চলার পথে চড়াই-উৎরাই মাড়িয়েছেন, কঠিনকে করেছেন সহজ। তিনি রেজাউল করিম চৌধুরী। জীবন পথের লড়াইয়ে জয়ের পথকে করেছেন সুগম। নিজগুণে অনন্য, মিশিগানে বাঙালি কমিউনিটির প্রিয় মানুষ। ইতিমধ্যে নিজের কর্মগুণে সকলের নিকট পৌঁছে গেছেন।
কেবল বাঙালি কমিউনিটি নয় অন্যান্য দেশের অভিবাসীরাও প্রাণভরে ভালোবাসে রেজাউল চৌধুরীকে। আব্দুল মান্নান চৌধুরী ও আসফাতুন নেসা চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান প্রতিনিয়ত নিজের মেধা ও মননে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন মিশিগানের বাঙালি কমিউনিটিতে। স্ত্রী সৈয়দা দুলালী বেগম এবং তিন সন্তান বড় ছেলে এহসানুল করিম চৌধুরী, মেয়ে নওরিন করিম চৌধুরী ও ছোট ছেলে রাফসান করিম চৌধুরীকে নিয়ে সুখময় পথে হেঁটে চলছেন নিত্যদিন।
রেজাউল চৌধুরীর জন্ম বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। সিলেটের খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠ মদন মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, মুরারি চাঁদ কলেজ থেকে ডিগ্রি এবং সিলেট ল’ কলেজ থেকে এল.এল.বি সম্পন্ন করেন।
সিলেট ল’ কলেজে অধ্যয়নকালে একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে যোগদানের মধ্যদিয়ে কর্মক্ষেত্রে পা রাখেন। ২০০০ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী শহর ওয়াশিংটনে একটি হোটেলে ওয়েটার হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে যোগ দেন ইউনাইটেড ব্যাংকে।
চাকুরি সূত্রে বদলি নিয়ে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরে গ্রেট লেইকস নামক অঞ্চল মিশিগানে। অতঃপর স্থায়ী হন মিশিগানেই। চাকুরি ছেড়ে জড়িয়ে পড়েন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়। বরাবরের মতোই সাফল্য আসে সেখানে। কমিউনিটির মানুষের কল্যাণে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। গ্লোবাল ডেট্টয়েট নামক প্রতিষ্ঠানে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কমিউনিটি এ্যাংগেজম্যান্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগ দেন রেজাউল চৌধুরী।
গ্লোবাল ডেট্টয়েট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে রেজাউল চৌধুরী জানান, দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানে অপূর্ণ প্রতিভার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অভিবাসীদের কল্যাণে কাজ করছে গ্লোবাল ডেট্টয়েট। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তোলার কাজটিও যত্ন সহকারে করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়াও স্মল বিজনেসে লাইসেন্স ও লোন প্রদানে সহযোগিতাসহ শিক্ষার্থীদেরকে স্টার্টআপ চালু করতে সহায়তা করে থাকে। এক কথায় বলতে গেলে অভিবাসীদের মজবুত শিকড় স্থাপন এবং উন্নতির লক্ষে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নিয়ে থাকে গ্লোবাল ডেট্টয়েট। গ্লোবাল ডেট্রয়েট একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সম্প্রদায় উন্নয়ন সংস্থা।
আমাদের গ্লোবাল ট্যালেন্ট রিটেনশন ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে, গ্লোবাল ডেট্রয়েট দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানের কোম্পানিগুলোকে বৈশ্বিক প্রতিভার সাথে সংযুক্ত হতে এবং মার্কিন চাকরির বাজারের জন্য ছাত্রদের প্রস্তুত করতে সাহায্য করার জন্য কাজ করছে। গ্লোবাল ডেট্টয়েটে আমার কাজ হচ্ছে যে প্রোগ্রামগুলো অনুষ্ঠিত হয় সেগুলোর সঙ্গে কমিউনিটির লোকজনকে যুক্ত করা। বাঙালি ছাড়াও অ্যারাবিয়ান, স্পেনিশসহ অন্যান্য কমিউনিটির জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছি।
বড় ভাইয়ের একটি কথা স্মরণে রেখে পথ চলতেন রেজাউল চৌধুরী। বড় ভাই বলতেন, যে কাজই করো সেখানে সততা ও একাগ্রতার সাথে তোমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করো। তিনি সর্বদা সেই কথাটি মনে গেঁথেই পথ চলেছেন।
কমিউনিটি এনগেজমেন্ট স্পেশালিস্ট রেজাউল চৌধুরী ডেট্রয়েট, হ্যামট্রামিকের বাংলাটাউন পাড়ায় গ্লোবাল ডেট্রয়েটের কাজকে গতিশীল করেছেন। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু সংগঠনের সঙ্গে রয়েছেন সম্পৃক্ত। তিনি হ্যামট্রামিক রেসিডেন্টস ফোরামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা সহ নাগরিকের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে থাকে।
হ্যামট্রামিক সিটির বোর্ড অব রিভিউ মেম্বার, সিটিজেন পেট্রল, মিশিগান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস, এবং মিশিগানে বাংলাদেশি ও আমেরিকান ডেমোক্র্যাট ককাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন রেজাউল চৌধুরী। কমিউনিটির মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অজস্র অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তারই প্রেক্ষিতে রেজাউল চৌধুরী জানালেন, একটা ভুল ধারণা আমাদের কমিউনিটিতে তৈরি হয়েছে সেটা হলো মিশিগানে কোনো কিছুই ফ্রি হয়না।
অথচ এখানে অনেক সংগঠন রয়েছে এবং লোকজনকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অনেক কিছু দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের কমিউনিটির অধিকাংশ লোকজন বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়না। আমেরিকার সেন্সাস ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম এবং সেই সময় লক্ষ্য করেছি আমাদের কমিউনিটির মানুষ তথ্য গোপন করতে চায়, অনেকের ধারণা সঠিক তথ্য দিলে সমস্যার মধ্যে পড়বে অথচ সমস্যা সমাধানে সঠিক তথ্য দেওয়াটাই জরুরি।
রেজাউল চৌধুরী শৈশবে বাবাকে হারিয়েছেন তাই বাবার সঙ্গে স্মৃতিটাও কম। ইতিবাচক কাজগুলোতে উৎসাহ পেয়েছেন মায়ের নিকট হতে। এছাড়া জীবনে চলার পথে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন রেজাউল চৌধুরীর বড় ভাই ওয়েছ উদ্দিন চৌধুরী। বড় ভাই এয়ার ফোর্সে ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি পাকিস্তানের করাচিতে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় গ্রেফতার হন। সেখানে বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানও সাথে ছিলেন। পরবর্তীতে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে দেশে আসেন।
সেই বড় ভাইয়ের একটি কথা স্মরণে রেখে পথ চলতেন রেজাউল চৌধুরী। বড় ভাই বলতেন, যে কাজই করো সেখানে সততা ও একাগ্রতার সাথে তোমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করো। তিনি সর্বদা সেই কথাটি মনে গেঁথেই পথ চলেছেন।
এখনও কমিউনিটির তরে সততা ও একাগ্রতার সাথে সেরাটা দিয়ে যাচ্ছেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
মন্তব্য করুন