মনির চৌধুরী আমেরিকার বাঙালি কমিউনিটিসহ সর্ব মহলে একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি ২০১৪ সাল থেকে শিকাগোতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের অনারারি কনস্যুলেটর হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি শিকাগোতে সেক্রেটারি অফ স্টেটের এডভাইজারি কমিটির মেম্বার ছিলেন। জড়িত ছিলেন এম্বাসির বিভিন্ন কার্যক্রমে। ১৯৯৭ সালে শেখ মুজিব ওয়ে এবং ১৯৯৮ সালে এফ আর খানের নামে রাস্তা তৈরিতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মনির চৌধুরীর বাড়ি কুলাউড়াতে। পিতা ছিলেন চা বাগানের ম্যানেজার। তিনি এক ছেলে এবং এক মেয়ের জনক। ছেলেমেয়ে দুজনই আমেরিকাই চাকুরীরত। ১৯৭৭ সালে পারিবারিক আয়োজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তিনি কৃষি বিষয়ে ঢাকাতে পড়ার পর চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বেশ কিছুদিন যাবৎ দেশে সরকারি চাকরি করেছেন। ছিলেন এগ্রিকালচার এসডিও (মহাকুমা কৃষি কর্মকর্তা)। আমেরিকা আসার আগে তিনি সিলেটে হর্টিকালচার সেন্টারের সুপারিনটেনডেন্টের কাজ করেছেন।
বাংলাদেশে তার একটি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছিল বলে তিনি জানান । ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের আগে দু’বছর জেল খেটেছেন এবং দুই হাজার টাকা জরিমানা হয়েছিল। সে কথা স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “আমি ছিলাম ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে পুঁজি করে রাজনীতিতে আসা। বঙ্গবন্ধু আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। “আমেরিকাতে আসেন ১৯৮৮ সালে। এর আগে বাংলাদেশ থেকে তিনি একটি ট্রেনিং এর কাজে লন্ডনে আসেন। শিকাগো শহরে আসার পরে তার শহরটি ভালো লেগে যায়। পরবর্তীতে তিনি এক বন্ধুর সাহায্য একটি ফ্রাঞ্চাইজি ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করেন। সেখান থেকে আমেরিকায় থেকে যাওয়া।
“শিকাগোতে শেখ মুজিব ওয়ে, এফআর খান ওয়ে, বাংলাদেশ প্যারেড -এগুলোর স্বপ্নদ্রষ্টা যদিও শামসুল ইসলাম ছিল তবুও বাস্তবায়নে আমার অবদান ছিল সবথেকে বেশি। ১৯৯৭ সালে আমরা শিকাগোতে মোবাইল কনস্যুলেট অফিস শুরু করি। শেখ হাসিনা এটা অনুমোদন দিয়েছিলেন। তারপর থেকে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে কনস্যুলেট অফিস শুরু হয়। এটা আমাদেরই প্রচেষ্টার ফলাফল। তখন আমাদের রাষ্ট্রদূত ছিলেন শিহাব উদ্দিন সাহেব। এ ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সাহায্য করেন।” তিনি আরোও জানান। আমেরিকার বৃহৎ শহর গুলোর মধ্যে শিকাগো অন্যতম। এখানে অধিকাংশ বাংলাদেশী চাকুরী অথবা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে এসেছে। তাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজারের অধিক বাঙালি বসবাস করে শিকাগোতে। প্রথম দিকে আমেরিকাতে বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের গ্রেটার শিকাগো লেন (বিএজিসি) নামক একটা সংগঠন দাঁড় করান। সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করা। “মোবাইল কনস্যুলেট অফিস স্থাপনে সংস্থাটির ভূমিকা ছিল ব্যাপক। ১৯৫৭ সালে স্থাপন শেখ মুজিব ওয়ে এবং ১৯৯৮ সালে এফ আর খানের নামে রাস্তা তৈরিতেও ভূমিকা রাখে বিএজিসি । তিনি জানান, “আমি বঙ্গবন্ধু ওয়ে পুনরায় চালু করার জন্য শেখ হাসিনাকে দাওয়াত করি। তিনি আমার দাওয়াত রাখার জন্য ২০০১ সালে এখানে আসেন। দেশে গিয়ে হোক অথবা আমেরিকায় থেকে হোক তিনি দেশের জন্য কিছু করার কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি এখানে দলের কাজ চালিয়ে যাবার কথা বলেছিলেন। একইভাবে তিনি আমাকে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ওনারারি কনস্যুলেটরের দায়িত্ব প্রদান করেন। ২০১৪ সালের জুন থেকে কনস্যুলেটরের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। দায়িত্ব বর্ধিত করে এখন আগামী ২০২৭ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।”
শিকাগোতে বর্তমানে বিভিন্ন দেশের ৮৯ টি কনস্যুলেট অফিস আছে। তিনি গর্ব করে বলেন, “প্রত্যেকটা কনস্যুলেট অফিসের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান এবং আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছি বিভিন্ন সময়ে। অক্টোবর ২০২১ মুজিব বর্ষে এখানে বড় আয়োজন করি যেখানে ১৩৬ টা দেশের প্রতিনিধিসহ স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।”
বাংলাদেশি কনস্যুলেট অফিসের সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি থার্ড পার্টি এজেন্সি খোলার ব্যাপারে কথা বলবেন বলে জানান। তিনি বলেন, “আমি প্র্যাকটিক্যাল যে জিনিস মনে করছি, ওয়াশিংটন এবং নিউইয়র্কে ছাড়া বর্তমানে কোন স্টেটে সম্পূর্ণ কনসুলেট সার্ভিস দিতে পারছে না। বর্তমানে বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট চালু হয়েছে। এটি সবার জন্য ভালো। তবে মানুষের হয়রানি যদি এখান থেকে কমিয়ে আনা যায় তবে সেটা ভালো। আজকে ৮০ বছরের একজন বয়স্ক লোক অথবা একজন অসুস্থ বা প্যারালাইজ কেউ কিভাবে এম্বাসিতে গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রদান করবে -সেটি ভাববার বিষয়। কারণ কোন অবস্থাতে এটি সম্ভব নয়। বড় বড় শহর যেখানে বাংলাদেশী ঘনবসতি আছে সেখানে থার্ড পার্টি এজেন্সি দিয়ে দেওয়া উচিত যারা এসব সমস্যার সমাধান করে দেবে। এটা হলে মানুষের হয়রানি কমবে এবং আমি নতুন রাষ্ট্রদূত আসলে এই পরামর্শ দিব। আশা করি সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে।”
মন্তব্য করুন