বাংলা সংবাদ ডেস্ক
১৯ জুন ২০২৪, ২:০২ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সবশেষ যা জানা যাচ্ছে

ব্যাপক বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেট এবং সুনামগঞ্জের বহু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে দুই জেলা শহরের কোথাও কোথাও সড়ক এখন হাঁটু থেকে কোমর সমান পানির নীচে। উভয় জেলায় সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

সুরমাসহ দুই জেলার নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী বায়াত্তর ঘণ্টা ভারী বর্ষণ, বজ্রপাত ও ঝড় বয়ে যেতে পারে ওই অঞ্চলের ওপর দিয়ে।

আবার সুনামগঞ্জের ছাতকের নিকটবর্তী ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রবল বৃষ্টির ঢলের কারণে আরও পানি বাড়ার আশংকা করা হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, পুরো জেলার ৮০ ভাগ এলাকা এখন বন্যা কবলিত এবং অব্যাহতভাবে বৃষ্টি হওয়ায় পানি আরও বাড়ার আশংকা আছে।

বিজ্ঞাপন

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বিবিসিকে বলেছেন, বেলা ১২টা নাগাদ সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।

“শহরের সব জায়গায় এখন পানি। কাল থেকে পানি একটু কমছিলো। কিন্তু আজ সকাল থেকে আবার বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় পানি বাড়ছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আরও ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে,” বলছিলেন তিনি।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নান জানিয়েছেন, সদর উপজেলায় সবগুলো ইউনিয়ন পানি কবলিত।

পাশাপাশি ছাতক ও দোয়ারাবাজারসহ অন্য উপজেলাগুলোতেও পানি বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

ওদিকে, ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতর জানিয়েছে, দেশটির অরুণাচল, আসাম এবং মেঘালয়ে আগামী কয়েকদিন ধরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

আসামের বাংলাদেশ লাগোয়া এলাকাগুলোতে লাগাতার বৃষ্টি ও বন্যার পানি বাড়ছে। ভারতের করিমগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

সিলেটের এখন কী অবস্থা

সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকাটি সুরমা নদীর তীরে। এখন নদীর পানি তীর ছুঁই ছুঁই করছে। আবার উপশহরসহ কিছু এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানির কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, পুরো জেলায় ইতিমধ্যে ১৯ হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।

“গতকাল থেকে অঝড় ধারায় বৃষ্টি হয়েছে। কিছু এলাকা বাদ দিলে পুরো জেলা প্লাবিত। উঁচু রাস্তাঘাট ছাড়া সব জায়গায় পানি। জেলার আট লাখ মানুষ এখন বন্যা আক্রান্ত,” বলছিলেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মি. হাসান বলছিলেন, “আজ আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অনেক এলাকায় পানি বেড়েছে। মূলত বৃষ্টি বন্ধ হলে কয়েক ঘণ্টায় পানি কমে যায়। কিন্তু বৃষ্টি হলেই বাড়ে। এখন অব্যাহত বৃষ্টি হচ্ছে।”

এদিকে, সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মোঃ সজিব হোসাইন বলেন, সিলেটে বুধবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত একশো মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

“এরপর নয়টা পর্যন্ত আরও ৫৫ মি.মি. এবং বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৭ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। আরও কয়েকদিন এমন অবস্থা থাকতে পারে।”

বন্যায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলছেন ওই উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন এখন বন্যা কবলিত।

তিনি বলেছেন, “পানি এখনো ওঠানামা করছে। গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার পর কিছুটা কম দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু আজ সকাল ১০টার পর থেকে পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। সীমান্তবর্তী ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানির ঢল নেমে আসছে।”

স্থানীয় সাংবাদিক নয়ন সরকার বিবিসিকে জানিয়েছেন যে শহরের তালতলা, সোবহানিঘাট, উপশহর, জামতলা, মদীনা মার্কেট- এসব এলাকায় কোথায় কোমর সমান আবার কোথাও হাঁটু সমান পানি।

ওদিকে, সুরমা নদীর পানি সিলেট, সুনামগঞ্জ শহর ও দিরাই উপজেলায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি এবং গোয়াইনঘাট গোয়াইন নদীর পানিও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে গোয়াইনঘাটে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সেখানকার ১৩টি ইউনিয়নের সবকটিই বন্যা প্লাবিত এবং পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ।

“দেড় হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। শুকনো ও রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে। প্রতি ওয়ার্ডে ও গ্রামে কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে। ৫২ টি নৌকা উদ্ধার তৎপরতায় ব্যবহৃত হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন সীমান্তবর্তী চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানির ঢল আসায় আজ সকাল ১০টার পর থেকে পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে।

