বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সরব অবস্থানে থাকা সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব দিচ্ছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২১ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আগামী তিন বছরের জন্য এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বিদেশে বাংলাদেশের কোনো মিশনে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর জন্য তাঁর চাকুরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।
সাহসী সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর জন্ম সিলেট শহরে। তাঁর পূর্বপুরুষ আসামের করিমগঞ্জ থেকে সিলেটে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা ইসলামের প্রচার-প্রসারে নিবেদিত ছিলেন। আনসারী সিলেট শহরে শাহ মিরাজি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর সিলেট সরকারি এইডেড উচ্চ বিদ্যালয়, রাজধানীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি তেজগাঁও সরকারি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
মুশফিকুল ফজল আনসারী দৈনিক ইত্তেফাকের ক‚টনৈতিক প্রতিবেদক ছিলেন। এর আগে বার্তা সংস্থা ইউএনবিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। ব্রিটেনের দ্যা টাইমস ও সানডে টাইমস পত্রিকায় ওয়ার্ক এক্সিপিরিয়েন্স রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়টিতে তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠান অ্যাঙ্কর করেছেন। এনটিভিতে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘হ্যালো এক্সেলেন্সি’ হোস্ট করেছেন। এতে রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা থাকতেন। তিনি মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক। সাহসী সাংবাদিকতার কারণে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে ২০১৫ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচন জালিয়াতি এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রায়ই জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউসের প্রেস কনফারেন্সে প্রশ্ন করতেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষ কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাস্ট নিউজ বিডি ডটকমের সম্পাদনার পাশাপাশি স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের সদরদপ্তর ও হোয়াইট হাউজে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম সম্পাদিত বৈদেশিক নীতি ম্যাগাজিন সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভসেরও নির্বাহী সম্পাদক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাস্টনিউজবিডির সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংকের কনসালটেন্ট হিসেবেও। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তিনি ১২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন। তিনি দেশের মাটিতে পা দিয়েই সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তাঁর প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহযোগিতায় ১৩ সেপ্টেম্বর বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব সংবর্ধনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মন্তব্য করুন