কানাডা পারে, যুক্তরাষ্ট্র পারে না!

পশ্চিমের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের কর্মপ্রবাহ সামাল দেয়ার জন্য জনশক্তি ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। সমাধান হিসেবে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করার কথা থাকলেও এ নিয়ে কোনো অগগতি নেই। ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ে গড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক ইমিগ্রেশনের ঘোষণা দেয়ার কথা বলে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতার দুই বছর হয়ে গেলেও ইমিগ্রেশন নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে শুধু ইমগ্রেশন কমিউনিটি নয়, অসন্তুষ বিরাজ করছে নানা মহলে।

আগামী এক দশকের কম সময়ের মধ্যে মার্কিন সমাজে বয়স্ক লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ‘বেবি বুমার্স’ বলে যাদের বলা হচ্ছে, তাদের সবাই ২০৩০ সালে ৬৫ বছর পেরুনো বয়সে অবসরে চলে যাবেন। ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর দেয়া তথ্য মতে, ২০৩০ সালে প্রতি পাঁচজন আমেরিকানের একজন অবসরে চলে যাবে। ২০৩৪ সালে আমেরিকায় কর্মক্ষম জনসংখ্যার চেয়ে বয়স্ক লোকজনের সংখ্যা বেশি হবে। একটি দেশের জনমিশ্রণের জন্য এ বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ এ সমস্যাকে সামাল দেয়ার জন্য আগাম প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমেরিকা এ নিয়ে উদাসীন না হলেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণে সফল হচ্ছে না।

আমেরিকার নিকটতম প্রতিবেশী দেশ কানাডা। এরইমধ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ নতুন ইমিগ্র্যান্ট গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে। কানাডা প্রায় দশগুণ বড় দেশ, ভবিষ্যৎ শ্রমশক্তির জন্য কয়েকগুণ বেশি লোকজনের প্রয়োজন। আইনানুগ ইমিগ্রেশনের প্রবাহ ছাড়া এ সংকটের সহজ কোনো সমাধান নেই। আমেরিকার শ্রমশক্তিতে শুধু দক্ষ নয়; অদক্ষ, অল্প দক্ষ শ্রমিক বা কর্মিসংকট এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণ করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে একটি মানবিক ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

এ নিয়ে তিনি কংগ্রেসকে আইন প্রণয়নের তাগিদ দিলেও ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ইমিগ্রেশন নিয়ে আশাবাদী কোনো কাজই হয়নি। উপরন্তু সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। দুই বছরে ২০ লাখের বেশি নথিপত্রহীন অভিবাসীর প্রবেশ ঘটেছে। এখনও প্রতিদিন গড়ে ৭০০ জন আমেরিকার দক্ষিণের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছে। দুই বছরে প্রথমবারের মতো সীমান্ত পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার জন্য গত সপ্তাহান্তে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সীমান্তের এল পাসো শহর পরিদর্শন করেন।

ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের শেষ অধিবেশন ছিল ডিসেম্বরে। বিদেশি উদ্যোক্তা, দক্ষ কর্মী, মাইক্রোচিপ প্রস্তুতকারী, কৃষি শ্রমিকদের ইমিগ্রেশন দেয়ার একটি প্রস্তাব আইনে পরিণত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত ভোট প্রাপ্তিতে ব্যর্থ হয়। ৩০ জন রিপাবলিকান আইন প্রণেতার সমর্থনে ফার্ম ওয়ার্কার মর্ডানাইজ অ্যাক্ট নামে একটি আইন প্রস্তাব কংগ্রেসে পাস হলেও তা এখনও সিনেটে উপস্থাপনই করা হয়নি।

মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সিদ্ধান্তহীনতার এ সময়ে কানাডার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ইমিগ্রেশন নিয়ে একমত পোষণ করেছে। জাস্টিন ট্রুডোর ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি এবং রক্ষণশীল বিরোধী দল উভয়েই নিজেদের ইমিগ্র্যান্টবান্ধব বলে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছে। কানাডায় বাইরের দেশ থেকে লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য নতুন নতুন পদ্বতি গ্রহণ করছে। এতে করে শুধু দক্ষ জনশক্তিই নয়, সব ধরনের ইমিগ্র্যান্ট কানাডাকে সমৃদ্ধ করছে এবং আগামী দিনে কানাডার জন্য এ পদক্ষেপ অনেক ভালো ফল নিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান জোই লোফগ্রেন গত কংগ্রেসে জুডিশিয়ারি কমিটির ইমিগ্রেশন বিষয়ক সাবকমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। কর্মসংস্থানভিত্তিক ভিসা বৃদ্ধির জন্য তিনি দুটি আইন প্রস্তাব কংগ্রেসে উপস্থাপন করলেও তা পাস হয়নি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বদলে গেছে। রিপাবলিকান দল স্পিকার নির্বাচনে ঐকমত্যে পৌঁছতেই শত বছরের ইতিহাস গড়েছে বিরোধে জড়িয়ে। এ কংগ্রেসে ইমিগ্রেশন নিয়ে কিছু হবে, এমন চিন্তাই আপাতত করা দুরূহ হয়ে উঠেছে।