এদিকে, সিলেটে আজ সকাল নয়টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সুনামগঞ্জের কী অবস্থা

সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের তিনটি পয়েন্টেই অনেক বেড়েছে। এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলাই ভারত সীমান্ত সংলগ্ন। ভারতের দিকে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে এসব উপজেলাগুলোতে পানি বেড়েই চলেছে। ষোলঘর এলাকায় সুরমার পানি বিপদসীমার ৪০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও সুনামগঞ্জ শহরের রাস্তাঘাট দোকানপাট ও বাড়িঘর পানি কবলিত হয়ে পড়ায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে এবং দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।

সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মান্নান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সেখানেও আজ বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে।

এছাড়া পুরো উপজেলায় ৫০-৬০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে আছেন। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ ইতোমধ্যেই আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে।

“পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোট ত্রিশটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সকাল থেকে কিছু জায়গায় আবারো পানি বেড়েছে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টির সাথে পানি বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস আছে। প্রশাসন থেকেও সেভাবেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে”।

যদিও উজানে মঙ্গলবার রাতে কম বৃষ্টির কারণে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমে এসেছিলো। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে কিছু এলাকায় নতুন করে আবার পানি উঠতে শুরু করেছে।

স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, শহরের কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে আছে। এর মধ্যেই পাহাড়ি ঢল আসছে ও চলছে ভারী বৃষ্টিপাত।

আসামে কী অবস্থা

উত্তরপূর্ব ভারতের আসামের অন্তত ১৫টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বরাক উপত্যকার বাংলাদেশ লাগোয়া জেলা করিমগঞ্জে।

লাগাতার বৃষ্টি ও বন্যার কারণে মঙ্গলবার মাঝরাতে সেখানে ভূমিধসে চাপা পড়ে একই পরিবারের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

আসাম বিপর্যয় ব্যবস্থাপণা কর্তৃপক্ষ এএসডিএমএ জানিয়েছে, গত ২৮শে মে থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৩১ জনের বন্যার কবলে পড়ে মারা গেছেন।

করিমগঞ্জ জেলার কুশিয়ারা নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এ নদীর জলই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

ওই জেলার ২২৫টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। পুরো আসামে এরকম বন্যা কবলিত গ্রামের সংখ্যা প্রায় ৫০০।

করিমগঞ্জে ৩৫টি ত্রাণ শিবির খুলেছে স্থানীয় প্রশাসন, যেখানে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এর বাইরে ত্রাণ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে প্রায় ১৮ হাজার মানুষকে।

অন্যদিকে, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম এবং মেঘালয় – এই তিনটি রাজ্যেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে আগামী কয়েকদিন, এরকম পূর্বাভাস জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতর।

ইতিমধ্যেই ব্রহ্মপুত্র নদের জল বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে এবং তার উপনদী কোপিলি নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বিবিসি বাংলা

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিশিগানে কিশোর কিশোরী গ্রেপ্তার-৪

আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ক্রিয়াকলাপ আবার চালু

মিশিগানের আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা জারি

ওয়াশটেনউ কাউন্টির মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ

যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সীমান্তে বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যাবে

মিশিগানে মোটরস্পোর্টস গেটওয়ে নির্মাণ অব্যাহত

মিশিগানে বাড়ি ফেরার সময় গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু

মিশিগানে চলছে শেষ মূহূতের প্রস্তুতি

মিশিগানের গভর্নর পাঁচজনের সাজা কমিয়েছেন

নতুন ফরাসি সরকারের নামকরণ করা হয়েছে

১০

মিশিগানে বন্দীকে মৃত্যু থেকে বাঁচালেন বাইডেন

১১

মাইকি কিন মিশিগানে স্থানান্তরিত

১২

মিশিগানে গ্যাসের দাম আবারো বৃদ্ধি

১৩

মিশিগানের অ্যালেন পার্কে গ্রেপ্তার-১

১৪

মিশিগানে ২০২৫ উদযাপন করা হবে বিগ ১০ শো

১৫

মিশিগানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের মহান বিজয় দিবস উদযাপন

১৬

২০২৬ একীভূত হতে সম্মত Honda-Nissan কোম্পানি

১৭

ডেট্রয়েট জল প্রোগ্রাম তহবিল অস্পষ্ট

১৮

সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মিছিল

১৯

মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত পুতিন: জানুয়ারিতে ছাড়ছেন ক্ষমতা !

২০