেন তিনি।
সন্তানের জন্ম যেকোনো পরিবারে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়। জীবনে সবচেয়ে আনন্দ তায়েফুরের দুটি সন্তান। যাদের জন্য নিজেকে পিতার স্থানে আসন দিয়েছিলেন তিনি যেন নিজের এক পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ক্রিকেটের মাধ্যমে যে ভালোবাসা পেয়েছেন তায়েফুর রহমান সেটাও জীবনে অনেক আনন্দের।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তায়েফুর রহমানের পরামর্শ, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে সব জানতে হবে, এই ধারণা ঠিক নয়। এগিয়ে গেলে নিজে নিজেই সব জানতে পারবে। আর পরচর্চা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে তেমনি নিজের সম্পর্কে কারো নেতিবাচক মন্তব্য আমলে নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। দুটোই সামনে এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
বর্তমানে তিনি ফোর্ড মোটর কোম্পানির সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কমরর্ত আছেন। তায়েফুরের এ পেশায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিজের মেধা শক্তি আর সততাকে কাজে লাগিয়ে অন্য দশজন থেকে নিজেকে সেরা স্থানে পৌঁছানো। সফলতার মুখ দেখতে সততার সাথে সংগ্রাম করার অব্যশকতা আগে থেকেই করতে হবে কেননা সংগ্রামী মানুষরাই সফলতার মুখ দেখতে পায়।
মন্তব্য করুন