মিশিগান অঙ্গরাজ্যে লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস। বিভিন্ন সূত্রমতে প্রতি মাসে এখান থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স যায় বাংলাদেশে। অথচ সামান্য এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দু-বছর পর বাংলাদেশের ওয়াশিংটন দূতাবাস ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা প্রদান করে গত ৮ ও ৯ জুন। আয়োজনের দুইদিনে সর্বমোট ১৪৮১ জন প্রবাসী এই সেবা পেয়েছেন। প্রায় দু-বছর পর ঘরের কাছে কনস্যুলেট সেবা পেয়ে খুবই আনন্দিত মিশিগানে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা।
তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে মিশিগান কনস্যুলার ক্যাম্পের কাক্সিক্ষত সেবা হতে অনেক সেবাপ্রত্যাশী বঞ্চিত হয়েছেন কেননা এই সংক্ষিপ্ত আয়োজনের খবরটিই তাঁদের নিকট পৌছেনি। তবে উল্লেখ্য যে স্থানীয় আয়োজক সহযোগিদের আন্তরিক চেষ্টা ছিলো সকলের নিকট খবরটি পৌঁছানোর।
এখানে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যখন তাদের অনেকেরই পাসপোর্ট নবায়নসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নবায়ন ও সংগ্রহ জরুরি হয়ে পড়ে। লক্ষাধিক প্রবাসীর প্রয়োজন মেটাতে মাত্র দুইদিনের ক্যাম্প যথেষ্ট নয় বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন। এইরকম ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্প সাময়িক হয়তো অনেককে উপকৃত করছে কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান নয়।
এই প্রসঙ্গে মিশিগান স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, গত ৮ এবং ৯ জুন দুদিনের ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সার্ভিসে আমরা প্রায় ১৫ শ’ মানুষকে সেবা দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এখানে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস সেই তুলনায় এটা খুবই অপ্রতুল। আমরা কনস্যুলেটের কাছে দাবি জানাচ্ছি, প্রতিমাসে যেন এখানে একটি সার্ভিস দেওয়া হয় আনটিল আমরা এখানে স্থায়ী দুতাবাস পাওয়ার আগ পর্যন্ত। মিশিগানের মানুষের প্রাণের দাবি এখানে এটি স্থায়ী দুতাবাসের। কিছুদিন আগেও আমরা প্রায় বিশ হাজারেরও উপরে মানুষ স্বাক্ষর করেছে এই দাবির পক্ষে এবং আমরা এই দাবি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও সরকারের সর্বোচ্চ মহলে ধর্না দিচ্ছি এবং দাবি জানাচ্ছি। বারবার আমাদের এই দাবিটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত যায়, কিন্তু জানিনা কেন আমাদের মিশিগানের এই দাবিটা এখনো পরিপূর্ণতা পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কের পরে সর্বোচ্চ বাঙালিদের বসবাস এই মিশিগানে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে আমাদের দাবি হচ্ছে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপন। অচিরেই স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং স্থায়ী অফিস হওয়ার আগপর্যন্ত অস্থায়ীভাবে প্রতিমাসে একবার এই সেবা দেওয়া হোক।
মিশিগান মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুতালিব বলেন, মিশিগানের মানুষের প্রাণের দাবি যে মিশিগানে একটি স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস হবে। আমরা সরকারের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতনদের সাথে যোগাযোগ করেছি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। অন্তত মাসে একবার যেন কনস্যুলেট সার্ভিসটি দেওয়া হয় মিশিগানে তাহলে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে।
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন মিন্টু বলেন, মিশিগান কনস্যুলেট অফিস নিয়ে জনদাবি প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হচ্ছে। মিশিগানের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিভিন্ন ভাবে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অথচ অজানা এক রহস্যে যেন আটকে আছে সব। জানিনা কেনো আওয়ামীলিগ সরকার আমাদের এই দাবিতে কোন করছে না । দ্রæত নিরসন হোক এবং মিশিগানে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপন হোক।
লক্ষাধিক প্রবাসীর প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস স্থাপন, যা মিশিগানে বসবাসরত বাংলাদেশির প্রাণের দাবি। স্থায়ী কনসুলেট স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে যা কাম্য নয়।
গত ২৬ জানুয়ারি ২০২০ সালে নর্থ আমেরিকা সোসাল ট্রাস্টের (নেস্ট) উদ্যোগে মিশিগানে স্থায়ী কনস্যুলেট অফিসের দাবিতে গণসাক্ষর কর্মসুচি পালিত হয় । কর্মসূচির অগ্রগতি নিয়ে নর্থ আমেরিকা সোশ্যাল ট্রাস্টের (নেস্ট) পরিচালক নাজেল হুদা বলেন ‘কর্মসূচিতে আমরা প্রায় ৩৫ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করি। সেগুলির কপি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেই সাথে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল । আমরা প্রতিশ্রæতি ছাড়া কোন কার্যকর প্রতিকার পাইনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবাসী বাংলাদেশি ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা সংবাদকে জানান ওয়াশিংটন দূতাবাস মিশিগানের বাসিন্দাদের খুব অবজ্ঞার সাথে দেখে। তারা আমাদের সম্পর্কে খুব বাজে ধারনা রাখে। তা না হলে ২০২২ সালের সামান্য এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দুই বছর মিশিগানের বাংলাদেশি জনগণকে তাঁদের কাঙ্খিত সেবা হতে বঞ্চিত রেখেছে। আমরা স্থায়ী কনস্যুলেট অফিস হওয়ার আগ পর্যন্ত মাসে অন্তত একবার ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা সেবা চাই।
মন্তব্য করুন