বাংলা সংবাদ
৬ জুলাই ২০২৩, ১:৩৯ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা আল্লামা

মোস্তফা আল্লামা ১৯৪৯ সালের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার দেউল গ্রাম নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় উনার বাবার ব্যবসার কারণে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকার ফকিরাপুলে উনার বাবার সিলেট বোর্ডিং নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল।

লেখাপড়ার হাতেখড়ি ঢাকায় শুরু হয়, পুরনো ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৬৪ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন এবং ১৯৬৬ সালে এইচএসসি ও ১৯৬৯ সালে তখনকার জগন্নাথ কলেজ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ডিগ্রী পাস করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্র অবস্থাতেই তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি জগন্নাথ কলেজের ছাত্র সংসদের সংস্কৃতি সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশিদ ওই সংসদের ভিপি ছিলেন।

মোস্তফা আল্লামা অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিরোধী দলের নেত্রী ফাতেমা জিন্নার পক্ষে কাজ করেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানী সাহেবের নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবেও কাজ করেন। তখন থেকেই তিনি জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর হিসাবে হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা আলামার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল।

স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই মোস্তফা আল্লামা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাবলিক রিলেশন এবং পাবলিসিটি সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন, এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সাথে উনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

মোস্তফা আল্লামা’র অভিমত
আসসালামু আলাইকুম
আমি শুনে এবং দেখে খুব খুশি হয়েছি যে আমেরিকার মিশিগান থেকে একটি বাংলা পত্রিকা ‘বাংলা সংবাদ’ প্রকাশিত হয়েছে। আমি পত্রিকাটির উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি। পাশাপাশি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ইকবাল ফেরদৌসকে ধন্যবাদ জানাই মিশিগান থেকে এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিষয়ে মার্স্টাস করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কলকাতা থেকে একটি সাপ্তাহিক ও একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলাম। আজ ‘বাংলা সংবাদ’ দেখে মনে হয়েছে আমরা যদি প্রবাসে এমন আরো অনেক কিছুর সাথে জড়িত হয়ে বাংলাদেশের কমিউনিটিকে বেশি করে সহযোগিতা করতে পারি তাহলে আমাদের বাংলাদেশ এবং আমেরিকার মধ্যে সেতুনবন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে।

যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মোস্তফা আল্লামা মুজিবনগর থেকে সাপ্তাহিক “জয় বাংলা” নামক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এছাড়াও ১৯৭১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বিক্ষুব্ধ বাংলা নামে সংকলন প্রকাশ করেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন “ইয়াহিয়া খান যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ক্ষমতা না দেয়, তাহলে প্রয়োজনে বাঙালিরা আন্দোলন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করবে।”

এজন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লোকজন এপ্রিল মাসে রাজাকারদের সাহায্যে উনার বাবাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে উনার বাবাকে দীর্ঘ ছয় মাস অকথ্য নির্যাতন চালায়, তবে অক্টোবর মাসে আহত অবস্থায় মুক্তি দেয়। যুদ্ধকালীন সময়ে জেনারেল এমএজি ওসমানীর পাবলিক রিলেশন অফিসার ও প্রেস সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর হেলিকপ্টারে চড়ে উনি জেনারেল ওসমানীর সাথে ঢাকায় আসার সময় ফেঞ্চুগঞ্জের উপরে থাকাকালীন সময়ে উনাদের হেলিকপ্টার লক্ষ করে গুলি বর্ষণ করা হয় এবং আঘাতপ্রাপ্ত হন। উনার সাথে ওই হেলিকপ্টারে তখন জেনারেল এমএজি ওসমানী, ডক্টর জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও শেখ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

কারা উনাদের হেলিকপ্টারে গুলিবর্ষণ করেছিল এ ব্যাপারে তিনি অনেক কিছুই জানতেন কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করেননি। উনার মৃত্যুর কিছুদিন আগে উনার আত্মজীবনীমূলক একটি বইতে এ সম্পর্কে কিছু লিখবেন বলেছিলেন কিন্তু সেটা আর পূর্ণ হয়নি।

যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি অনারারি মেজর হিসাবে পদোন্নতি পান এবং তার সহকর্মী ছিলেন অনারারি লেফটেন্যান্ট শেখ কামাল এবং ক্যাপ্টেন নূর। স্বাধীনতার পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উনাকে সচিবালয়ে সহকারি সচিবের পদে দায়িত্ব দেন কিন্তু উনি সম্মানের সহিত এই পদ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি খুবই স্বাধীনচেতা ও সৌখিন লোক ছিলেন। স্বাধীনতার পরেই তিনি নাভানা কোম্পানির গাড়ির ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা আল্লামা একজন ক্রীড়া অনুরাগী ছিলেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী ক্লাবের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ হাই স্কুল মাঠে “মোস্তফা আল্লামা গোলকাপ ফুটবল” তখনকার সময়ে সাড়া জাগিয়েছিল।

তিনি সব সময় ঢাকায় অবস্থান করলেও সিলেটের লোকজনদের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতেন। তিনি দুইবার জালালাবাদ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও তিনি সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে আ.স.ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার (সিলেট-৬) আসনে মশাল মার্কায় নির্বাচন করেছিলেন তবে তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। এছাড়াও ২০০১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাদেক হোসেন খোকার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তবে ওই নির্বাচনেও জয়লাভ করতে পারেননি।

মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা আল্লামা অত্যন্ত ভ্রমণ পিপাসী ছিলেন, তিনি ইউরোপ আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশের ৪৫ টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর যুক্তরাজ্যে বসবাস করে দেশে চলে যান।

১/১১ পট পরিবর্তনের সময়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসাবে সফরে আসেন, তারপর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেটে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

তিনি জীবনের শেষ দিকে বিভিন্ন মসজিদের কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলেন।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রিজার্ভ নামল ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মাজহাব ও এর গুরুত্ব

রিয়েলেটর হাসান আলী কঠোর পরিশ্রমে সময়কে করেছেন জয়

রুহুল হুদা মুবিন: নিভে যাওয়া এক উজ্জ্বল প্রদীপ শিখা

লেনদেনের সততায় উদ্ভাসিত রুহুল হুদা মুবিনের নীতি ও আদর্শ

ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনা বয়স্কদের সেবা খাতে এবার কতটা প্রভাব ফেলবে

হ্যামট্রামিক হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়ামে চলছে বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতি প্রদর্শনী

শ্রদ্ধাঞ্জলি: স্মৃতিতে চির অমলিন রুহুল হুদা মুবিন

ও’হেয়ার পার্ক: ‘ভূমির অপচয়’ থেকে মহল্লার রত্নে পরিণত হওয়া

ডেট্রয়েটবাসীগণ একে অপরকে সাহায্য করছে: সম্পর্কের শক্ত ভিত তৈরি করছে কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে

১০

মিশিগানে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় স্বাস্থ্য সেবা খাতে আশার আলো; জনপ্রিয় হচ্ছে টেলিহেলথ

১১

মুনার ন্যাশনাল ও জোনাল কমিটি গঠন: ২০২৫-২৬ সেশনে নতুন নেতৃত্বের অভিষেক

১২

২০২৫ সালে আইআরএস-এর নতুন নিয়ম: জানুয়ারি ২৭ থেকে শুরু হচ্ছে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইলিং

১৩

ট্রাম্প-মোদির বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা

১৪

যুদ্ধ বন্ধ না করলে পুতিনকে আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবার ট্রাম্পের

১৫

নিশ্চিত থাকেন আমরা আপনাকে সমর্থন করব : ড. ইউনূসকে জার্মান চ্যান্সেলর

১৬

ভেঙে পড়ছে এবার বিশ্ব ব্যবস্থা!

১৭

গাজা থেকে আরও চার জিম্মিকে মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনিরা

১৮

জন্মস্থান সূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারবেন ট্রাম্প?

১৯

জনগণ রায় দেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অধিকার আছে কিনা: জামায়াত আমির

২০