আবুল কাসেম
৬ মার্চ ২০২৩, ১:৫৭ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

ছবি সংগৃহীত

আজকের এই ৭ মার্চ দিনটি বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক দিন। এই দিনে বাংলার মহা যুদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুত থাকার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ডাক দেন।

মুক্তিকামি মানুষদের যে কোনো সময় জাতিকে অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতে এই মহা ভাষনের মাধ্যমে স্পষ্ট করেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু তার এ ভাষণে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণে তিনি কেন মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে কী করতে হবে সব দিক নির্দেশনায়ই দিয়ে দেন। তার ওই ভাষণের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাতিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি…, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাক। ’ পাকিস্তানের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধু এ ভাষণ দেন।

স্বাধীনতার জন্য অদম্য স্পৃহা নিয়ে সংগ্রামরত মুক্তিকামী জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু সেদিন বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। ’ বঙ্গবন্ধুর ওই নির্দেশের পর ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের জন্য সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। ’ ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের এ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। তার এ ভাষণ ছিল জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশনা।

১৯৪৭ সালে ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেওয়া অসম পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসন-শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ধাপে ধাপে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এড়িয়ে চলা বাঙালি পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে আলাদা হতে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। বাঙালির এ স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন মাত্রাযুক্ত হয়। এর পরই ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির বিজয় অর্জিত হয়।

ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি এক অনন্য সাধারণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা অর্জনে যে গেরিলাযুদ্ধের প্রয়োজন তার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবেও স্বীকৃত। এটি বিশ্বে সর্বাধিকবার প্রচারিত অলিখিত ভাষণ। ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি বিশ্ব ঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) স্বীকৃতি দেয়।

 

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লটারিতে ১ লাখ ডলার জিতে নিলেন জামি হকিন্স

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ এবং নানান সুবিধা

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার বাতিলে আইন করছে পোল্যান্ড

কমলা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণায় বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি

হাসপাতালে মাহাথির মোহাম্মদ

কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করছেন রিয়েলেটর মুহিবুল হাসান চৌধুরী

পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মনে করেন ট্রাম্প

মটর সিটি ক্যারাম টুর্নামেন্ট ২০২৪- সম্পন্ন

ভবানীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদ-এর আত্মপ্রকাশ

১০

আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে বিলেতে আলোচনা ও কবিতা পাঠ

১১

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ড্রোন কিনছে ভারত

১২

আশাবাদী হওয়ার উপায়

১৩

ক্যান্সারের চিকিৎসা : সহজ ও কঠিন

১৪

ঢাবি শিক্ষক ছাড়া কি ভিসি হওয়া যায় না

১৫

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিন মার্কিন অর্থনীতিবিদ

১৬

মিশিগানে তিন দিনের প্রচারণায় কমলা হ্যারিস

১৭

মিশিগানে বিশ্ব সিলেট সম্মেলন-২০২৫ আয়োজনের উদ্যোগ

১৮

কমলা হ্যারিস এবং টিম ওয়ালজের সমর্থনে হ্যামট্রামিকে অফিস উদ্বোধন

১৯

পেনসিলভানিয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে কমলা

২০