আমেরিকার ইতিহাসের সঙ্গে ইসলাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশটির শুরু থেকেই ইসলাম ও মুসলমানদের অস্তিত্ব বিরাজমান ছিল। তবে এখানকার মুসলমানদের বেশির ভাগ মুসলিম নাগরিক হিসেবেই নয়, দাস হিসেবে পরিচিত লাভ করে। ঐতিহাসিক এবং গবেষকদের মতে, এই সংখ্যা ১০ থেকে ১২ শতাংশের মতো হবে। ‘আফ্রিকান মুসলিম স্নেইভস অ্যান্ড ইসলাম ইন এন্টিবেলাম আমেরিকা’-এর সম্পাদক ও পণ্ডিত রিকার্ড ব্রেন্ট টার্নার দাস মুসলমানদের সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে তিন লাখ বলে উল্লেখ করেন। তবে পরবর্তীতে সময়ে এখানে মুসলমানদের সংখ্যা কমতে থাকে। এখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকলেও ধর্মান্তরিত দাসরা আমেরিকার নাগরিকদের মতো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পর এবং দেশটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সময়কালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে হাজার হাজার মুসলমান আমেরিকায় প্রবেশ করে। ওদিকে ইউরোপ ও আমেরিকায় শিল্প বিপ্লব শুরু হলে দেশটিতে আবারও বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়। এসকল মুসলমান দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অসামান্য অবদান রাখে। এ সময় সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের অনেক খ্রিস্টান এবং মুসলমান আমেরিকায় নিজেদের স্বীয় বাসস্থান তৈরি করার সুযোগ পায়। তখন ইসলাম আবার দেশটিতে নতুনভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। তবে আমেরিকার সমাজে মুসলমানদের জীবন যাপন করা ততটা সহজ ছিল না। তারা নানা ধরনের বৈষম্য এবং সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে। এই প্রক্রিয়া ধরে মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য তৎপর হয়। ১৯২০ সালের মধ্যে আরবপ্রবাসী মুসলমানরা আমেরিকার ডেট্রয়েট, পিটাসবার্গ, মিশিগান এবং ইন্ডিয়ানা শহরে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ সমাজ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। এ সময় মুসলমানরা অনেক মসজিদ নির্মাণ করে নামাজের ব্যবস্থা করে। মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে বিশ শতকের প্রায় দুই যুগ ধরে এসব কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ ইসলামের সুশীতল পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। ইসলামের মানবাধিকার ও উদারতার নীতির কাছে কালো মানুষগুলো মুক্তি ও স্বস্তির জীবন লাভ করে। অসংখ্য অগণিত মসজিদ, মাদরাসা এবং ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
মুসলমানদের এই অগ্রযাত্রা মূল আমেরিকান নীতিনির্ধারক ও সমাজবিদদের নজরে পড়লে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাই ইসলামের গতি রোধ করার জন্য ১৯২৪ সালে ইউএস কংগ্রেস ‘এশিয়ান এক্সক্লুশন অ্যাক্ট ১৯২৪’ পাশ করে। এই আইনের ফলে এশিয়ার দেশগুলোসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে নতুনভাবে মুসলমানদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। এতে আমেরিকায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠী বৃদ্ধি এবং ইসলামের অগ্রযাত্রা রোধ করার প্রাথমিক প্রচেষ্টা সফল হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আমেরিকার লোকেরা সম্প্রদায় ও ধর্মীয় বিরোধে জড়িয়ে পড়লে এরপর নতুনভাবে একটি জাতীয় পরিচয়ের উদ্ভব হয়। এ সময় আফ্রিকান আমেরিকান বিশেষ করে আফ্রিকান আমেরিকান মুসলমানরা সমতা এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে ‘সিভিল রাইট মুভমেন্টে’ ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে থাকে, যা আমেরিকার অনেক মানুষকে ইসলামে দীক্ষিত হতে আকৃষ্ট করে। ফলে ইসলামের প্রসার ঘটে।
