বাংলা সংবাদ ডেস্ক
২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৫:১২ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

শ্রদ্ধাঞ্জলি: স্মৃতিতে চির অমলিন রুহুল হুদা মুবিন

আমি যখন ছোট ছিলাম, কম বয়সে কেউ মারা গেলে বড়োদের বলতে শুনতাম, ভালো মানুষরা নাকি বেশিদিন বেঁচে থাকে না? আল্লাহপ্রিয় বান্দাদের এই ভরা পৃথিবী থেকে দ্রুত নিয়ে যান নিজের কাছে। ভুল-ত্রুটিসহ, পরম সমাদরে রেখে দেন তাদের চিরশান্তির বেহেশতে।” আমাদের প্রিয় মুবিন ভাইয়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। আশা করি, এরকমই হবে। কারণ মুবিন ভাই, আমার জানা মতে, একজন ভালো মানুষ ছিলেন। মুবিন ভাইয়ের অনুজ শাহী ভাইয়ের লেখা এক স্মৃতিকথা পড়ে জানলাম, মুবিন ভাই ইমাম সাহেবকে ফজরের নামাযে সব সময় সূরা মোজ্জাম্মিল পড়তে বলতেন। সূরা মোজ্জাম্মিলের শেষাংশে আল্লাহ তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য তাগাদা দিয়েছেন এবং বলেছেন, “(মনে রাখবে) যা কিছু ভালো ও উত্তম কাজ, তোমরা আগে ভাগেই নিজেদের জন্যে আল্লাহর কাছে পাঠিয়ে রাখবে, তাই তোমরা তার কাছে (সংরক্ষিত দেখতে) পাবে। পুরস্কার ও এর বর্ধিত পরিমাণ হিসেবে তা অতি উত্তম।

 

শাহী ভাইয়ের লেখা থেকে জানা গেলো, সূরা মোজ্জাম্মিলের শেষাংশের সাথে মুবিন ভাই তার জীবনের শেষ বছরগুলো অসাধারণভাবে মিলিয়ে নিয়েছিলেন। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে থেকে তিনি কাউকে একরকম না জানিয়ে বাংলাদেশ এবং কাতারের দুইজন হুজুরের কাছে অনলাইনে তালিম নিয়ে পবিত্র কোরআনের শেষ কয়েক পারা মুখস্ত করে ফেলেছিলেন। এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরেও তিনি হুজুরদের একাউন্টে টাকা পাঠাতেন। তাছাড়া তিনি তার জীবনটাকে ইসলামের কাজে নিবেদিত করেছিলেন। মিশিগানের ওয়ারেন সিটিতে বাসার কাছে ভাইদের নিয়ে ‘সেন্টার ফর দাওয়াহ্ এন্ড রিসার্চ, বা সংক্ষেপে সিডিআর’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মসজিদ কেন্দ্রিক এই প্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের কোরআন-হাদিস শেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। মুবিন ভাই সিডিআর মসজিদের সভাপতি ছিলেন। আমার আমেরিকা সফরকালে সিডিআর মসজিদে নামাজ পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। চমৎকার মসজিদ। নামাজের সময় প্রচুর মুসল্লির সমাগম হত। আশা করি, মুবিন ভাইয়ের ভালো কাজগুলো হাশরের মাঠে তার জন্য নাজাতের উসিলা হবে।

 

মুবিন ভাইকে আমি হাইস্কুলের সময় থেকেই চিনতাম। শিশু-কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুড়ি আসর’ সিলেটের কয়েকজন সংগঠক মুবিন ভাইদের দরগাহ মহল্লা বাসার দোতলায় ভাড়া থাকতেন। সেখান থেকে তারা ফুলকুড়ির কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সংগঠনটির সাথে সম্পৃক্ততার সুবাদে তাদের বাসায় মাঝে মাঝে যেতাম। সেই সুবাদে মুবিন ভাইকে চিনতাম। পরে ইংলিশ অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র হিসাবেও তাকে পেলাম। মাঝে মাঝে উনার সাথে ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে আনন্দ পেতাম। মুবিন ভাই সবসময় অত্যন্ত আন্তরিকভাবে হাসিমুখে কথা বলতেন। পরে শাহী ভাইয়ের সাথেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাদের সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্কটাও ছিল মজবুত। তাদের ডাঃ মালেকা বেগমের, আমার আম্মার সুসম্পর্ক ছিল। আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার আগ পর্যন্ত যোগাযোগ ছিলো। পরে আমিও উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলাম। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, গবেট-গহীনতা এবং কর্মব্যস্ততার কারণে দীর্ঘদিনের জন্য তাদের সাথে যোগাযোগটা হারিয়ে ফেললাম। তবে ভাগ্য ভালো, মুবিন ভাইয়ের সাথে আবারো দেখা হয়েছিল কয়েক বছর পরে লন্ডনে। কিন্তু সেটাই যে ছিলো শেষ দেখা- কে জানতো? প্রায় উনিশ বছর আগের কথা। লন্ডনের বাংলা টাউন হিসেবে পরিচিত ব্রিকলেনে বিশিষ্ট সাংবাদিক সাঈদ চৌধুরী ভাইয়ের মিডিয়া মহল অফিসে গিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে মুবিন ভাইয়ের সাথে দেখা। অনেকদিন পর বিদেশে তার দেখা হওয়াতে তখন ভালো লেগেছিল। কথার প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, তিনি তখন লন্ডনে পড়াশোনা করছেন। এরপর আবার অনেক বছর যোগাযোগ ছিলো না।

