সাম্প্রতিক সময়ে সাউথ-ওয়েস্ট (দক্ষিণ-পশ্চিম) ডেট্রয়েটের চ্যাডসি কনডন নেবারহুডের রাস্তার ধারে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত বিনোদন এলাকা বিনিয়াক এবং ডিঙ্গেম্যান পার্ককে প্রায়ই ‘গোস্ট (ভূত) পার্ক’ হিসাবে উল্লেখ করা হত।
সাউথ-ওয়েস্ট ডেট্রয়েটের বাসিন্দা এবং এলাকার ইউনাইটেড ব্লক ক্লাব কাউন্সিলের সভাপতি এথেলিন ক্যারল বলেন, কয়েক বছর আগেও পার্ক দুটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
ক্যারল আরও বলেন ‘অনেকদিন ধরে এখানে (পার্কে) ঘাস কাটা হত না। এমনকি আগাছা পরিষ্কার করাও হত না। পাথর, ময়লা ও বাতিল টায়ার পড়ে থাকতে দেখা যেত। কোন বেড়া বা সীমানাও ছিল না। মোটকথা ওখানে কিছুই ছিল না। এখানকার মাঠে শিশুরা খেলাধুলাও করতে পারত না। এটা ছিল শুধুমাত্র ডার্টি এমপ্টি ওপেন স্পেস (নোংরা খালি খোলা জায়গা)।’
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার পরে ডেট্রয়েট শহরের কির্কউড স্ট্রিট এবং ব্র্যাডেন স্ট্রিটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বিনিয়াক পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ বন্ধ করে দেওয়া শুরু হয়। ২০১০ সালের গোড়ার দিকে পার্কটি ডেট্রয়েট পাবলিক স্কুল ডিস্ট্রিক্টের কাছে (বর্তমানে ডেট্রয়েট পাবলিক স্কুল কমিউনিটি ডিস্ট্রিক্ট) বিক্রি করার পর মুঙ্গের এলিমেন্টারি এবং মিডল স্কুলের সংলগ্ন ডিঙ্গেম্যান পার্কটি বেকায়দায় পড়ে যায়। যাই হোক, গত কয়েক বছরে বিনিয়াক পার্ক অনেক উন্নত হয়েছে। ডেট্রয়েট শহর আবার এ পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করছে। এখানকার ঘাস কাটা হচ্ছে এবং অন্যান্য সংস্কারমূলক কাজ চলছে। তারপরও ডিঙ্গেম্যান এখনও আগাছায় ভুগছে, এবং দুটি পার্কেই শিশুদের জন্য খেলার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। তবে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ চলছে।
পার্ক দুটির আশেপাশের নেবারহুড গ্রুপস এবং বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ব্রিজিং কমিউনিটিস ( একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যেটি চ্যাডসি কনডন নেবারহুড-এ কাজ করে) পার্ক দুটিকে সংযুক্ত করার জন্য একটি নতুন গ্রিনওয়ে ইন্সটলের কাজ শুরু করছে। তাছাড়া এ প্রকল্পটির আওতায় এখন একটি নতুন পকেট পার্ক রয়েছে যা জুন মাসে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
ক্যারল আরও জানান, আশেপাশের নেবারহুড অনেকদিন ধরেই মানসম্পন্ন বিনোদন কেন্দ্রের অভাবে ভুগছে। তারা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
ক্যারল বলেন ‘আমি ডিকুইন্ড্রে কাটে গিয়েছি, এবং আমি মনে করি গ্রিনওয়ে আশেপাশের নেবারহুডকে সংযুক্ত করার জন্য যথার্থ সমাধান৷ সেখানে আমি অনেক অগ্রগতি দেখেছি, তাই আমি মনে করি এটি দুর্দান্ত একটি কাজ হতে চলেছে।’
প্যাথ টু গ্রিনওয়ে
ডেট্রয়েটের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভোকেটস এর নিউ গ্রিনওয়ে এবং পকেট পার্ক স্থাপনের জন্য চ্যাডসি কনডন-এর ২০১৯ প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান চলমান রয়েছে।
কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাডভোকেটস এর সদস্য ব্রিজিং কমিউনিটি, বিভিন্ন অংশগ্রহণমূলক কমিউনিটি মিটিং, ফোকাস গ্রুপ এবং সমীক্ষার মাধ্যমে নেবারহুডস এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে প্ল্যানটি তৈরি করেছে।
প্ল্যানটির প্রক্রিয়া চলাকালীন চিহ্নিত তিনটি সমস্যার মধ্যে পাবলিক প্লেস শীর্ষে রয়েছে। পাবলিক প্লেস এর অভাব পিতামাতার জন্য বিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে কারণ বহুসংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠা শিশু এবং কিশোরদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এটি একটি অন্তরায়।
ব্রিজিং কমিউনিটির বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক ফিলিস এডওয়ার্ডস বলেন, গ্রিনওয়ে প্রকল্পটি চালু করার ক্ষেত্রেও ব্লাইট একটি প্রেরণা ছিল।
