এবারই প্রথম মার্কিন মুল্লুক ভ্রমণের সুযোগ হলো, সেইসাথে বিশ্ব ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ হলো। একবার মার্কিন মুল্লুকে গিয়ে এ কথাটা বলা একটু অন্যায় হবে যে, আমেরিকা দেখেছি বা জেনেছি।
অতল রহস্যের আমেরিকায় কেবল পা রাখেছি, মার্কিন স্টেট গভঃ এর আমন্ত্রণে আইভিএলপি প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের ৫ জন প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিল হেরিটেজ বিষয়ক ২১ দিনের একটি কর্মশালায় যোগ দেবার জন্য। সেই কর্মশালার সুবাদে ভিন্ন আমেরিকা দেখার সুযোগ হয়েছে, আমেরিকা সরকারের অতিথি হয়ে।
২১দিনের হেরিটেজ সংক্রান্ত কর্মসূচিতে ৪টি প্রদেশের ৪টি শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমাদের। সর্বশেষ শহর ছিল ভার্জিনিয়ার শার্লটভিলে শহর । শহরে যাবার রুট দারুন ছিল। আইওয়া শহর থেকে শিকাগো, শিকাগো থেকে ওয়াশিংটন এয়ারপোর্ট, তারপর বাসে করে শার্লটভিলে শহর। গোটা দিন বিভিন্ন শহর পার হয়ে তারপর গন্তব্যে। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কেন বলেছি ভিন্ন আমেরিকা দেখবার সুযোগ হয়েছে।
শার্লটভিলে গড়ে উঠেছে ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়াকে কেন্দ্র করে। শার্লটভিলে শহর আরও একটি বিষয় এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয়। কারন শার্লটভিলে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ তিন জন প্রেসিডেন্টের জন্মস্থান ও বসতবাড়ি। সেই জন্য শার্লটভিলেকে বলা হয় প্রেসিডেন্টস ল্যান্ড।
যদিও সাধারণ টুরিস্টদের মাঝে জনপ্রিয়তার দিকে আব্রাহাম লিংকন, কেনেডি ও জর্জ ওয়াশিংটন অনেক এগিয়ে। স্বল্প পরিসরে সব গল্প সম্ভব নয়। কেবল ছোট্ট করে প্রেসিডেন্ট মনরোর বসতবাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর গল্প করবো। তবে এক একটি প্রেসিডেন্টের বসতবাড়ি যেন ভিন্ন ভিন্ন ওপেন এয়ার মিউজিয়াম।হাইল্যান্ড চত্বরে কর্মচারীদের বাড়িঘরজেমস মনরোর হাইল্যান্ডে সারাদিন…!!
প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো আর মনরো ডকট্রিন ফর্মুলা পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটে। জেমস মনরোর কথা মনে নেই কিন্তু এই টার্মটি মনে গেঁথে আছে। মনরো ডকট্রিন সম্পর্কে খুব বেশি জানি না, তবে আমেরিকার পঞ্চম প্রেসিডেন্টের নাম এবং সেই নামের সাথে জড়িয়ে থাকা ডকট্রিনের কথা আমার কিশোর সময়ে বাড়িতে আলোচনায় যা জেনেছি সেই ধারণা থেকেই বলছি –
মনরো ডকট্রিন মূলত ১৮২৩ সালের ২রা ডিসেম্বর, ৫ম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস মনরো কর্তৃক ঘোষিত একটি পররাষ্ট্রনীতি, যেটি অনুসারে ল্যাটিন আমেরিকার যেকোনো বিষয়ে ইউরোপের কোনো দেশের যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা উপনিবেশ স্থাপনের প্রক্রিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট অবৈধ হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এ ধরনের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশটি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তথা এ ধরনের প্রক্রিয়া প্রতিহত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে বাধা দেবে।
গত বিংশ শতকের শুরুতে ২৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট মনরো ডকট্রিনে আরও কয়েকটি বিষয় যুক্ত করেন, যার ফলে ল্যাটিন আমেরিকার কোনো দেশ যদি মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভুল পথে চালিত হয়, তবে সেই দেশকে শাসন করার অধিকারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থাকবে। এ নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ল্যাটিন আমেরিকাকে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রাখতে এবং সেখানে তার একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা রাখতে চেয়েছিল।
এই কার্যক্রমকে মনরো নীতি, মনরো মতবাদ বা তত্ত্ব বলে থাকে অনেকে। এই মতবাদ নিয়ে নেগিটিভ পজিটিভ বক্তব্য রয়েছে, সেই আলোচনায় যাবো না। সেই আলোচনা করার মত যোগ্য ব্যক্তিও আমি না। কিন্তু আচমকা এই বিষয়টি সামনে চলে আসায় আমি চমকিত।
কোনদিন ভাবিনি ভার্জিনিয়ায় জেমস মনরোর বাসভবন দেখবো। গোটা একটি দিন সেখানে অতিবাহিত করবো। আইভিএলপি’র কল্যাণে আমেরিকার কত কিছুই জানা হলো, দেখা হলো, শেখা হলো। তিনটি সেশন ছিল। সবগুলোই হেরিটেজ ও হেরিটেজ সংরক্ষণ সম্পর্কে। সেশনগুলো পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ার শিক্ষক ও জেমস মনরোর হেরিটেজ সাইটের গবেষকগণ। ভার্জিনিয়ার শার্লটভিলে থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে জেমস মনরো ফার্ম হাউজ। ৩৫০০ হাজার একর এলাকা জুড়ে ফার্ম হাউজটি। সেখানে যাবার পথটিও দারুন। উঁচু নীচু পাহাড়ি পথ। ছোট টিলার উপর পুরো ফার্মহাউজটি। পুরোনো কিছুই টিকে নেই। আগুনে পুড়ে গেছে। নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। ইতিহাস সংরক্ষণের কি দারুন আকাঙ্ক্ষা। দেখে অবাক হয়েছি !
লাঞ্চ ব্রেকের পর হেরিটেজ ওয়াকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ফার্ম হাউজের চারদিকে। তবে এত বিশাল এলাকা তো আর পায়ে হেঁটে দেখা সম্ভব না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আর জায়গাগুলোই ট্যুর গাইড ন্যান্সি বর্ণনা করেছে। ন্যান্সির চমকপ্রদ অভিব্যক্তি আর বর্ণনার ধরণ দেখে মনে হচ্ছিল, সে একজন ইতিহাসবিদ। কিন্তু আমাদের দেশে মূল ইতিহাসের জায়গাগুলোতেও ট্যুর গাইড পাওয়া যায় না। এই চর্চা কি আমাদের দেশে কখনও শুরু হবে !
মনরোর এই হাউজকে বলা হয় মনরোস হাইল্যান্ড। দারুন একদিন কেটেছে মনরোস হাইল্যান্ডে।
মন্তব্য করুন