 

মুবিন ভাইদের পরিবারটি সিলেটের একটি আদর্শ পরিবার ছিল। মুবিন ভাই-শাহী ভাইদের বাবা মরহুম এডভোকেট সুলতানুজ্জামান চাচা ছিলেন সিলেটের একজন অনামধন্য আইনজীবী। মুবিন ভাই-শাহী ভাইদের আম্মা ডাঃ মালেকা আন্টি একজন ভালো চিকিৎসক হিসেবে এবং মহিলাদের মাঝে ইসলাম প্রচারের কারণে সুপরিচিত ছিলেন। মুবিন ভাইয়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। তবে গত বছর আমার বড় মেয়েকে নিয়ে যখন মিশিগানে এসেছিলাম, আমাদেরকে আন্তরিক মেহমানদারি করেছিলেন। আমার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেছিলেন। মুবিন ভাইয়ের মৃত্যুর কয়েক মাস আগে ফেসবুকে জেনেছিলাম, মুবিন ভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মনে করেছিলাম ইনশাআল্লাহ তিনি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরবেন। স্বপ্নেও ভাবিনি তিনি চলে যাবেন। তাই কিছুদিন পরে তার জানাজায় গিয়েছিলাম। তখন সংকল্প করেছিলাম, আমেরিকায় আসলে মিশিগানে আসবো এবং মুবিন ভাইয়ের জানাজায় অংশগ্রহণ করবো। পরিশেষে এই দোয়াই করি, মুবিন ভাই এবং তার পরিবারসহ সকল মুমিনদের আল্লাহ ক্ষমা করে দিন। তাদের বেহেশতের বাসিন্দা হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন।

অন্তরে চির ভাস্বর প্রিয় মুবিন ভাই.

এম জি কিবরিয়া | ইংল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ.

 

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রিজার্ভ নামল ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মাজহাব ও এর গুরুত্ব

রিয়েলেটর হাসান আলী কঠোর পরিশ্রমে সময়কে করেছেন জয়

রুহুল হুদা মুবিন: নিভে যাওয়া এক উজ্জ্বল প্রদীপ শিখা

লেনদেনের সততায় উদ্ভাসিত রুহুল হুদা মুবিনের নীতি ও আদর্শ

ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনা বয়স্কদের সেবা খাতে এবার কতটা প্রভাব ফেলবে

হ্যামট্রামিক হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়ামে চলছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতি প্রদর্শনী

শ্রদ্ধাঞ্জলি: স্মৃতিতে চির অমলিন রুহুল হুদা মুবিন

ও’হেয়ার পার্ক: ‘ভূমির অপচয়’ থেকে মহল্লার রত্নে পরিণত হওয়া

ডেট্রয়েটবাসীগণ একে অপরকে সাহায্য করছে: সম্পর্কের শক্ত ভিত তৈরি করছে কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে

১০

মিশিগানে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় স্বাস্থ্য সেবা খাতে আশার আলো; জনপ্রিয় হচ্ছে টেলিহেলথ

১১

মুনার ন্যাশনাল ও জোনাল কমিটি গঠন: ২০২৫-২৬ সেশনে নতুন নেতৃত্বের অভিষেক

১২

২০২৫ সালে আইআরএস-এর নতুন নিয়ম: জানুয়ারি ২৭ থেকে শুরু হচ্ছে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইলিং

১৩

ট্রাম্প-মোদির বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা

১৪

যুদ্ধ বন্ধ না করলে পুতিনকে আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবার ট্রাম্পের

১৫

নিশ্চিত থাকেন আমরা আপনাকে সমর্থন করব : ড. ইউনূসকে জার্মান চ্যান্সেলর

১৬

ভেঙে পড়ছে এবার বিশ্ব ব্যবস্থা!

১৭

গাজা থেকে আরও চার জিম্মিকে মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনিরা

১৮

জন্মস্থান সূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারবেন ট্রাম্প?

১৯

জনগণ রায় দেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অধিকার আছে কিনা: জামায়াত আমির

২০