জীবনে সফলতা বা প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য একাডেমিক বই পড়াই যথেষ্ট নয়। এ পড়ালেখার বাইরেও অনেক বিষয় বা স্কিল আছে যেগুলো না শিখলেই নয়। একটি কথা আছে, ‘হার্ডস্কিল ছাড়া চাকুরি পাওয়া যায় না, কিন্তু সফট স্কিল ছাড়া চাকরি ধরে রাখা যায় না। এ সফট স্কিলগুলো আমাদের চিন্তা এবং কর্মের জগত হয়ে অগোছালো। তাই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানই এমন কাউকে বেছে নিতে চায় যার হার্ড স্কিল বা টেকনিক্যাল দক্ষতার পাশাপাশি সফট স্কিলও রয়েছে। তাই, ক্যারিয়ারে সফলতা পেতে চাইলে সফট স্কিলের বিকল্প নেই। কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এমন কিছু সফট স্কিল সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক–
নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা
একজন দক্ষ কর্মীর অবশ্যই নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা থাকে। এমন নয় যে, পেশাগত জীবনে পা রেখেই আপনি নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। তবে ভবিষ্যতে আপনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না সে বিষয়টি নিয়োগের সময়ই যাচাই করতে চান নিয়োগকারীরা। একজন কর্মীর যদি নেতৃত্বদানের ক্ষমতা না থাকে, তবে তিনি কোনো টিম বা দল চালাতে পারবেন না। তাই, প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ উঁচু পদ বা সিদ্ধান্তে তাকে রাখা হবে না। পেশাগত জীবনে যদি সফল হতে চান তবে এই দক্ষতা তৈরি করে ফেলুন।
বিনয়ী হওয়া
ব্যক্তিগত এই বৈশিষ্ট্যটি পেশাগত জীবনেও খুবই প্রয়োজনীয়। একসঙ্গে কাজ করতে গেলে দলের সবার সঙ্গে ভদ্রতা ও নম্রতা বজায় রেখে কথা বলা উচিত। এতে দলে যেমন সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তেমনই অন্যের কাছ থেকেও অনেককিছু শেখার সুযোগ মিলবে। নেতৃত্ব প্রদান করা কিংবা দলগত কাজ করা–উভয় ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োজনীয়।
পাবলিক স্পিকিং
একটি কথা আছে, অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুর চেয়েও পাবলিক স্পিকিংকে বেশি ভয় পায়। মনে রাখবেন ভালো স্পিকার একজন ন্যাচারাল লিডার। তিনি নতুন কোনো জায়গায়ও খুব কম সময়ের মধ্যেই নিজের অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেন। আপনি যদি পাবলিক স্পিকিংয়ে কম্ফোর্টেবল না হন, তবে ক্যারিয়ার উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। Warren Buffett-এর মতে, পাবলিক স্পিকিং কোয়ালিটি কোনো কর্মীর ৫০ শতাংশ ভ্যালু বৃদ্ধি করতে পারে। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন পাবলিক স্পিকিং সক্ষমতা ক্যারিয়ারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
যোগাযোগ দক্ষতা
পেশাগত জীবনে আপনি যাই হোন না কেন, প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে যোগাযোগ দক্ষতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহক, সহকর্মী, নিয়োগকর্তা, অন্য প্রতিষ্ঠানের লোকজনসহ অনেকের সঙ্গেই আপনাকে কাজের প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে হবে। একজন দক্ষ কর্মী হতে চাইলে মৌখিক ও লিখিত– দুই ধরনের যোগাযোগেই ভালো হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ, আপনি যখন কিছু বলবেন তখন অপরপক্ষ যেন তা সহজেই বুঝতে পারে। আবার ইমেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে সেটিও যেন সাবলীল ও সঠিক হয়।
দলগত কাজ করা
একজন কর্মীর টিমওয়ার্ক বা দলগত কাজের দক্ষতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা উচিত। ভালো যোগাযোগ দক্ষতা আর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে অবশ্যই আপনি দলগত কাজের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে নিজের সেরাটি দিতে সক্ষম হবেন। একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য দলগত কাজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তাই তারা এমন কর্মী চান যারা অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে কাজে সক্ষম।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কেবল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেও সমস্যার সমাধান খুঁজুন। সেগুলো জানান। এতে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। একজন দক্ষ কর্মী হতে চাইলে নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে। সম্ভাব্য যুক্তিসম্পন্ন সমাধানের উপায় বের করতে হবে।
সৃজনশীলতা
বর্তমানে অন্যের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে বাজারে টিকে থাকতে হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তাই কর্মী হিসেবে তারা এমন ব্যক্তিদের চান যাদের মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে। যারা নিজেদের আইডিয়া, ভাবনা বা পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। পেশাগত জীবনে এই দক্ষতাটি নিজেকে অন্যদের তুলনায় বেশি যোগ্য প্রমাণে প্রয়োজনীয়।
চাপের মধ্যে থেকে কাজ করার ক্ষমতা
কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ থাকবেই। এটিই বাস্তবতা। অনেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও এই দক্ষতার কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে। আপনাকে চাপের মধ্যে থেকেই নির্দিষ্ট সময়ে নিজের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। সময় মেনে কাজ করেন না–এমন কর্মীর কর্মক্ষেত্রে উন্নতি তো হয়ই না বরং চাকুরি টেকানোই কঠিন হয়ে পড়ে। দক্ষ কর্মী হতে চাইলে চাপ সামলে কাজ করার মানসিকতা রাখুন।
নেটওয়ার্কিং
বেশির ভাগ কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মী, ক্লায়েন্ট এবং গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে কার্যকরভাবে নেটওয়ার্ক করতে সক্ষম হওয়া এবং শক্তিশালী পেশাদার সম্পর্ক গড়ে তোলা। এসব বিষয়ের পাশাপাশি সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, যেকোনো পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলা ইত্যাদিও পেশাগত জীবনে প্রয়োজনীয় সফট স্কিল। যেসব দক্ষতা ইতোমধ্যে আপনার রয়েছে সেগুলোয় কোনো দুর্বলতা থাকলে তা খুঁজে বের করে উন্নতির চেষ্টা করুন, তাহলে কাজের পারফরম্যান্সও বৃদ্ধি হবে। কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার লড়াইয়ে এই দক্ষতাগুলো আপনাকে এগিয়ে রাখবে কয়েক ধাপ।
মন্তব্য করুন