আবুল কাসেম
৬ জুলাই ২০২৩, ৬:২৪ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

হজ: ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনন্য উদাহরণ

আদি পিতা আদম (আ.)-এর দুই পুত্র কাবিল ও হাবিলের দেওয়া কুরবানি থেকেই কুরবানির ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। তারপর থেকে বিগত সব উম্মতের ওপর এটা জারি ছিল।

আমাদের ওপর যে কুরবানির নিয়ম নির্ধারিত হয়েছে, তা মূলত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)কে আল্লাহর রাহে কুরবানি দেওয়ার অনুসরণে ‘সুন্নাতে ইবরাহিমি’ হিসেবে চালু হয়েছে।

মক্কা নগরীর জনমানবহীন ‘মিনা’ প্রান্তরে আল্লাহর দুই আত্মনিবেদিত বান্দা ইবরাহিম ও ইসমাইল আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তুলনাহীন ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, বর্ষপরম্পরায় তারই স্মৃতিচারণ হচ্ছে ‘ঈদুল আজহা’ বা কুরবানির ঈদ। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রকৃষ্ট নমুনা এই কুরবানিতে প্রতীয়মান।

ঈদুল আজহার গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে যথেষ্ট তাকিদ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর কুরবানির পশুসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে’ (হজ ৩৬)।

আল্লাহ আরো বলেন, ‘আর আমরা তার (ইসমাইলের) পরিবর্তে জবেহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানি। আমরা এটিকে পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’ (ছাফফাত ১০৭-১০৮)।

আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে ছালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো’ (কাওছার ২)। কাফির-মুশরিকেরা তাদের দেব-দেবী এবং বিভিন্ন কবর ও বেদিতে পূজা দেয় এবং মূর্তির উদ্দেশে কুরবানি করে থাকে। তার প্রতিবাদস্বরূপ মুসলমানকে আল্লাহর জন্য সালাত আদায়ের ও তার উদ্দেশ্যে কুরবানি করার হুকুম দেওয়া হয়েছে।

ঈদুল আজহা ইবরাহিম (আ.), বিবি হাজেরা ও ইসমাইল (আ.)-এর পরম ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত উত্সব। ইবরাহিম (আ.)কে আল-কুরআনে মুসলিম জাতির পিতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে (হজ ৭৮)।

এই পরিবার বিশ্ব মুসলিমের জন্য ত্যাগের মহত্তম আদর্শ। তাই ঈদুল আজহার দিন সমগ্র মুসলিম জাতি ইবরাহিমি সুন্নাত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে।

কুরবানির স্মৃতিবাহী জিলহজ মাসে হজ উপলক্ষ্যে সমগ্র পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হয় ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মক্কা-মদিনায়। তারা ইবরাহিমি আদর্শে আদর্শবান হওয়ার জন্য জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেন।

হজ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ, যা প্রতি বছরই আমাদের তাওহিদি প্রেরণায় উজ্জীবিত করে। আমরা নিবিড়ভাবে অনুভব করি বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব।

ঈদের উত্সব একটি সামাজিক উত্সব, সমষ্টিগতভাবে আনন্দের অধিকারগত উত্সব। ঈদুল আজহা উত্সবের একটি অঙ্গ হচ্ছে কুরবানি।

কুরবানি হলো চিত্তশুদ্ধির ও পবিত্রতার মাধ্যম। এটি সামাজিক রীতি হলেও আল্লাহর জন্যই এই রীতি প্রবর্তিত হয়েছে। তিনিই একমাত্র বিধাতা, প্রতিমুহূর্তেই মানুষ যার করুণাপ্রত্যাশী।

আমাদের বিত্ত, সংসার ও সমাজ তার উদ্দেশ্যেই নিবেদিত এবং কুরবানি হচ্ছে সেই নিবেদনের একটি প্রতীক।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লটারিতে ১ লাখ ডলার জিতে নিলেন জামি হকিন্স

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ এবং নানান সুবিধা

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার বাতিলে আইন করছে পোল্যান্ড

কমলা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণায় বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি

হাসপাতালে মাহাথির মোহাম্মদ

কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করছেন রিয়েলেটর মুহিবুল হাসান চৌধুরী

পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মনে করেন ট্রাম্প

মটর সিটি ক্যারাম টুর্নামেন্ট ২০২৪- সম্পন্ন

ভবানীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদ-এর আত্মপ্রকাশ

১০

আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে বিলেতে আলোচনা ও কবিতা পাঠ

১১

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ড্রোন কিনছে ভারত

১২

আশাবাদী হওয়ার উপায়

১৩

ক্যান্সারের চিকিৎসা : সহজ ও কঠিন

১৪

ঢাবি শিক্ষক ছাড়া কি ভিসি হওয়া যায় না

১৫

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিন মার্কিন অর্থনীতিবিদ

১৬

মিশিগানে তিন দিনের প্রচারণায় কমলা হ্যারিস

১৭

মিশিগানে বিশ্ব সিলেট সম্মেলন-২০২৫ আয়োজনের উদ্যোগ

১৮

কমলা হ্যারিস এবং টিম ওয়ালজের সমর্থনে হ্যামট্রামিকে অফিস উদ্বোধন

১৯

পেনসিলভানিয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে কমলা

২০