আবুল কাসেম
৬ জুলাই ২০২৩, ৫:৪৪ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

কুরবানি: উম্মতের জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্ধারিত বিধান

কুরবানি শব্দটি মুখে মুখে প্রচলিত। যুগে যুগে কুরবানির নজির বিদ্যমান। যারা নিজেকে কুরবান বা আত্মলীন করতে পেরেছেন, তারাই সফলকামী। তারাই সোনার মানুষে পরিণত হয়েছেন।

হজরত আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকেই কুরবানির ইতিহাস বিদ্যমান। হজরত আদম আ.-এর পুত্র হাবিল থেকে শুরু করে সব আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম সকলেই নিজেকে আল্লাহর রাহে কুরবানি করেছেন।

রাসূলে কারীম সা.-এর সময়ে সাহাবা কেরামের কুরবানি করার ইতিহাস আমাদের সামনে উজ্জ্বল। কুরবানি কুরআন-সুন্নাহতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিধান এবং আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ থেকে নির্দেশিত অন্যতম প্রধান ইবাদত। ১০ জিলহজ আল্লাহর ব্যাপক মাগফিরাত লাভের আনন্দ এবং ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল আনুগত্য-কুরবানি পেশ করার আনন্দ।

ঈদুল আজহা সম্পর্কে সুনানে আবু দাউদ; সুনানে নাসাঈ শরিফে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ‘আমাকে কুরবানির দিবসে ঈদ উদযাপনের আদেশ করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’ এক সাহাবী আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমার কাছে শুধু একটি ‘মানীহা’ থাকে (অর্থাৎ যা আমাকে শুধু দুধ পানের জন্য দেয়া হয়েছে) আমি কি তা কুরবানি করতে পারি? নবী সা. বললেন, ‘না, তবে তুমি চুল, নখ ও গোঁফ কাটবে এবং নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানি বলে গণ্য হবে। (জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর ১০ দিন না কেটে ঈদের দিন কাটার কথা বলা হয়েছে)।

তাফসীরে ইবনে কাসীরে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর একটি রেওয়ায়েতে উত্তমসূত্রে কুরবানির প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। হজরত আদম আ.-এর দুজন ছেলে ছিল। হাবিল আর কাবিল। হজরত হাওয়া আ. প্রত্যেকবার এক জোড়া সন্তান প্রসব করতেন। একটি ছেলে অপরটি মেয়ে। এই যমজ ভাই-বোনদের বিয়ে ছিল হারাম। তাই তখন একগর্ভে জন্মলাভ করা ছেলের সাথে ভিন্নগর্ভে জন্মলাভ করা মেয়ের বিয়ের নিয়মই প্রচলিত ছিল।

কাবিলের যমজ বোনটি ছিল বেশি সুন্দর চেহারার অধিকারিণী। যমজ হওয়ার কারণে তাকে কাবিল বিয়ে করার নিয়ম না থাকলেও তার জেদ ও হঠকারিতা ছিল যে, সে তাকে বিয়ে করবেই।

অন্যদিকে হকদার হওয়ার দাবি ছিল হাবিলের। এ দ্বন্দ্বের ফয়সালা হলো এভাবে প্রত্যেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে কিছু কুরবানি করবে। যার কুরবানি কবুল হবে তার দাবিই গ্রহণযোগ্য হবে। হাবিল একটি দুম্বা ও কাবিল কিছু ফলফলাদির কুরবানি পেশ করল।

তখনকার দিনে কুরবানি কবুল হওয়ার আলামত ছিল, আকাশ থেকে আগুন নেমে কবুলকৃত কুরবানি খেয়ে ফেলত। যথারীতি আগুন এসে হাবিলের দুম্বাটি খেয়ে ফেললো, কাবিলের কুরবানি জমিনেই রয়ে গেল।

মূলত কুরবানি অন্তরের বিশুদ্ধতার বিষয়, লোকদেখানো কোনো বিষয় নয়। হাবিল মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য কুরবানি করেছিলো বলে তা কবুল হয়েছিলো। কুরবানিদাতা শুধুমাত্র পশুর গলায় ছুরি চালায় না; বরং সে তার সকল কুপ্রবৃত্তির ওপর ছুরি চালিয়ে তাকে নির্মূল করে।

এ অনুভূতি ব্যতিরেকে যে কুরবানি করা হয়, তা হজরত ইবরাহীম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর কুরবানির মতো হবে না; তা হবে শুধু গোশত খাওয়া। ইখলাসের সাথে কুরবানি করতে হবে। মহব্বতের সাথে কুরবানি দিতে হবে।

বর্তমানে আমাদের দেশে সম্মান রক্ষা কিংবা লোকদেখানো কুরবানির রেওয়াজ চালু হয়ে গেছে। অথচ সূরা হজের ৩৭নং আয়াতে মহান আল্লাহর ঘোষণা, আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না এর গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।
ঈদুল আজহা বাংলাদেশে কুরবানির ঈদ নামেই সমধিক পরিচিত।

একে বকরি ঈদও বলা হয়। আরবী কুরবান শব্দটির অর্থও নৈকট্য। অন্যদিকে ঈদুল আজহার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে জবেহের আনন্দ-উৎসব। যে উৎসবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি দেয়া হয় এবং যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব হয় সেটাই কুরবানির ঈদ।

কুরবানির ঈদ বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এক বিপ্লবাত্মক প্রভাব ফেলে আসছে। ঈদুল আজহা এমন এক আনন্দ-উৎসব, যা শুধু জীবনকে জানা এবং উপলব্ধি করার প্রেরণাই দান করে না, বরং আল্লাহর সঙ্গে বান্দার নৈকট্য লাভের পথও প্রশস্ত করে দেয়। এ উৎসব আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুপ্রেরণা।

কুরবানির পশুর গোশ্ত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া এবং আর এক ভাগ নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য রাখা- এ বণ্টননীতি ঈদের আনন্দ সবাইকে সমানভাগে ভাগ করে নেয়ার প্রেরণায় উদ্ভাসিত করে।

কুরবানির ঈদ নিয়েই আমাদের কবি-সাহিত্যিকরা ছড়া, কবিতা, গান, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রভৃতি লিখেছেন। এসব লেখায় ত্যাগের মহিমার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিপ্লবী চিন্তা ও আত্মদানের প্রসঙ্গ।

এদেশে কুরবানি উপলক্ষে ফ্রিজের বাজার সরগরম হয়ে ওঠে। এমন বিচিত্র মানুষও আছেন, যারা কুরবানির পর আস্ত পশুটিই ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখেন আর সারা বছরের গোশতের প্রয়োজন পুষিয়ে নেন।

এটা কোনোভাবেই মানবিক আচরণ হতে পারে না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। একটি ইবাদত আদায় করতে গিয়ে পশুর বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনা দ্বারা ঘরের আঙিনা ও পথ-ঘাটকে দূষিত করে তোলা মোটেই উচিত নয়। এতে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সবার সতর্কতা ও সচেতনতা একান্ত জরুরি।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লটারিতে ১ লাখ ডলার জিতে নিলেন জামি হকিন্স

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ এবং নানান সুবিধা

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান

অভিবাসীদের আশ্রয় অধিকার বাতিলে আইন করছে পোল্যান্ড

কমলা হ্যারিসের পক্ষে প্রচারণায় বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি

হাসপাতালে মাহাথির মোহাম্মদ

কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করছেন রিয়েলেটর মুহিবুল হাসান চৌধুরী

পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় মনে করেন ট্রাম্প

মটর সিটি ক্যারাম টুর্নামেন্ট ২০২৪- সম্পন্ন

ভবানীপুর সমাজকল্যাণ পরিষদ-এর আত্মপ্রকাশ

১০

আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে বিলেতে আলোচনা ও কবিতা পাঠ

১১

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ড্রোন কিনছে ভারত

১২

আশাবাদী হওয়ার উপায়

১৩

ক্যান্সারের চিকিৎসা : সহজ ও কঠিন

১৪

ঢাবি শিক্ষক ছাড়া কি ভিসি হওয়া যায় না

১৫

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিন মার্কিন অর্থনীতিবিদ

১৬

মিশিগানে তিন দিনের প্রচারণায় কমলা হ্যারিস

১৭

মিশিগানে বিশ্ব সিলেট সম্মেলন-২০২৫ আয়োজনের উদ্যোগ

১৮

কমলা হ্যারিস এবং টিম ওয়ালজের সমর্থনে হ্যামট্রামিকে অফিস উদ্বোধন

১৯

পেনসিলভানিয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে কমলা

২০