১৯৬৫ সালে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড নেচারালাইজেশন অ্যাক্ট’ পাশ হলে ইসলামের প্রসারে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। এই নতুন আইনের ফলে আমেরিকায় নতুনভাবে প্রায় এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ মুসলমান আগমন করে। এর ফলে ইসলাম আরো সম্প্রসারিত হয় এবং বিশ শতকের মধ্যে আমেরিকায় ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে। এরপর থেকে আমেরিকায় ইসলাম সবচেয়ে বিকাশমান একটি ধর্ম হিসেবে পরিগণিত হয়। বর্তমানে আমেরিকার এমন কোনো অঙ্গরাজ্য নেই, যেখানে মুসলমানদের বসতি গড়ে উঠেনি। এরই ধারাবাহিকতায় মিশিগান অঙ্গরাজ্যে গড়ে ওঠে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা এবং ইসলামিক সেন্টার। এমন একটি সেন্টার হচ্ছে ‘মুসলিম ইউনিটি সেন্টার’। এই সেন্টার পুরো মিশিগানে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে নিরলসভাবে। এই সেন্টার নিয়েই আজকের আয়োজন।
মুসলিম ইউনিটি সেন্টারের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আমেরিকার মিশিগানে বসবাসরত মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস সৃষ্টির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুসলিম ইউনিটি সেন্টার। এটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে—আমেরিকার মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী জীবনধারার বিকাশ, প্রচার-প্রসার এবং তাদের মুসলিম পরিচয়ের উত্থান ঘটানো। এটি সকল ধরনের জাতীয়তামুক্ত সম্প্রদায় গঠনে রাসুল (সা.)-এর আদর্শের আলোকে কাজ করে যাচ্ছে। এর সম্পূর্ণ শিক্ষা আল কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে সাজানো হয়েছে। এই সেন্টার 1830 W Square Lake Rd, Bloomfield Hills, MI, United States, Michigan-এ অবস্থিত।
মুসলিম ইউনিটি সেন্টার-এর সেবা
মুসলিম ইউনিটি সেন্টার তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুটি বিষয়ে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো পালনের পাশাপাশি কমিউনিটি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ সেন্টার তার সেবাকে প্রসারিত করেছে। এ কারণে এটি সর্বস্তরের মুসলিমদের কাছে আস্থা-নির্ভরতা এবং বিশ্বাসের জায়গা হয়েছে। বিভিন্ন দ্বীনি অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি এখানে দুটি সেবা প্রদান করা হয়। এগুলো হচ্ছে:
১. পারিবারিক সহায়তা কর্মসূচি
২. মৃতদেহ কাফন কার্যক্রমে সহযোগিতা এবং শোক প্রকাশ
প্রথমত, মুসলিম ইউনিট সেন্টার পারিবারিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় হাজারেরও বেশি পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী ও কাপড় বিতরণ করেছে। এছাড়া গাড়ি কেনার জন্য কিংবা বাসা ভাড়া অথবা বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন বিল প্রদানে সহযোগিতা ছাড়াও সমস্যাগ্রস্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের বিবাহেও সাহায্য করে আসছে। সেন্টারের এমন কার্যক্রম কমিউনিটির মধ্যকার সম্পর্ককে আরো বেশি দৃঢ় করে তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, কোনো মুসলিম মারা গেলে সেন্টার তার দাফন-কাফনের যাবতীয় ব্যবস্থা করে থাকে এবং তার জন্য শোকসভার আয়োজন করে থাকে। এটিও মিশিগানের মুসলমানদের অন্তরকে জয় করে নিয়েছে।
মুসলিম ইউনিটি সেন্টারের শিক্ষাকার্যক্রম
মুসলিম ইউনিটি সেন্টার দুটি পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এগুলো হচ্ছে-
