প্রাথমিকভাবে কোপাইলট টুলটি প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরীক্ষিত হবে। মাইক্রোসফটের তথ্য অনুসারে, এটি ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে দ্রুত কনটেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করবে। যা তাদের অনেক সময় বাঁচাবে।
গত বৃহস্পতিবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) সবার জন্য আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে মাইক্রোসফট নতুন এক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। ঘোষণাটির পর মাইক্রোসফটের শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি সংস্থাটি তাদের মাইক্রোসফট অফিস ৩৬৫-কে আরও উন্নত করতে ‘কোপাইলট’ নামের একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফিচার নিয়ে আসছে যা ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট এবং আউটলুকের মতো জনপ্রিয় প্রোগ্রামগুলোতে একসাথে চলবে। কোপাইলটের এই ফিচারটি ছাড়াও মাইক্রোসফট নতুন আরেকটি ‘বিজনেস চ্যাট’ ফিচারও প্রদর্শন করেছে যা ব্যবহারকারীর কমান্ডের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন থেকে ডেটা সংগ্রহ করে বিভিন্ন কাজ করতে সক্ষম।
মাইক্রোসফটের বর্তমান সিইও সত্য নাদেলা অনলাইন পেজেন্টেশনের সময় জানান, ‘আমরা মনে করি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই নতুন যুগ আমাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির নতুন স্তরের দিকে নিয়ে যাবে।’
ইদানিংকালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক স্টার্টআপগুলোয় বেশ কিছু ধারাবাহিক উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছোট-বড় সংস্থাগুলো এক ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে। মাইক্রোসফট, চ্যাটজিপিটি-এর নির্মাতা ওপেনএআই এর কাছে প্রায় ২ বিলিয়ন অর্থ বিনিয়োগ করেছে। যার ফলে তারা বর্তমান প্রতিযোগিতায় অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট এই প্রতিযোগিতায় সামনের সারিতে রয়েছে।
মাইক্রোসফট এবং গুগল, উভয়ের প্রদর্শিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাগুলোর ক্ষমতা এবং বৈশিষ্ট্য অনেকাংশেই কাছাকাছি। এই মাসেই গুগল জি-মেইলের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফিচার ও ওয়ার্ড প্রসেসরের জন্য ‘ম্যাজিক ওয়ার্ল্ড’ ফিচারটি প্রদর্শন করেছে।
গত বছরে চ্যাটজিপিটি প্রকাশের পর থেকেই এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং অগ্রগতির মাত্রা যেমন বেড়েছে পাশাপাশি বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোর সম্ভাবনা চ্যাটবটগুলোর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে।
চ্যাটজিপিটি-এর মতো বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলো অতীতে প্রাপ্ত ডেটা থেকে শিখতে এবং নতুন কনটেন্ট তৈরি করতে সক্ষম। যার কারণে এই প্রযুক্তি আরও দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। মাইক্রোসফটের নতুন কোপাইলট ফিচারটিও এই নতুন মডেলের ওপর নির্মিত। মাইক্রোসফটের তথ্য অনুসারে, এটি পুরানো জিপিটি-৩.৫ মডেল এবং বিভিন্ন ব্যবসা ও অ্যাপ্লিকেশন ডেটার সমন্বয়ে তৈরি।
আরবিসি-এর বিশ্লেষক ঋষি জালুরিয়ার মতে, কোপাইলট ফিচারটি মাইক্রোসফট অফিসের ব্যবহার যেমন বাড়াবে তেমনি এটি মাইক্রোসফট এবং এর প্রতিযোগীদের মধ্যে একটি বড় ব্যবধান তৈরি করতে পারে।
এ মাসে মাইক্রোসফটের প্রধান আপডেটগুলোর মধ্যে একটি ছিল এক্সেলের জন্য। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এখন যে কেউ সাধারণ টেক্সট কমান্ডের মাধ্যমেই এই স্প্রেডশিট সফটওয়্যারের গাণিতিক নির্ণয় করতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনার সাধারণ টেক্সট নির্দেশের ওপর নির্ভর করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেকোনো ধরনের গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবে।
অন্যদিকে, গুগলের লাইভ নোট ফিচারের মতো, মাইক্রোসফটের কোপাইলটও ভার্চুয়াল মিটিং চলাকালীন সময়ে রিয়েল-টাইম সারাংশ সরবরাহ করতে পারে।
বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম্পিউটিং শক্তি এবং খরচের প্রয়োজন হয়। সংবাদ মাধমের সাথে জন ফ্রিডম্যানের (কর্পোরেট ভাইস প্রেসিডেন্ট, মাইক্রোসফট) সাক্ষাৎকারের সময় বলেন, মাইক্রোসফট খরচ কমাতে এবং তার ভাষার মডেলগুলোর গতি ও নির্ভুলতা ডেভেলপ করার জন্য কাজ করছে।
ফ্রিডম্যানের আরও জানান, মাইক্রোসফট মডেলগুলো এমনভাবে তৈরি করছে যেন সেগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হয়। তাছাড়া প্রযুক্তিটি সবার জন্য বিস্তৃতরূপে উন্মুক্ত করার আগে মাইক্রোসফট এর কিছু সামঞ্জস্য করবে। এর উত্তরগুলো সঠিক হয় কি না তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু গ্রাহকের সঙ্গে আগে কোপাইলট পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এটাও বলেছেন ‘বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোর ক্ষেত্রে একটি আশ্চর্যজনক বিষয় হলো এগুলো অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয় এবং বিভিন্ন ভুল করে।’
জন ফ্রিডম্যান মাইক্রোসফটের নতুন ‘বিজনেস চ্যাট’-কে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করছেন। কারণ এটি বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনজুড়ে কাজ পরিচালনা করার ক্ষমতা রাখে। যেমন, আপনি যদি একে বলেন, ‘আমরা আমাদের পণ্য বিষয়ক কৌশলটি কীভাবে আপডেট করেছি তা আমার দলকে জানান’, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি সব ই-মেইল, মিটিং এবং চ্যাট থ্রেড বিশ্লেষণ করে সেই উত্তর দিতে সক্ষম।
জন ফ্রিডম্যান মনে করেন, মানুষকে প্রায়শই তার নিজের তৈরি করা মেশিন এবং সিস্টেমগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয় কিন্তু বর্তমান লক্ষ্য হলো, এমন প্রযুক্তি তৈরি করা যা মানুষের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।
মন্তব্য করুন