বাংলা সংবাদ ডেস্ক
১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

ইসরায়েলের সঙ্গে এবার তুরস্ক যে কারণে যুদ্ধে জড়াবে না

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতন সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশকে সতর্ক করেছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে ইসরায়েল সিরিয়ার পটপরিবর্তনে উদ্বিগ্ন। ইসরায়েল সরকারের একটি কমিটি এমন পরামর্শও দিয়েছে যে সুন্নি মুসলিমশাসিত সিরিয়া, যারা ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারকেই স্বীকৃতি দেয় না, শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রু ইরানের চেয়েও সম্ভাব্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

 

এই কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে সিরিয়ায় তুরস্কের প্রভাব নিয়ে বিচলিত ছিল। তারা দাবি করেছে, তুরস্ক সিরিয়ার নতুন সরকারকে প্রক্সি বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যাতে করে ‘অটোমান সাম্রাজ্যকে তার পূর্বের গৌরবে ফিরিয়ে আনা যায়’। সিরিয়ার নতুন সরকারকে তুরস্ক খুব দ্রুত অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করতে পারে, সম্ভাব্যভাবে যেটা ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে সরাসরি সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। কিন্তু এটা কি বাস্তব চিত্র? সংক্ষেপে উত্তর হলো, না। যদিও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ধারাবাহিকভাবে তুরস্ক-ইসরায়েল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দুর্বল করেছেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিমান ভ্রমণ করতে দেননি, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তেল আবিবের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ দিয়েছেন। তুরস্কের সেনাবাহিনী একদিন ফিলিস্তিনি জনগণের সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে, এমন জনতুষ্টিবাদী বক্তব্যও দিয়েছেন। এ সবকিছুর পরও ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্ক সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার কোনো কারণ নেই।

 

ইতিহাসের বাস্তবতা হলো, তুরস্ক ও ইসরায়েল দুটি দেশই মার্কিন মিত্র। দুই পক্ষ কখনোই পরস্পরের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়ায়নি। তুরস্কের এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চারে জড়ানোর কোনো খায়েশ নেই। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যখন ইরান ও ইসরায়েল একটা যুদ্ধের মধ্যে আছে এবং গাজায় বিপর্যয় ঘটে গেছে। সিরিয়ায় তুরস্কের উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার। সিরিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ক্রীড়ানকের সঙ্গে প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছে। প্রথমত, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, আঙ্কারা চায় একটা স্থিতিশীল সিরিয়া, যেটা অন্য কোনো দেশের ওপর হুমকি তৈরি করবে না। দ্বিতীয়ত, সিরিয়াকে একটি গণতান্ত্রিক, এককেন্দ্রিক ও বেসামরিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় তুরস্ক। সব সংঘ্যালঘু ও জাতিসত্তাকে নিয়ে হতে হবে নতুন সিরিয়া। একই সঙ্গে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) যেন ক্ষুদ্ররাষ্ট্র গঠন করতে না পারে, সেটা ঠেকাতে চায় তুরস্ক।

 

এক দশকের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে তুরস্ক। বেশ কয়েকবার তুরস্কের সেনাবাহিনীকে সামরিক অভিযান করতে হয়েছে। এ সবকিছু তুরস্কের নাগরিকদের জীবনযাপনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। শত শত মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। এ বাস্তবতায় তুরস্ক চায় সিরিয়া যেন অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিকশিত হতে পারে। ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি কিংবা পরোক্ষ কোনো সংঘাত শুরু হলে তুরস্কের সেই লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে না।  এখন পর্যন্ত তুরস্কের পদক্ষেপগুলো তাদের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। প্রথম পর্যায়ে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বিমান হামলায় চোখ বন্ধ করে রেখেছিল তুরস্ক। হামলার পরিসর বাড়ার পর ফিদান বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই এ ধরনের হামলা বন্ধ করতে হবে।

 

সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ভুল হাতে চলে যেতে পারে—এ–সংক্রান্ত ইসরায়েলের উদ্বেগকে স্বীকার করে নেন ফিদান। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে ইসরায়েল হায়াত আল-শামের (এইচটিএস) লক্ষ্যবস্তুতে হামলা এড়িয়ে চলেছে। এ ছাড়া সিরিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত যাতে না বাঁধে, তার জন্য একটা ব্যবস্থা তৈরিতে উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্ক। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়মিতভাবে যোগাযোগ করে চলেছে। আমার সূত্রগুলো জানিয়েছে, আহমদ আল-শারাসহ এইচটিএসের নেতাদের আঙ্কারা পরামর্শ দিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে তারা যেন শান্ত থাকে। এইচটিএসের কয়েকজন নেতা জনসম্মুখে বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত চান না। এদিকে তুরস্কের কিছু সূত্র জানিয়েছে, এমন ইঙ্গিত আছে যে দামেস্ক সামরিকভাবে আঙ্কারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। বিশেষ করে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সিরিয়ার সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে তুরস্কের সহযোগিতা চাইবে সিরিয়া।

 

এ ধরনের সহযোগিতার ব্যাপারে ইসরায়েলের উদ্বেগ নিয়ে সচেতন তুরস্ক। আমি যত দূর শুনেছি, সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক সম্পৃক্ততা সীমিত থাকবে। তুরস্কের সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা হামা ও দামেস্কের বাইরে যাবে না। এর মাধ্যমে তুরস্ক ইসরায়েলকে বার্তা দিতে চায় যে সিরিয়ায় তাদের পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য শত্রুতাবশত নয়। কিন্তু ইসরায়েলকে এই শর্ত মেনে নিতে হবে যে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে পিকেকে নিয়ন্ত্রিত ছোট রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সহ্য করবে না তুরস্ক। তুরস্ক বারবার করে বলে আসছে, কুর্দি গোষ্ঠীগুলো যেন একীভূত সিরিয়ার অংশ হয়। ইসরায়েলের একটি প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, তেল আবিব তার নিরাপত্তার স্বার্থে ভাগ হয়ে যাওয়া সিরিয়াকেই পছন্দ করবে। এটা একটা ভুল। খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যাওয়া সিরিয়া সশস্ত্র গোষ্টীগুলোর বিকাশের জন্য উর্বর ক্ষেত্র হবে। সেটা হলে পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। দীর্ঘ মেয়াদে যেটা ইসরায়েলের জন্য ঝুঁকির কারণ হবে। এর বিপরীতে একটি গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সিরিয়া সবার স্বার্থ রক্ষা করবে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘আমরা ফুটবল খেলিনি’, বার্সার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি

বিয়ে ছাড়াই তিন সন্তানের জনক নেইমার

টাইব্রেকারে আর্সেনালকে হারাল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

জাপানে এবার ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি

বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা প্রদানের আহ্বান এবার প্রধান উপদেষ্টার

তালেবানের মন জয়ের চেষ্টা কেন করছে ভারত

বার্সার ট্রফি ক্যাবিনেটে যেভাবে ১০০

শেখ রেহানাসহ ৩ সন্তানের বিরুদ্ধে ৩ মামলা, ‘সহযোগী’ শেখ হাসিনা

এইচএমপিভির জন্য এবার বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা

রহস্য নিয়ে হাজির এবার চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের ভয়ংকর যুদ্ধবিমান

১০

টিউলিপ সিদ্দিককে এখনো কেন বরখাস্ত করা হয়নি?

১১

ইসরায়েলের সঙ্গে এবার তুরস্ক যে কারণে যুদ্ধে জড়াবে না

১২

আগামী নির্বাচনকে এ যাবতকালের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই : প্রধান উপদেষ্টা

১৩

মিশিগান বাংলাদেশি-অ্যামিরিকান ডেমোক্রেটিক ককাসের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

১৪

ব্রিটিশ রাজার দাতব্য সংস্থায় ‘আড়াই লাখ পাউন্ড’ দেন সায়ান এফ রহমান

১৫

প্রশাসন ট্রাম্পের আগমনের আগেই বাইডেন প্রায় ১ মিলিয়ন অভিবাসীর জন্য সাময়িক বহিষ্কার সুরক্ষা বাড়ালেন

১৬

যুক্তরাষ্ট্র $55 মিলিয়ন ফিরিয়ে দেবে ব্লক করা প্যারোল ইন প্লেস সম্প্রসারণের জন্য

১৭

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এবার সাকিবের বোলিং নিষেধাজ্ঞা বহাল

১৮

দাবানল: লস অ্যাঞ্জেলসে বাড়ছে সরকারবিরোধী ক্ষোভ

১৯

যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-১বি’সহ এবার বিভিন্ন ভিসা নিয়ে সুখবর

২০