প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি-আমেরিকান ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রদর্শনী হ্যামট্রামিক হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়ামে চলছে। ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী আগামী ১১ মে ২০২৫ পর্যন্ত চলবে। প্রদর্শনীর সাথে সংশ্লিষ্ট ফাতেমা হক ও রুমানা রহমান জানান, ৯৫২৫ জোসেফ ক্যাম্পু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত হ্যামট্রামিক হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীটি দর্শকদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিদর্শনযোগ্য। প্রদর্শনীর সময়: শুক্রবার ১১টা থেকে ৩টা এবং শনিবার ১১টা থেকে ৪টা।
মেট্রো-ডেট্রয়েটের বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির জন্য এই প্রদর্শনী একটি বিশেষ উদ্যোগ, যা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ঐতিহ্য তুলে ধরবে। প্রদর্শনীর মাধ্যমে, দর্শকরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক বৈচিত্র্য জানতে পারবেন। এছাড়া, একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিজিটাল বোর্ডে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। প্রদর্শনীতে মিশিগানের বাংলাদেশি কমিউনিটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবদান, টেক্সটাইল, লোকশিল্প (যেমন রিকশা পেইন্টিং), এবং মাটির ধাতুর, বাঁশ ও বেতের তৈরি কারুশিল্পের একটি বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ প্রদর্শিত হবে। স্থানীয় শিল্পী এবং শিক্ষার্থীদের শিল্পকর্মও প্রদর্শিত হবে।
প্রদর্শনী কমিটির সদস্য এবং নৃবিজ্ঞানী রুমানা রহমান বলেন, “এই প্রদর্শনী শুধু একটি ঐতিহাসিক দলিল নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত প্রমাণ। এটি প্রজন্মের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করবে এবং অভিবাসীদের অভিজ্ঞতা ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি উদযাপন করবে যা তারা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছে। এই প্রদর্শনীটি হ্যামট্রামিক হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়ামের সহায়তায় মেট্রো-ডেট্রয়েটের বাংলাদেশি-আমেরিকানদের দশ মাসের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ। মিউজিয়ামটি হ্যামট্রামিকের বৈচিত্র্যময় ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য সুপরিচিত এবং এই প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশিদের মিশিগানে বসবাসের ইতিহাস শতাব্দীর প্রথম দিকে শুরু হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, দক্ষ শ্রমিক, রাজনৈতিক শরণার্থী এবং অভিবাসন লটারি বিজয়ী বাংলাদেশিরা মিশিগানে স্থায়ী হতে শুরু করেন। মেট্রো-ডেট্রয়েট অঞ্চলের সাশ্রয়ী বাসস্থান এবং সম্প্রদায়ের সমর্থন তাদের এই অঞ্চলে বসবাসের জন্য উৎসাহিত করেছে। হ্যামট্রামিক হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়ামের কর্তৃপক্ষ সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ঐতিহাসিক এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে। বাংলাদেশিদের আমেরিকান নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশের প্রতি টান তৈরিতে এই প্রদর্শনী ভূমিকা রাখবে, এমনটাই মনে করছেন প্রদর্শনীতে আসা বাংলাদেশি দর্শকরা।
হ্যামট্রামিক শহরের বাসিন্দা সাব্বির আহমদ প্রদর্শনীটি পরিদর্শন করে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, “নিজেদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ হচ্ছি এবং আমি নিশ্চিত এখানে যারা আসবেন তারা অবশ্যই বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। ওয়ারেন থেকে আসা এক বাংলাদেশি তরুণ সাইদুর রহমান সাঈদ বলেন, “শিকড়ের খোঁজ সকলেই নেয়, বিদেশে বসবাস করলেও অনেকের মধ্যে লক্ষ্য করেছি নিজ জন্মভূমির প্রতি গভীর মায়া ও টান। তাই এখানে, সকল কিছুর মাঝেই নিজের দেশকে খুঁজে বেড়ান যারা, তারা এই প্রদর্শনীতে এক অন্যরকম প্রশান্তি পাবেন। কারণ এখানে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য গভীর মমতায় তুলে ধরা হয়েছে। আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমি ধন্যবাদ জানাই এবং প্রত্যাশা করি সকল বাংলাদেশি এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন।
মন্তব্য করুন