১. মুসলিম ইউনিটি সেন্টার চিলড্রেন একাডেমি। এটাকে মন্টেসরি প্রোগ্রাম বলা হয়ে থাকে। এটি প্রচলিত ধারার বাইরে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ও অভিনব একটি শিক্ষা পদ্ধতি। ইতালির খ্যাতনামা চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ মারিয়া মন্টেসরি প্রায় একশ বছর আগে নিজ নামে ‘মন্টেসরি এডুকেশন’ নামক এই শিক্ষা দর্শন চালু করেন। এই শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি ও যুক্তরাজ্যে প্রায় ছয় শতাধিক মন্টেসরি স্কুল চালু রয়েছে। মুসলিম ইউনিটি সেন্টারও শিশুদেরকে শিক্ষা দিতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এই স্কুলে তিন থেকে সাত বছর বয়সী চল্লিশ জন শিশু একসাথে পড়ালেখা করতে পারে। এই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষককে ‘গাইড’ বলে সম্বোধন করা হয়। এতে ব্যক্তির সৃজনশীলতা ও আগ্রহকে সমান গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এছাড়া আরো কয়েকটি গুরুত্বর্পূণ বিষয় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে :শিশুর ইচ্ছে ও স্বাধীনতার মূল্যায়ন, ব্যক্তিগত শিক্ষণ, আবর্তনের সমন্বয়ে পাঠক্রম, ভিন্ন ভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীর সমন্বয় এবং ত্রি বাৎসরিক চক্র প্রভৃতি। তবে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেই শিশুদের মধ্যে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর শিক্ষা তুলে ধরা হয়।
২. সানডে স্কুল প্রোগ্রাম। এই স্কুলটিতে কেবল রোববার বিশেষ কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। উন্নত বিশ্বের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষাকারিকুলামের আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা সাজায়। এখানে ধর্মীয় জীবনব্যবস্থা বা জীবনপ্রণালি উপেক্ষিত থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। রোববার তাদের সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে ওই দিনে একটি বিশেষ ক্লাস নেওয়া হয়। যা মুসলিম ইউনিটি সেন্টার পরিচালনা করে থাকে। এই প্রোগ্রামের আওতায় ৫ থেকে ১৩ বছরের শিশুরা পড়ালেখা করে থাকে। এই প্রোগ্রামে তাদেরকে কুরআন, ইসলামিক স্টাডিজ, আরাবিক এবং পাঠ্যবই পড়ানো হয়। একটি সুন্দর কার্যক্রমের আলোকে শিশুদের মন-মস্তিষ্ককে ইসলামীকরণ করতে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও মুসলিম ইউনিটি সেন্টারের ভূমিকা
মুসলিম ইউনিটি সেন্টার আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করে থাকে। এ সংলাপের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিটি ধর্মের মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করা। এছাড়া এ সংলাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ইসলামের সুমহান বাণী পৌছে দেওয়ার কাজটি করে আসছে মুসলিম ইউনিটি সেন্টার। এ আন্তঃধর্মীয় সংলাপে বিশ্বের বিভিন্ন স্কলাররা অংশংগ্রহণ করে থাকেন। এ পর্যন্ত মুসলিম ইউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সংলাপের বিষয়বস্তু ছিল-আমেরিকান মুসলিম, মুসলিম নারী, মুসলিম কনট্রিবিউশন টু সিভিলাইজেশন, আমেরিকায় ইসলাম, ইসলামফোবিয়া এবং এর প্রভাব, ইসলামী মূলনীতি, ইসলামী শিল্পতত্ত্বের ইতিহাস, কুরআনের আলোকে মরিয়মের জীবনী এবং ওয়ান ইলেভেনের পরে আমেরিকায় মুসলমানদের অবস্থান। এই আন্তঃধর্মীয় সংলাপগুলো যেমন মুসলমানদের চিন্তাধারাকে শানিত করেছে, তেমনই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
মুসলিম ইউনিটি সেন্টারে দায়িত্বরত ইমাম, ব্রাদার ও সিস্টার
মুসলিম ইউনিটি সেন্টারে দুইজন ইমাম, একজন ব্রাদার ও একজন সিস্টার দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাঁদের কার্যক্রম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো:
