বাংলা সংবাদ
৬ জুলাই ২০২৩, ১:৫৩ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

এমন জন আর আসবেন না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মোস্তফা আল্লামা

মেয়েরা কখনো ওদের আত্মীয় স্বজনদের বাসায় নয়তো চেনা জানা কারো বাসায় বেড়াতে যায়।এসে বলে বাবা যে বাসায় গিয়েছিলাম উনারা দাদাকে চিনেন এমনকি তোমাকেও। উনারা জানতে চাইলেন দেশে বাড়ি কোথায় ? সুনামগঞ্জ বলে দাদার নাম বলতেই জানালেন সবাইকে চিনেন। শুনি আর ভাবি বয়স ষাটের উপর হলেও এখনো পিতার পরিচয়েই নিজে যেমন চলছি। আগামি প্রজন্মকেও শিকড়ের পরিচয় দিতে গিয়ে বাবার কথাই বলতে হবে।

গতকাল মিশিগান রাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে নিরবে চলে গেলেন একজন সর্ব শ্রেষ্ঠ মুক্তিযাদ্ধা মোস্তফা আল্লামা। তিনিও আমাকে চিনেছিলেন বাবার পরিচয়ে।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ধনী ছিলেন। পিতার ছিলো আবাসিক ব্যবসা। মতিঝিলের ব্যস্ত এলাকা ফকিরাপুলে সিলেট বোর্ডিংসহ ছিলো আরো অনেক ব্যবসা। সেসবে মন ছিলো না। বঙ্গবন্ধুর আদর আর স্নেহ বিক্রি করে টাকা বাগানোর ধান্ধায় ছিলেন না। সামরিক ট্রাকের ড্রাইভার হয়ে রিলিফের গুড়া দুধ বিক্রি করে আজ অনেকে দেশের সেরা ধনী।

নিজের বিমান ব্যবহার করে সরকার কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বিদেশ চলে যায়। ব্যাঙ্ক পাড়ায় বন্দুক বাজি করে। সবই ওদের দখলে। সাংসদ পদ ব্যবহার করে সব অপরাধ ঢেকে রাখতে এখানে ওখানে ধর্না দেয়। আর এসব রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের জন্য দেশকে আরো বেশি করে ব্যবহার করে দেবার সুবিধা দিয়ে নিজে হয়েছিলেন আমেরিকা প্রবাসী।

দেশে যখন ছিলেন তালিকা ধরে অনেক ভালো ভালো বিষয়ের সূচনা করেছেন। ‘আল্লামা গোল্ড কাপ’ একসময় সারা দেশে আলোড়ন তুলেছিলো।কোন পদ দখলের প্রতিযোগিতায় ছিলেন না।

 

সমাবেশস্থলে বঙ্গবন্ধুর সাথে মোস্তফা আল্লামা

বাটপারি করে পয়সা কামানোর জন্য জেনারেলের মদের টেবিলের সঙ্গী হন নাই। জনগনের মধ্যে ছিলেন। কর্নেল ওসমানী সাহেবের ব্যাক্তিগত সহকারী হয়ে শিখেছিলেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। কাউকে তোষামোদ করেননি। ভয় ও পেতেন না। মা কিম্বা খালা ডেকে সাংসদ পদ বাগানোর কোন কৌশলে ছিলেন না।

শামীম কিম্বা শাহেদ সহ অধুনা বিশ্ব বাটপার আসকারীর ন্যায় ছবি বিক্রি করে কিছু হাসিলের চেষ্টাতে ছিলেন না। অথচ দেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিরাট অবদান ছিলো। তা অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়ে ধমক দিয়ে পদকও আদায় করেন নি। মিলেমিশে ছিলেন মিশিগানের অভিবাসীদের হাসি কান্না আর ভালবাসার প্রতিদিনের গল্পে।

২০১৯ এর গ্রীষ্মে মিশিগান বেড়াতে গিয়ে দেখা হলো চৌকস এক সাংবাদিক ভাইর সঙ্গে। যাকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের উত্তর আমেরিকা প্রথম আলোর সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী।বর্তমানে মিশিগান রাজ্যের ওয়ারেনে বাসকারী সাংবাদিক ইকবাল ফেরদৌস দারুন একজন করিৎকর্মা লোক।

