আবুল কাসেম
৩১ অক্টোবর ২০২২, ৯:২২ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

গোলাপি মাসের ডাক ‘টুগেদার উই রাইজ’

গোলাপি মাসের ডাক ‘টুগেদার উই রাইজ’

স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস হিসেবে অক্টোবর মাস এখন ‘পিঙ্ক অক্টোবর’ হিসেবে পরিচিত। নারীর ক্যান্সারের ফলে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি হলো ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ। সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যায় বিশ্বে প্রতিবছর ২৩ লক্ষ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হন ও প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ নারীর প্রাণহানি ঘটে।

এর ফলে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার রোগটি এখন বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। স্তন ক্যান্সার যে শুধুই নারীর হয় এমন নয়, এটা পুরুষেরও হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের দি সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তথ্য অনুসারে আমেরিকায় প্রতি ১০০ জন স্তন ক্যান্সারের রোগীর মধ্যে ১ জন পুরুষ।

বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই রোগটি ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। তখন হয়তো আর কিছুই করার থাকে না।

দ্বিধা, সংকোচ ও সংস্কারের বেড়াজাল পেরিয়ে অনেক নারী এখনো বিষয়টি নিয়ে অকপট না। আজও নারীরা একেবারে কাছের মানুষটির সঙ্গেও নিজের লক্ষণগুলোর কথা সহজে বলতে পারেন না। অথচ স্তন ক্যানসারে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে জীবন বাঁচানো যায়।

তাই স্তন ক্যানসারে যেমন সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তেমনি প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও আবশ্যক। বিষয়গুলো নিয়ে লজ্জা-সংকোচ ভাঙার সময় এসেছে। কোনো লক্ষণ না থাকলেও ২০ বছর বয়সের পর থেকেই প্রতি মাসে নিজের স্তন পরীক্ষা করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

পারিবারিক পরিসরেই এ নিয়ম গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করা প্রয়োজন। ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্রতিবছর স্তনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও ভুলবেন না। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম, প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টার ঘুম, মা হলে দুই বছর পর্যন্ত সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো স্তন ক্যান্সার রুখে দিতে সাহায্য করে।

স্তনে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা কিংবা পরিবর্তন চোখে পড়লে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। স্তনবৃন্তের যেকোনো পরিবর্তন গুরুত্বসহকারে নিন, আপনজনের সঙ্গে কথা বলুন, চিকিৎসা নিন।

প্রতিরোধের চেষ্টা সত্ত্বেও ক্যানসার যদি হয়েও যায়, ভেঙে পড়ার কিছু নেই। ক্যানসারের সুচিকিৎসা রয়েছে। তবে সময় থাকতে চিকিৎসা শুরু করাটা জরুরি। ক্যানসারের চিকিৎসা দীর্ঘ এক যাত্রা।

এ যাত্রার শেষে ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছে ফিরতে হলে যাত্রার শুরুটা হতে হবে ঠিকঠাক। তাই স্তনের যেকোনো সমস্যা হলে চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করা চলবে না। ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। স্তনের স্বাভাবিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হলে অস্বাভাবিকতাগুলো সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব।

স্ব-পরীক্ষা এবং স্তন ক্যান্সারের সঠিক পদ্ধতিসমূহু সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে অন্তত একবার হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসাশাস্ত্রে স্তন ক্যানসার বলতে স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়াকে বোঝায়।

কালক্রমে এই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হলে রক্তনালির লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। স্তন ক্যানসার হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ বিশেষজ্ঞরা আজও খুঁজে পাননি।

তবে সন্তানদের বুকের দুধ না খাওয়ানো মায়েদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে তারা মনে করছেন। এ ছাড়া বংশগত বা হরমোনজনিত কারণে, অতিরিক্ত ওজন থাকলে, বেশি বয়সে বিয়ে করা, ৩০ বছরের পর নারীদের প্রথম বাচ্চা নেওয়া, বারো বছরের আগে ঋতুস্রাব হওয়া এবং দেরিতে মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হওয়াকেও ক্যানসারের কারণ বলে গণ্য করা হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোনের ইনজেকশন নেওয়া, ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া, ডায়েটে শাকসবজি ও ফলমূল কম রাখা, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা প্রিজারভেটিভ খাবার খাওয়ার অভ্যাস, কৃত্রিম মিষ্টি ও রংযুক্ত খাবার খাওয়া, অ্যালুমিনিয়াম বেজড উপাদান সমৃদ্ধ ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করা, দীর্ঘদিন এয়ার ফ্রেশনার, কীটনাশক, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিকস, ডিওডোরেন্ট এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে থাকাকে চিকিৎসকরা স্তন ক্যানসারের কারণ বলে মনে করছেন।

শরীরে স্তন ক্যানসার বাসা বাঁধলে আপনার মধ্যে এর কিছু লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যাবে। এগুলো হলো স্তন বা বগলে চাকা বা দানা দেখা দেওয়া, স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া বা চামড়া মোটা হওয়া, নিপল বা স্তনের বোঁটা ভেতরে দেবে যাওয়া, নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া ইত্যাদি।

এসব লক্ষণ আপনার শরীরে দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শরীরে ক্যানসার আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য করাতে পারেন মেমোগ্রাম, স্তন এবং বগলের আলট্রাসনোগ্রাম, এফএনএসি, কোর বায়োপসি বা ট্রুকাট বায়োপসি এবং হিস্টোপ্যাথলজির মতো পরীক্ষাগুলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৮ জনে ১ জন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিরোধের মাধ্যমে ৫০ শতাংশই নিরাময়যোগ্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঝুঁকিতে থাকা নারীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, ২০ বছর বয়স থেকেই নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা এবং ৩৫ বছরের বেশি বয়সের নারীরা ম্যামোগ্রাফিক স্ক্রিনিং করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

গোলাপি মাস হিসেবে পরিচিত অক্টোবর আমাদেরকে নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত এই ক্যান্সার প্রতিরোধে জাগ্রত হওয়ার বার্তা প্রদান করে। আমাদের উচিত সেই বার্তাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা। আমরা সচেতন হলেই স্তন ক্যানসার হতে পরিত্রাণ পেতে পারি।

(হাজেরা পারভীন: সহ সম্পাদক, বাংলা সংবাদ)

আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লুর প্রকোপ বাড়ছে: সিডিসি

 

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এমএসইউ’র সাবেক ট্রাস্টি জোয়েল ফার্গুসন মারা গেছেন

২৬ অক্টোবর মিশিগান আসছেন কমলা হ্যারিস

কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে কমলার জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান

আসামের ১৯৭১ সালের আগে আসা অভিবাসীদের নাগরিকত্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বড় রায়

সাফিয়ার ফ্যাশন যাত্রা: স্বপ্ন থেকে সফলতা

ওয়ারেন কমিউনিটি লিডারশিপ সম্মাননায় ভূষিত হলেন কবির সুমন

লটারিতে ১ লাখ ডলার জিতে নিলেন জামি হকিন্স

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ এবং নানান সুবিধা

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার বাতিলে আইন করছে পোল্যান্ড

১০

কমলা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণায় বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি

১১

হাসপাতালে মাহাথির মোহাম্মদ

১২

কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করছেন রিয়েলেটর মুহিবুল হাসান চৌধুরী

১৩

পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মনে করেন ট্রাম্প

১৪

মটর সিটি ক্যারাম টুর্নামেন্ট ২০২৪- সম্পন্ন

১৫

ভবানীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদ-এর আত্মপ্রকাশ

১৬

আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে বিলেতে আলোচনা ও কবিতা পাঠ

১৭

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ড্রোন কিনছে ভারত

১৮

আশাবাদী হওয়ার উপায়

১৯

ক্যান্সারের চিকিৎসা : সহজ ও কঠিন

২০