‘লোকেরা সেখানে (ডিঙ্গেম্যান) পার্কে অবৈধ ডাম্পিং করে আসছিল। তাই আমরা কিভাবে সবুজায়নের মাধ্যমে ডাম্পিং বন্ধ করা যায় সেই উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।’
অন্যান্য নেবারহুড এবং কমিউনিটির সাথে কাজ করা যেমন ডিঙ্গেম্যান পার্কের অ্যাডভোকেটস, ব্রিজিং কমিউনিটি বিনোদন স্পট এবং আশেপাশের কমিউনিটি পরিষ্কার করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
প্রকল্পটির জন্য ১৫০,০০০ ডলার ক্রেজ ইনোভেটিভ প্রজেক্ট: ডেট্রয়েট (কেআইপি: ডি) অনুমোদিত হয়।
তাছাড়া গ্রিনওয়ে ইন্সটলেশনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি ইএসপিএন রিপ্লের মাধ্যমে ১০,০০০ ডলার লোকাল ইনিশিয়েটিভস সাপোর্ট কর্পোরেশন (এলআইএসসি) প্লানের জন্য ডোনেশন শুরু করেছে। প্রত্যাশিত জো লুই গ্রিনওয়ের জন্য প্রথম পর্ব এবং গেটওয়ে পার্কটি বিয়েনিক পার্ক থেকে প্রায় এক মাইল দূরে ওয়ারেন অ্যাভিনিউয়ের বাইরে নির্মিত হচ্ছে।
চ্যাডসি কনডনের জন্য পকেট পার্ক
ব্র্যাডেন স্ট্রিট গ্রিনওয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। তবে ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে নতুন পকেট পার্কটি জুন মাসে খোলা হয়েছে।
গত ২৩ জুন নতুন পকেট পার্কের উদ্বোধনের জন্য একটি ফিতা কাটা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। পরের দিন, ২৪ জুন, বিকাল ৩ থেকে ৬ টা পর্যন্ত বিদায়ী ব্রিজিং কমিউনিটির ডিরেক্টর ফিলিস এডওয়ার্ডসের সৌজন্যে বৃহত্তর জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মোটামুটি এক একর পার্ক, যার নামকরণ এখনও করা হয়নি, ৫৬৯৭ ব্র্যাডেন স্ট্রিটে ট্রেইলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হবে। ব্রিজিং কমিউনিটি ডেট্রয়েট ল্যান্ড ব্যাঙ্কের সাথে রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির মাধ্যমে প্রায় এক একর পকেট পার্কের জন্য জমি সুরক্ষিত করেছে।
নতুন পার্কের পরিকল্পনা প্রায় এক বছর আগে শুরু হয় এবং ডেট্রয়েটে অবস্থিত একটি মালিকানাধীন ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার ফার্ম জেআইএমএ স্টুডিওর উজুজি ডেভিস উইলিয়ামস তত্ত্বাবধান করছিল।
গ্রিনওয়ে এবং পকেট পার্কের বাইরে আরও কিছু সুখবর রয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিনিয়াক পার্কে সংস্কারের অংশ হিসেবে ডেট্রয়েট পার্কস এন্ড রিক্রিয়েশন সেন্টারের সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
ব্রিজিং কমিউনিটির ডিঙ্গেম্যান পার্কে একটি মিনি-পিচ ফুটবল মাঠ এবং বাস্কেটবল কোর্ট আনার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ।
‘আমরা দেখানোর চেষ্টা করছি যে ডেট্রয়েট কৌশলগত নেবারহুড তহবিলের অংশ নয়। যার ফলে পার্ক দুটিকে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং কোন যত্ন নেওয়া হয়নি। এই পার্ক দুটি খুব রেসিলিয়েন্ট (স্থিতিস্থাপক) ছিল। সেজন্য আমরা কমিউনিটি স্পেস হিসেবে রিভারওয়াক তৈরি করেছি।’
ফটো ক্রেডিট: নিক হেগেন
উল্লেখ্য, রেসিলিয়েন্ট নেবারহুডস হল একটি রিপোর্টিং এবং এনগেজমেন্ট সিরিজ যা পরীক্ষা করে কিভাবে ডেট্রয়েটের নেবারহুড এবং কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সংস্থাগুলো লোকাল এলাকাকে শক্তিশালী করতে একসঙ্গে কাজ করছে। এটি মূলত মডেল ডি মিডিয়ার তৈরি এবং প্রকাশিত। ক্রেসগে ফাউন্ডেশনের সাপোর্টে একটি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নিউ মিশিগান মিডিয়া সংবাদপত্রে পুণঃমুদ্রিত হয়ে থাকে।
ডেভিড স্যান্ডস একজন ডেট্রয়েট-ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স লেখক। তিনি একজন সহকারী সম্পাদক হিসেবে হাফিংটন পোস্ট ডেট্রয়েটের সংবাদ কভার করেছেন এবং পরিবহন সংবাদ সাইট মোড শিফটের স্টাফ লেখক হিসেবে কাজ করেছেন। টুইটারে তাকে অনুসরণ করুন @dsandsdetroit.
রেসিলিয়েন্ট নেবারহুডস নিয়ে আরও পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মন্তব্য করুন