যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। দেশটির সমৃদ্ধ একাডেমিক ঐতিহ্য, বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে যুক্তরাজ্য বেশ জনপ্রিয়। আর এই দেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের নানা সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে থাকে। যুক্তরাজ্যে গবেষণা, বিভিন্ন সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা বা অনন্য শিক্ষামূলক যাত্রায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে তা রূপান্তরমূলক অভিজ্ঞতা হতে পারে।
পড়াশোনার জন্য যুক্তরাজ্য যেতে চাইলে শুরুতেই স্টাডি ভিসার আবেদন করতে হবে। এর জন্য আবেদনকারীর বয়স ১৬ বা তার বেশি হতে হবে। নিবন্ধিত স্টুডেন্ট স্পনসরের কাছ থেকে কোনো একটি কোর্সে পড়াশোনা করার জন্য প্রস্তাব পেতে হবে। নিজের যাবতীয় ও পড়াশোনার ব্যয় বহনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে। তবে এই অর্থের পরিমাণ আবেদনকারীর পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
ইংরেজি ভাষা বলতে, পড়তে, লিখতে ও সাবলীলভাবে বুঝতে পারতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ১৬ বা ১৭ হতে হলে মা–বাবার কাছ থেকে সম্মতি নিতে হবে। আবেদন করার সময় এই সম্মতির প্রমাণ লাগবে।
আবেদনকারীর বয়স ১৬ বা ১৭ বছর হলে এবং যুক্তরাজ্যের কোনো একটি স্বাধীন স্কুলে পড়তে চাইলে আগে চাইল্ড স্টুডেন্ট ভিসার জন্য যোগ্য হতে পারেন। পরে এই ভিসা ফোর টায়ার (সাধারণ) স্টুডেন্ট ভিসায় পরিণত হবে।
কখন আবেদন করতে হবে, তা নির্ভর করে আপনি যুক্তরাজ্যের ভেতর নাকি বাইরে থেকে আবেদন করছেন তার ওপর। যুক্তরাজ্যের বাইরের হলে আপনার কোর্স শুরু করার ছয় মাস আগে ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। সাধারণত তিন সপ্তাহের মধ্যে ভিসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যের ভেতরের কেউ হলে কোর্স শুরুর তিন মাস আগে আবেদন করা যাবে। তবে বর্তমান ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অবশ্যই আবেদন করতে হবে। বর্তমান ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে নতুন কোর্স শুরু করতে হবে। আর ভিসা পাওয়া না-পাওয়ার বিষয়ে আট সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।
এই ভিসায় যুক্তরাজ্যে কত দিন থাকা যাবে, তা নির্ভর করে কোর্সের মেয়াদ ও ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে কোন পড়াশোনা সম্পন্ন হয়েছে তার ওপর। আবেদনকারীর বয়স ১৮ বা তার বেশি হলে এবং কোর্সটি ডিগ্রি স্তরের হলে সাধারণত পাঁচ বছর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকা যায়। আর কোর্সটি ডিগ্রি স্তরের নিচে হলে সাধারণত দুই বছর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকা যাবে।
যুক্তরাজ্যে বেশি দিন থাকতে হলে আগে থাকার জন্য যোগ্য হতে হয়। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অবস্থায় ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করতে হয়। আবেদনকারী যদি ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যে থাকেন, তবে অন্য ভিসা থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় নিতে হবে। আর বর্তমান কোর্সটি সফলভাবে শেষ করার পর কমপক্ষে দুই বছর যুক্তরাজ্যে থাকার জন্য একটি গ্র্যাজুয়েট ভিসা নিতে হবে।
কোর্স শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে যুক্তরাজ্যে ঢুকতে হয়। কোর্সের মেয়াদ যদি ছয় মাস বা তার কম সময় স্থায়ী হয়, তাহলে তা শুরুর এক সপ্তাহ আগপর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ঢোকা যায়। আর কোর্সের মেয়াদ ছয় মাসের বেশি সময় স্থায়ী হলে তাহলে তা শুরুর এক মাস আগপর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ঢোকা যায়।
কোর্স যখনই শুরু হোক না কেন, ভিসায় উল্লেখ থাকা তারিখের আগে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করার কোনো সুযোগ নেই।
যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করলে ফি দিতে হবে প্রায় ৭৬ হাজার ৭২৩ টাকা (৪৯০ পাউন্ড)। আর যুক্তরাজ্যের ভেতর থেকে নতুন করে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করলে বা ভিসার মেয়াদ বাড়াতে চাইলে সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আবেদনকারীর সঙ্গে অন্য কেউ গেলে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অবশ্যই ভিসা ফি দিতে হবে।
আবেদনের অংশ হিসেবেই প্রত্যেক আবেদনকারীকে হেলথকেয়ার সারচার্জ দিতে হবে। ভিসার মেয়াদ কত দিন, তার ওপর নির্ভর করে এই অর্থের পরিমাণ। আবেদনের আগে এটা অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
আবেদনকারীর আবেদন গ্রহণ হলে তাঁর সঙ্গে সঙ্গী বা সঙ্গিনী ও সন্তানেরা (নির্ভরশীল) যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি পাবেন।
যুক্তরাজ্য গিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হবে। স্টুডেন্ট ইউনিয়নের অফিসার হিসেবে কাজ করা যাবে। কোন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন এবং নির্ধারিত মেয়াদে কোনো কাজ করছেন কি না, তার ওপর নির্ভর করে অন্য কাজ করার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।
যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে সরকারি ফান্ড (বেনিফিট) ও পেনশন দাবি করা যাবে না। কিছু নির্দিষ্ট কাজ, যেমন একজন পেশাদার ক্রীড়াবিদ বা ক্রীড়া প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করা যাবে না। নিজে নিজে কোনো চাকরিতে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না।
আবেদন গ্রহণ হলে কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না, তা স্টুডেন্ট ভিসায় বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে।
মন্তব্য করুন