১. শায়খ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ: শায়খ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইসলামী শরিয়াহ;র উপরে বিএ ডিগ্রি এবং ইসলামী আইন ও বিচার বিষয়ের উপর এমএ ডিগ্রি লাভ করেছেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রতি মঙ্গলবার সিরাত বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার হাইস্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য হালকার আয়োজন করা হয়। তিনি শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ানোসহ রাতে একটি লেকচার দিয়ে থাকেন। যেখানে মিশিগানের নানাপ্রান্ত নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন।
২. শায়খ ড. আহমদ মাবরুক: শায়খ ড. আহমদ মাবরুক আল অজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং মিশকাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মুসলিম ইউনিটি সেন্টারে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সেন্টার নিয়ন্ত্রিত কুরআন স্কুলে অধ্যাপনা করে থাকেন। এছাড়া নারী-পুরুষের জন্য কুরআন-হাদিসের দারস দিয়ে থাকেন। যেখানে শত শত নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাঁর প্রতিটি লেকচার অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক ও আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।
৩. ব্রাদার ইবরাহিম আব্দুস সবুর: ব্রাদার ইবরাহিম আব্দুস সবুর একটি আইরিশ পরিবারে বড় হয়েছেন। তিনি মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। একটি বেসরকারি স্কুল থেকে আরবি ভাষার ওপর দক্ষতা অর্জন করেন। মিশরে থাকাকালীন তিনি কুরআনের অর্ধেক অংশ মুখস্থ করতে সক্ষম হন। তাজভিদের ওপর তাঁর দক্ষতা রয়েছে এবং তিনি এর বিষয়ে ইজাজাত লাভ করেন। মিশিগান আসার পর তিনি মুসলিম ইউনিটি সেন্টারের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং এ সেন্টারের ইয়্যুথ প্রোগ্রামগুলো পরিচালনা করে থাকেন।
৪. সিস্টার শিরিন কাকারলি: শিরিন কাকারলি ইয়্যুথ সিস্টার্সদের মেন্টর হিসেবে কাজ করেন। তিনি ২০১৮ সালে কিডস ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে তাঁর কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি হুদা স্কুল সামার ক্যাম্প এবং ক্যাম্প আল-হিলালের সাথে সম্পৃক্ত থেকে আট বছর থেকে কাজ করছেন। তিনি মুসলিম ইউনিটি সেন্টারের তরুণীদের প্রোগ্রামগুলো পরিচালনা করে থাকেন। বিশেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বোনদের জন্য চলমান প্রোগ্রামগুলো বিকাশের বিষয়ে উৎসাহী, যুব কমিটি এবং বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে সহযোগিতা করছেন। তাঁর বিশ্বাস-মুসলিম ইউনিটি সেন্টারের সাথে থেকেই তিনি তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবেন। বিশেষ করে সেন্টারের জন্য তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং তরুণীদের জন্য উন্নত চিন্তাধারা সবার কাছেই প্রশংসার যোগ্য।
মুসলিম ইউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠার পর থেকে মিশিগানে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পুরো মিশিগানে এর রয়েছে স্বতন্ত্র অবস্থান। উম্মাহর জন্য এটি একটি বিশাল শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখছে। সেন্টারে রয়েছেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, যারা সেন্টারের পরিচালনায় আন্তরিকতা, নিষ্ঠা এবং যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া রয়েছেন বোর্ড অব ডিরেক্টেরস, কমিটি, স্টাফবৃন্দ। এছাড়া এখানে রয়েছেন অসংখ্য ভলান্টিয়ার। যারা সেন্টারের নিয়মিত কার্যক্রমগুলো পরিচালনায় আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এই সেন্টার উম্মাহর একটি প্রাণকেন্দ্র, যেখান থেকে মিশিগানের মুসলমানদের চিন্তা এবং বিশ্বাসের নবায়ন হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়া’লা এ সেন্টারের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন