যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প কী কী পদক্ষেপ নেবেন, সেদিকে চেয়ে আছে বিশ্ববাসী। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি যুদ্ধ থামাবেন। তাঁর পক্ষে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়াবেন। একই সঙ্গে নিন্দুক, সমালোচকদের তদন্তের আওতায় আনবেন। স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা ট্রাম্পের।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থনের সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প। গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকে তিনি বলে আসছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু তাঁর উপদেষ্টারা স্বীকার করেছেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টায় বন্ধ হচ্ছে না। এ যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্ভবত কয়েক মাস সময় লাগবে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, শান্তি চুক্তি করতে হলে ইউক্রেনকে তার কিছু ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হতে পারে। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে।
ট্রাম্প ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ গত নভেম্বরে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে রুশ ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়ার সমালোচনা করা হয়েছিল। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর কার্যকলাপ নিয়েও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ন্যাটোর উদ্দেশ্য ও মিশনের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে তাঁর প্রশাসন। ট্রাম্প তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে চীনবিরোধী হিসেবে খ্যাত মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিওকে মনোনীত করেছেন। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নিজের লক্ষ্য পূরণে রুবিওকে দায়িত্ব দিচ্ছেন তিনি।
তবে চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অভিপ্রায় রয়েছে ট্রাম্পের। অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সি উপস্থিত না হলেও চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং সেখানে যান। এর পাশাপাশি চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হওয়া ঠেকিয়েছেন তিনি। সিএনএন জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পর চীন সফরে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও বলেছেন। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে গত বুধবার ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতিকেও সমর্থন করেছেন তিনি। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেত চেষ্টা চালানো হবে। এর আগে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি এ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। পরে বাইডেনও তা অব্যাহত রাখেন।
সিরিয়ার সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র নাক গলাবে না বলেও জানান ট্রাম্প। এরপর দেশটিতে বিদ্রোহীদের হাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ঘটে। মধ্যপ্রাচে ইরানের পক্ষ থেকেও ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দেশটির নতুন সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে পশ্চিমাপন্থী হিসেবে দেখা হয়। গতকাল ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইরান আশা করছে ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন বাস্তবভিত্তিক নীতি নিয়ে সামনে এগোবে। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসরায়েলের আয়রন ডোমের মতো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তৈরির কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি মেক্সিকোতে মাদক চোরাচালানিদের ধরতে অভিযান চালানোর কথাও বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইউরোপের ডানপন্থী নেতাদের দিকেও বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর উদ্যোগ দেখা গেছে। তাঁর অভিষেক অনুষ্ঠানে অতিথি তালিকায় ছিলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেই। এর বাইরে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্তর অরবান, যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ, ফ্রান্সের রাজনীতিবিদ জেমোর, স্পেনের কট্টর জাতীয়তাবাদী ভক্স পার্টির নেতা সান্তিয়াগো আবাস্কাল, জার্মানির কট্টরপন্থী অ্যালিস ভাইদেলসহ অনেকেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন। ট্রাম্প একদিনে যেমন সমমনা বন্ধুর তালিকা ভারী করছেন, তেমনি নিন্দুক, সমালোচকদেরও তদন্তের আওতায় আনার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর ট্রানজিশন টিম সম্ভাব্য উচ্চপদস্থ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করছে। ট্রাম্পের প্রতি যাঁরা অবিশ্বস্ত, তাঁদের চাকরি হারাতে হতে পারে।
এর বাইরে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে শুরু করে নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনজীবী ও নির্বাচনী তহবিলের দাতাদের নিয়েও তদন্ত করবে তাঁর প্রশাসন। ইতিমধ্যে ফ্লোরিডার অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা কাশ প্যাটেলকে এফবিআইয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, যে কর্মকর্তারা তাঁর দিকনির্দেশনা মানবেন না, তাঁদের চাকরি থাকবে না। ২০২১ সালে ক্যাপিটলে দাঙ্গায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশকে ক্ষমা করবেন ট্রাম্প। এ ঘটনার তদন্তে যুক্ত ব্যক্তিদের কারাগারে পাঠাবেন তিনি। টিভি নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা কুৎসা গেয়েছেন, তাঁদের শাস্তি দেবেন। এ ছাড়া সরকারে বসে যাঁরা অন্য এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন বা ডিপ স্টেট চালান, সে নেটওয়ার্ক তিনি ভেঙে দেবেন ট্রাম্প।
মন্তব্য করুন