ফুটবল দলের ১১ জনের মধ্যে গোলরক্ষকদের কথা খুব একটা সামনে আসে না। সামনে আসে না তাদের সুখ-দু:খ, আনন্দ-বেদনার কথা। এক সময় আর কেউ তাদেরকে মনেও করতে চায় না। অবহেলা অনাদরে তারা হারিয়ে যান ইতিহাসের পাতায়।
প্রজিত বড়ুয়া নামে আমাদের একজন ফুটবলার ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক এই গোল রক্ষককে সাধারণ মানুষতো বটেই, ফুটবল দুনিয়ার অনেকেই চিনেন না। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক ফুটবলার প্রজিত বড়ুয়াকে নিয়ে আমাদের এ সংখ্যার আয়োজন।
পুরো নাম প্রজিত বড়ুয়া। জন্ম ১৯৫৫ সালের ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করতেন। সেই টান থেকেই দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে স্কুল ফুটবলে নাম লেখান প্রজিত বড়ুয়া।
গোলরক্ষকের ভূমিকায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে পাড়া-মহল্লায়, জেলা-উপজেলায়।
দেশ স্বাধীন হবার পর পুরোদমে পাড়া-মহল্লা দাপিয়ে বেড়ান প্রজিত বড়ুয়া। নামের দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তারকা ফুটবলারদের নজরে আসেন। পেশাদার ফুটবলার হিসেবে প্রথম ডাক পড়ে ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামের ইস্পাহানি জুটমিলের হয়ে ফার্স্ট ডিভিশন খেলায়, খেলেন টোবাকোতেও।
তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি প্রজিত বড়ুয়াকে। একে একে মতিঝিলের দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, গেন্ডারিয়ার ইস্টার্ন ক্লাবের হাত ধরে পৌছে যান নন্দিত ফুটবল দল মোহামেডানে। ১ম বছরই দলের হয়ে খেলতে যান নেপালে। টানা দুবছর খেলেন মোহামেডানে।
বিআরটিসি’র তৎকালিন চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার খালেকুজ্জামানের আমন্ত্রণকে উপেক্ষা করতে পারেননি প্রজিত বড়ুয়া। যোগ দেন ঢাকার বিআরটিসি স্পোর্টিং ক্লাবে। সেখানে দীর্ঘদিন খেলার পর ডাক আসে রহমতগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবে। আর্থিক স্বচ্ছলতার কথা ভেবে যোগ দেন সেখানে। যদিও ইনজুরির কারনে রহমতগঞ্জের হয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেননি।
১৯৮৩ থেকে ৮৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন প্রজিত বড়ুয়া। জাতীয় দলের হয়ে ভারতে অনুষ্ঠিত ৪র্থ সাফ গেমস খেলেছেন, খেলেছেন থাইল্যান্ডেও।
সেই সময়ের আসলাম, টুটুল, চুন্নু, অলক, বাদল রায়, সালাম মুর্শিদীর মতো তারকা খেলোয়াড়দের কথা আজও তার মানসপটে ভেসে উঠে। ডিভি লটারি পেয়ে ২০১০ সালের ৭ মার্চ থেকে তিনি আমেরিকা প্রবাসী হন। বর্তমানে আমেরিকার মিশিগানে বসবাস করা এই ফুটবলার ব্যক্তিগত জীবনে ২ পুত্র সন্তানের জনক।
দেশের ফুটবল নিয়ে ভাবতে এখনো ভালো লাগে প্রজিত বড়ুয়ার। এখনো স্বপ্ন দেখেন দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনবে ফুটবলাররা।
৬৭ বছর বয়সের এই ফুটবলার বলেন, ৯০র দশক পর্যন্ত ফুটবলের স্বর্ণযুগ ছিলো। এরপর বাংলাদেশের ফুটবল আর মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি। ক্রিকেটকে যেভাবে প্রমোট করা হয়েছে সেই তুলনায় যদি অর্ধেকও ফুটবলের জন্য করা হতো তবে বাংলাদেশের ফুটবল অনেক এগিয়ে যেতো।
নতুন ফুটবলারদের জন্য প্রজিত বড়ুয়া বলেন, ফুটবলকে এগিয়ে নিতে চাইলে একে ভালোবাসতে হবে, সময় দিতে হবে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের জন্য খেলতে হবে। তবেই সফলতা আসবে।
মন্তব্য করুন