ইসরাঈল-লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা ঘিরে আতঙ্কে রয়েছেন উভয় প্রান্তের বাসিন্দারা। এই সংঘাত এখন একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই উদ্বেগের মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখছেন বাস্তচ্যুত লেবানিজরা। তাদের ভাগ্য হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে পাঁচবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কামেল মরু ও তার স্ত্রী মরিয়ম। এখন তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। ইসরাঈল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যকার সংঘর্ষের খবরের ওপরই এখন তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে। কেননা, সীমান্তের উত্তেজনা এখন সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই দম্পতির ঘরে তিন সন্তানই বিদেশে থাকেন। সম্প্রতি সীমান্ত থেকে মাত্র কিলোমিটার দূরে তাদের গ্রামে ইয়োহমোরে ফিরে এসেছিলেন। লেবাননের আশেপাশের অন্য কোথাও তাদের বন্ধুরা রয়েছেন।
পেশায় একজন শিক্ষাবিদ ম্রো। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন।’
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনস ডিসপ্লেসমেন্ট ট্র্যাকিং ম্যাট্রিক্স-এর তথ্য মতে, এই সংঘাতে দক্ষিণ লেবাননে এক লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত বছর ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরাঈলে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে সীমান্তে নিয়মিত গুলি বিনিময় করছে ইসরাঈল এবং শক্তিশালী ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। তাদের দাবি, গাজায় যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এই হামলা করছে তারা। তবে দিন দিন সীমান্তের এই উত্তেজনা অঞ্চলটিতে একটি বৃহত্তর যুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই আশঙ্কা কমার কোনো লক্ষণ নেই। দশম মাসে এসে গাজার এই সংঘাত লেবাননেও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে হিজবুল্লাহর সঙ্গে পুরনো সংঘর্ষে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল ইসরাঈল।
পাঁচ বছর ধরে লেবাননে অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে। বর্তমান সংঘাত শুরু হওয়ার আগেই দেশটির জনগণ মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছিল। অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে নতুন করে আবির্ভাব হওয়া সীমান্ত সংঘাত তাদের জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে ঠেকেছে। মরিয়ম বলেন, ‘এর সবই আপনাকে প্রভাবিত করে। আপনার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা এমনভাবে প্রভাবিত হয়ে এই যে স্নায়ুকে শান্ত রাখার জন্য আমি ঔষধ সেবন শুরু করেছি।’ ইসরাঈল দেশটির বাস্তুচ্যুতদের সরকারি-অর্থায়নে আবাসনে রাখলেও লেবাননের বাস্তুচ্যুতদের জন্য এরকম কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি লেবানিজ সরকার। তাই তাদের জন্য দেশটির অপ্রশস্ত পাবলিক স্কুল বা পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে থাকার মতো অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
সপরিবারের আশ্রয় চেয়েছিলেন ওয়াফা ইউসুফ আল-দারউইশ। ইসরাঈলি সীমান্তবর্তী ধ্রায়া গ্রাম থেকে তিনি তার বোনের সঙ্গে থাকতে টাইরেতে পালিয়ে যান। টাইরে একটি দক্ষিণ শহর যেটি সংঘর্ষের সময় বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল। তিনি রয়টার্সকে জানান, ‘আমরা আমাদের গ্রামে ছিলাম। স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করছিলাম এবং আমাদের ওপর একটি যুদ্ধ নেমে আসে।’ দারবিশ সেখানে কৃষিকাজ করতেন। জলপাই তেলের ক্যান উৎপাদন ও বিক্রি করতেন। তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধ লেবানিজরা নিজের ঘরবাড়ি ও প্রতিবেশী এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত করেছে। এমনকি তারা এখন ভরণপোষণের মতো মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত। এই করুণাবস্থাকে ‘একটি নির্মম ট্র্যাজেডি’ বলে বর্ণনা করেছেন দারবিশ। এমন অবস্থায় ভবিষ্যত তাদেরকে কোন অবস্থানে নিয়ে যায়, এটাই তাদের চিন্তার বিষয়।
মন্তব্য করুন