পুরো শহরের সর্বত্র যার ভীষন যোগাযোগ। ডেট্রয়েট শহরে পৌঁছামাত্র একরকম ছিনতাই হয়ে গেলাম ইকবাল ভাইর হাতে। নিয়ে গেলেন শহরের উপকন্ঠে একটি খেলার মাঠে। সীমিত ওভারের জমজমাট ক্রিকেট আয়োজনে উপমহাদেশ ছাড়িয়ে শ্রীলঙ্কা, কেনিয়াসহ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সৌখিন ক্রিকেটাররাও আছেন। তবে নেতৃত্বে বাংলাদেশী অভিবাসী ক্রিকেট পাগল যুবকরা। মাঠের অপর পাশে সবুজে ঢাকা প্রাকৃতিক পরিবেশে মিশিগান ঢাকা বিভাগ কল্যাণ সমিতির বাৎসরিক বনভোজন।

পরিচয় পর্ব শেষে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষ হতে না হতেই ছোট খাট আকারের সাদা ধবধবে মুখ ভর্তি দাড়ি এবং মাথায় সুন্দর টুপি পরিহিত এক ভদ্রলোক এসে জানতে চাইলেন। ভাইজান আপনার দৌলতখানা (বাড়ি) কোথায়? একটু মজা করে জানতে চাইলাম। আপনি বলেন দেখি, দেশে কোন জেলায় আমার বাড়ি? উত্তরে বললেন, শুদ্ধ ভাষায় দখল থাকলেও বাড়ি সিলেট বুঝা যায় তবে আন্দাজ করছি সুনামগঞ্জ কিম্বা হবিগঞ্জ হবে। হেসে বললাম, সুনামগঞ্জ ! তারপর এক মিনিট যেতে না যেতে আমাকে চমকে দিয়ে একরাশ বিস্ময়ের বেড়াজালে ফেলে বলে উঠলেন, তুমি কি বারী ভাইর ছেলে ? না আবেদীন রাজার ভাই? আমি নির্বাক হয়ে থাকা অবস্থায় বলে চলছেন, সুনামগঞ্জ এরকম লম্বা ও বিশাল দেহী পরিবার খুবই স্বল্প। তা তুমি না জানলেও আমি জানি। তাছাড়া তোমার চেহারায় উজ্জল ফর্সা এবং দীর্ঘদেহী খুব পরিচিত ও বড় ভাই বারী ভাইর অনেক সাদৃশ্য আছে। আবেগে আর ভালবাসায় হতবাক হয়ে জড়িয়ে ধরলাম সেই মহান মানুষটিকে।

যিনি চলে গেলেন তার অর্জিত সব অহঙ্কার ও জনতার ভালবাসা নিয়ে কোন রূপ রাজনৈতিক সওদা না করেই। যা আজকাল করতে আমরা সদা ব্যস্ত হয়ে ঘুর ঘুর করছি ক্ষমতার আশে পাশে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রিজার্ভ নামল ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মাজহাব ও এর গুরুত্ব

রিয়েলেটর হাসান আলী কঠোর পরিশ্রমে সময়কে করেছেন জয়

রুহুল হুদা মুবিন: নিভে যাওয়া এক উজ্জ্বল প্রদীপ শিখা

লেনদেনের সততায় উদ্ভাসিত রুহুল হুদা মুবিনের নীতি ও আদর্শ

ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনা বয়স্কদের সেবা খাতে এবার কতটা প্রভাব ফেলবে

হ্যামট্রামিক হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়ামে চলছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতি প্রদর্শনী

শ্রদ্ধাঞ্জলি: স্মৃতিতে চির অমলিন রুহুল হুদা মুবিন

ও’হেয়ার পার্ক: ‘ভূমির অপচয়’ থেকে মহল্লার রত্নে পরিণত হওয়া

ডেট্রয়েটবাসীগণ একে অপরকে সাহায্য করছে: সম্পর্কের শক্ত ভিত তৈরি করছে কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে

১০

মিশিগানে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় স্বাস্থ্য সেবা খাতে আশার আলো; জনপ্রিয় হচ্ছে টেলিহেলথ

১১

মুনার ন্যাশনাল ও জোনাল কমিটি গঠন: ২০২৫-২৬ সেশনে নতুন নেতৃত্বের অভিষেক

১২

২০২৫ সালে আইআরএস-এর নতুন নিয়ম: জানুয়ারি ২৭ থেকে শুরু হচ্ছে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইলিং

১৩

ট্রাম্প-মোদির বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা

১৪

যুদ্ধ বন্ধ না করলে পুতিনকে আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবার ট্রাম্পের

১৫

নিশ্চিত থাকেন আমরা আপনাকে সমর্থন করব : ড. ইউনূসকে জার্মান চ্যান্সেলর

১৬

ভেঙে পড়ছে এবার বিশ্ব ব্যবস্থা!

১৭

গাজা থেকে আরও চার জিম্মিকে মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনিরা

১৮

জন্মস্থান সূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারবেন ট্রাম্প?

১৯

জনগণ রায় দেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অধিকার আছে কিনা: জামায়াত আমির

২০