ধ্রুপদী র স্বীকৃতি পেতে হলে দেড় হাজার বছর আগের তথ্য থাকতে হবে। তবে দেড় হাজার বছর আগের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তৎকালীন রাজ রাজাদের তাম্রলিপি
থেকে। ভাষাবিদদের দেওয়া তথ্য মতে ভারত সরকার বাংলা ও অসমীয়া ভাষাকে “ধ্রুপদী” স্বীকৃতি দিয়েছেন । এর ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা কে আরও সমৃদ্ধ করা হলো বলে দাবি করেন বিপিন চন্দ্র পাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সুব্রত চৌধুরী। মঙ্গলবার বিপিন চন্দ্র পাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
“ভাষা গৌরব সপ্তাহ” পালন উপলক্ষে এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, মোগল আমলে পূর্ব থেকে বাংলা ভাষার প্রচলন আছে । প্রায় দুশো বছর আগে বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তার আগে স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় বক্তব্য রেখেছিলেন ( যদিও ইংরেজি ) কিন্তু তার মাতৃ ভাষা ছিল বাংলা সেই ভাষাকে সম্মান জানিয়ে এই বঙ্গ সন্তান বিশ্ব জয় করেছিলেন । সেই দিকে যদি দেখা যায় তাহলে বাংলা ভাষাকে অনেক আগেই “ধ্রুপদী” ভাষা স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ছিলো। তবে বাংলা ভাষা কে ধ্রুপদী ভাষার জন্য দাবি অনেক বার উঠেছিল কিন্তু তৎকালীন সরকার গুরুত্ব না দিলেও বর্তমান সরকার বাংলা ভাষায় মর্যাদা দিয়েছে সঙ্গে আমাদের রাজ্যের অসমীয়া ভাষায় মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। ধ্রুপদী ভাষা স্বীকৃতি লাভের জন্য আমরা সরকারের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সুব্রত চৌধুরী ।
বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা মালা দেবের পৌরহিত্যে সভায় বিশেষ অতিথি প্রেস ক্লাব করিমগঞ্জের সম্পাদক অরূপ রায় বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশে বাঙালির অস্তিত্ব পাওয়া যাবে । একমাত্র বাংলা ভাষা যে পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষাকে নিজেদের ভাষার সঙ্গে মিলিত করেছে যার মধ্যে ইংরেজি,ফারসি, উর্দু,হিন্দি সহ অন্যান্য। বাঙালিদের বৃহৎ হৃদয় যার জন্য অন্যের ভাষা সংস্কৃতির প্রেমে নিজেদের ভাষাকে সমৃদ্ধি করতে পেরেছে । ভাষার জন্য বিশ্বে প্রথম প্রাণ হারিয়েছে বাংলার দামালরা ২১ শে ফেব্রুয়ারি । ১৯৬১ সালে ১৯ মে ভাষার জন্য শিলচরে এগারোজন এবং ১৯৮৬ সালের ২১ শে জুলাই করিমগঞ্জে দুজন এবং মণিপুরী ভাষার জন্য একজন শহীদ হয়েছিল । বাংলা ভাষা সংস্কৃতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুরক্ষিত রাখতে বাঙালি সংগঠন নানা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও যেন কোথাও ভাষা আগ্রাসন হচ্ছে নানা কৌশলে । কেন্দ্র সরকার বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষায় মর্যাদা দিয়ে আমাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন । এখন আমাদের ভাষা সংস্কৃতির প্রচার প্রসার করতে আরও কাজ করতে হবে। অরূপ রায় বলেন, বাংলা ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আমাদের কর্তব্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে কৃতজ্ঞতা জানান তাই পত্র যোগে নিজ নিজ শিক্ষা বা সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান থেকে । প্রধান মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানানো পাশাপাশি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত কারণ উনি অসমের প্রধান দুই ভাষা অসমীয়া ও বাংলা ভাষার জন্য বরাক ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় পৃথক পৃথক ভাবে চর্চা ও আলোচনার আবেদন জানিয়েছেন । অথচ বাংলা প্রধান পশ্চিমবঙ্গের সরকার এ বিষয়ে নীরবতা পালন করেছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী দুটি ভাষাকে সমান মর্যাদা দেওয়ার জন্য বাঙালি হিসেবে উনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এদিনের সভার অনন্যাদের মধ্যে বাংলা ভাষা নিয়ে, প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রাখেন, স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি শঙ্কর ঘোষ, শিক্ষিকা বর্ণালী অধিকারী, শিক্ষক
অশোক দাস, অভিজিৎ দাস, এবং অসমিয়া ভাষা নিয়ে বক্তব্য রাখেন শিক্ষিকা বুলবুল দেব, ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মালা দেব। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিক্ষক জয়দীপ বনিক। এদিনের ভাষা গৌরব সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনার পাশাপাশি
ছাত্র ছাত্রীদের কবিতা,নাচ, গানের আসর সবাইকে মুগ্ধ করে ।
মন্তব্য করুন