যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা’ দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম সরিয়ে ফেলতে চান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক বন্দিমুক্তি চুক্তির অংশ হিসেবে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকে এ ঘোষণা আসার কিছু সময় পর কিউবা সে দেশে নানা অপরাধে আটক ৫৫৩ কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। আশা করা হচ্ছে, এই বন্দীদের মধ্যে চার বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরাও থাকবেন।
১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো কিউবাকে ‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা’ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন সেই সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় তালিকা থেকে দ্বীপরাষ্ট্রটির নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ভেনেজুয়েলার নেতা নিকোলা মাদুরোকে সহায়তা করার জন্য কমিউনিস্ট দেশ কিউবার সমালোচনা করেন এবং পুনরায় দেশটিকে তালিকায় যুক্ত করেন। কিউবা বলেছে, সীমিত পরিসরে হলেও বাইডেনের এ উদ্যোগ সঠিক পথের দিকে একটি পদক্ষেপ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এ সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট কিছু জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে। এসব ব্যবস্থা অন্য আরও অনেক কিছুর সঙ্গে কিউবার অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি করেছে, সেই সঙ্গে জনগণের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলাদা আরেকটি বিবৃতিতে বলেছে, ধীরে ধীরে কয়েক শ বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে কোন কোন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ২০২১ সালে কিউবার অর্থনীতিতে ধস নামার পর দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পেতে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে তাঁরাও থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা’ দেশের তালিকায় কিউবা ছাড়াও উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া ও ইরানের নাম আছে। এখন কিউবাকে এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু বন্দিমুক্তির দুয়ারই খোলেনি, বরং এটিকে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথেও এক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়ে সংলাপের পথও প্রশস্ত করতে পারে।
কিউবার ডুবন্ত অর্থনীতিকে বাঁচাতেও এ পদক্ষেপ সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। সন্ত্রাসবাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকায় সে দেশে কয়েকটি বড় ব্যাংক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীকে বৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।গতকাল হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, বাইডেন কংগ্রেসকে কিউবা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা জানাবেন। পরিকল্পনায় ট্রাম্পের আমলে কিউবার কয়েকজন নাগরিকের ওপর আরোপ করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথাও আছে। কিউবায় বাজেয়াপ্ত হওয়া ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদের মালিকানা দাবি করার ক্ষমতাও বাইডেন সীমিত করার পরিকল্পনা করেছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়। তবে বাইডেনের এ সিদ্ধান্ত ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পাল্টে যাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। তিনি নিজের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন মার্কো রুবিওকে। রুবিও কিউবায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে কাজ করেছেন।
রুবিও কিউবান বংশোদ্ভূত আমেরিকান। ১৯৫০–এর দশকে কিউবায় যখন কমিউনিস্ট বিপ্লব ঘটে, সে সময় রুবিওর পরিবার কিউবা ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ওই বিপ্লবের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতায় আসেন ফিদেল কাস্ত্রো।
মন্তব্য করুন