আরো পড়ুন: ট্যাক্স রিটার্ন প্রক্রিয়ায় এবার রয়েছে বেশ কিছু পরিবর্তন

১৯৯০ সালের পর আমেরিকায় বৈধ ইমিগ্রেশনের জন্য কোনো আইন প্রণয়ন হয়নি। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের প্রবাহ বেড়েছে, কখনো থমকে দাঁড়িয়েছে। এসব সামাল দিতেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন আইনপ্রণেতারা। কেউ কেউ আমেরিকার ইমিগ্রেশনের জন্য ধর্মীয় পরিচয়, গাত্র বর্ণকে সামনে নিয়ে এসেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। আধুনিক বিশ্ববাস্তবাতয়ায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনীতিরসমূহ চাঞ্চল্যে যখন উন্নত দেশগুলো সারাবিশ্বের লোকজনকে আকৃষ্ট করার উপায় খোঁজ করছে, তখন আমেরিকা ইমিগ্রেশন ও ইমিগ্র্যান্টদের একটি স্পর্শকাতর বিতর্কের মধ্যে আটকে রেখেছে। এ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে, কিন্তু ইমিগ্র্যান্টদের নিয়ে সাফল্যের দেশে ইমিগ্রেশন বাস্তবসম্মত কোনো আইনপ্রণয়ন করা হচ্ছে না।

ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায়সম্মত, কার্যকর এবং বৈধ ইমিগ্রেশন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছে। ইমিগ্রেশন সুবিধা বৃদ্ধি করাসহ ইমিগ্রেশন কমিউনিটির আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে কাজ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ন্যায্য ও মর্যাদাসম্পন্ন উপায়ে ব্যক্তি ও পারিবারিক ইমিগ্রেশন সুবিধার জন্য কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিশীল।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার দুর্গাপূজায় ইলিশ না পাঠানোর সিদ্ধান্ত একদম ভালো লাগেনি: ফারুকী

তমা মির্জার সঙ্গে প্রেম নেই: রায়হান রাফী

ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আসিফ নজরুল

আত্মহত্যা নিয়ে সালমান শাহর জন্মদিনে মুখ খুললেন স্ত্রী সামিরা

ইঙ্কস্টার পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে গুলি করা ব্যক্তির খোঁজ করছে

আমি মরে গেলে তুমি শহিদ মাতার সম্মান পাবে, মা!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে ধূম্রজাল

শেষ মিনিটের আত্মঘাতী গোলে পিএসজির জয়, সিটি-ইন্টার ড্র

‘সিআইডি’খ্যাত তামিল অভিনেত্রী শকুন্থলা প্রয়াত

পয়েন্ট খুইয়েও শীর্ষের আর্জেন্টিনা, অবনতি বাংলাদেশের

১০

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক হলেন ফাহমিদা খাতুন ও রাশেদ আল তিতুমীর

১১

‘৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ওরে ছাড়াই নেন, না হলে আরও মারবো’

১২

ঢাবির হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক চার

১৩

যুবককে পিটিয়ে হত্যার দায়ে, ঢাবির ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

১৪

ভারতকে হারানোর মজার, মজা নিতে দিন: রোহিত

১৫

‘অদ্ভুত সব শর্তে’ বয়সে বড় প্রেমিকাকে নিয়ে বিয়ে করলেন এনদ্রিক

১৬

বিমানবন্দরে যাত্রীর সঙ্গে অসদাচরণ, তিন রাজস্ব কর্মকর্তা বরখাস্ত

১৭

বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ আবার ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

১৮

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিতে বড় পতন, আগস্টে কমেছে ২৮ শতাংশ

১৯

শেয়ার কারসাজির দায়ে সাংবাদিক হাসিব হাসানকে কোটি টাকা জরিমানা

২০