আমার জীবনের ২৫টি বছর কেটেছে ইসরাইলে এবং এখানে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি এমন কথা কখনোই উচ্চারণ করিনি- ইসরায়েল কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে? এমনকি ইসরাইলে যাওয়ার পূর্বে ‘ইওম কিপুর যুদ্ধে’র সময় মিশর ও সিরিয়ার সেনারা যখন আমাদের সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়েছিল এবং সেসময় রাশিয়া সিনাই, মিশর এবং প্রধান সীমান্ত কিবুতযে স্থলবাহিনী পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল তখনও আমি ততটা ভীত ছিলাম না। বরং এই বলে দেশ রক্ষায় এগিয়ে গিয়েছিলাম যে, একদিন নিশ্চয়ই আমরা বিজয়ের সূর্যোদয় দেখবো। আমি কি কখনো পরাজয়ের গন্ধ পেয়েছি? কিন্তু এখনকার দিনগুলো একেবারেই ভিন্ন।
আমি শাবাতের (ইহুদিদের সাপ্তাহিক বিশেষ দিন) আলো ঝলমলে সকালে সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) গিয়েছিলাম, তখন আমার মোবাইল ফোনে ভাইব্রেশন দেওয়া ছিল। হঠাৎ গাজায় বিস্ফোরণে আইডিএফ’র (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) ৮ সেনা নিহত হওয়ার একটি বার্তা আসে ফোনে। ক্ষয়ক্ষতি এত ব্যাপক ছিল যে, নিহত সেনাদের মৃতদেহ এবং অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা জানি, একজন ইসরাইলি সেনার মৃত্যুর বেদনা আমাদের কাছে কত গভীর, যেন পরিবারের একজন সদস্যকে হারালাম।
অহংকারই আমাদের ডোবাচ্ছে
গত ৭ অক্টোবর যারা হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সেই হামাসকে নির্মূল অভিযানে গিয়ে আট তরুণ ও সাহসী ইসরায়েলি সেনার মৃত্যু হয়। তারা গাজায় হামাস কর্তৃক লুকিয়ে রাখা ১২০ জিম্মিকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আজকে যে সেনাদের দেহ ছিন্ন ভিন্ন হলো আপনি কি ভবিষ্যতে তাদের ব্যাপারে আর কখনও কিছু শুনতে পাবেন? কিংবা ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে লেবাননের হিজবুল্লাহর শত শত রকেট হামলার ফলে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড অথবা আইডিএফ সেনাদের বীরত্বপূর্ণ অভিযানের মাধ্যমে জিম্মি অ্যালমগ মেইর জ্যান, আন্দ্রে কোজলভ শ্লোমি জিভ এবং নোয়া আরগামানিকে উদ্ধারের বিষয়ে?
আমরা অনেকেই কয়েক দশক ধরে ইসরাইলের জনসংযোগের বিষয়ে সমালোচনা করে আসছি। সরকারের পাবলিক রিলেশন শাখার (হাসবারা) পরিকাঠামোর অংশ হিসেবে আমি সব সময়ই আর্থিক সংকটের ব্যাপারে বলেছি। আমাদের যেহেতু আয়রন ডোম এবং যুদ্ধ বিমানের জন্য অর্থের প্রয়োজন, তাই বিষয়টিকে কখনোই গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে আমার ধারণা ছিল ভুল। অথচ সেই একই কারণে আজ আমাদের কার্যকর তথ্য যোগাযোগের অভাবে ইসরাইলকে হলোকাস্ট স্টাইলে ৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে হচ্ছে, এটি অহংকারেরই ফল। ইসরাইলের নিচের সারির গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু মধ্যম সারির কর্মকর্তারা একেবারে তাদের চোখের সামনে থাকা ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে ব্যর্থ হন। তারা বলেছিলেন যে, ইসরাইলের ঘরবাড়িতে সুসংগঠিত হামলার সক্ষমতা হামাসের নেই। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিষয়টি কখনোই প্রধানমন্ত্রীর টেবিলেও উপস্থাপন করেননি।
সম্প্রতি একটি পিআর এজেন্সির মালিক আমার এক ভালো বন্ধু ইসরাইলের যে স্থানে হিজুবুল্লাহ রকেট হামলা চালিয়েছে সেখানকার মানচিত্রের ভিডিও আপলোড বন্ধ করতে বলে। সে জানায়, এতে আমাদের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে এবং ইসরাইলিদের মাঝে অস্বস্তি তৈরি করবে। আমি তাকে এই বলে দ্রুত উত্তর দিলাম যে, মানচিত্রগুলি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যবহারের জন্য ছিল, অভ্যন্তরীণ নয় এবং আমরা যুদ্ধাপরাধী নই। একইসঙ্গে এগুলো ইসরায়েলি পেশাদারদের পিআরদের মধ্যে উদ্বেগ এবং হতাশার উদ্রেক করে থাকলে তাদের পিএসটিডি (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার) এর সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি ইনফরমেশন ক্যাম্পেইন থেকে প্রত্যাহারের পরামর্শ দেই।
ইসরাইলের কি পেশাগত তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। তবে, সেটি খুব সীমিত। আইডিএফ মুখপাত্রের কার্যালয় যথেষ্ট চেষ্টা করেছে, কিন্তু কয়েক বছরের সংকটের কারণে পিআর অভিজ্ঞতার অভাবও রয়েছে। পেশাদাররা ভালো করেই জানেন যে, কীভাবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমাদের একটি পিআর ফার্ম রয়েছে এবং অসাধারণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ইউএস, কানাডা এবং ইউরোপের বিভিন্ন সিটিতে আমাদের অভিজ্ঞ কয়েক ডজন পেশাদার কর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
ইসরাইলের পেশাদার জনসংযোগ কর্মকর্তা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কেউ হয়তো উত্তর দেবেন, তাহলে যুদ্ধের জন্য জেরুজালেমে ইসরাইল/হামাস/হিজবুল্লাহ’র মিডিয়া সেন্টার কোথায়? ইসরাইল উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ইরান যদি হাজার হাজার মিসাইল নিয়ে এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, আমরা কি তাহলে দেশের কেন্দ্রস্থল থেকে জনগণকে সরাতে পারবো? এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে আমাদের প্রয়োজন ইংরেজিতে পারদর্শী জনবল, যারা বিশ্ববাসীর সামনে সবকিছু উপস্থাপন করতে পারবে। গত কয়েক মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইংরেজিতে খুবই দক্ষ দুজন কূটনৈতিক এইলন লেভি এবং নোয়া তিসবিকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কেবল ইসরাইলেই নয়, জেরুজালেমেও আমরা ইহুদি বিদ্বেষ প্রশমনে মিডিয়ার বয়ান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য নিন্দার শিকার হচ্ছি। ফলে, একটি প্রাণঘাতি ক্যান্সারের মতো ইহুদি বিদ্বেষ এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের প্রতিটি শহর ও সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে।
মন্তব্য করুন