আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে বদলে ফেলবেন

আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শ নিয়ে নির্দলীয়ভাবে নগরভবন পরিচালনা করবেন সিলেটে সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ২১ জুনের নির্বাচনে বেসরকারিভাবে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত এই প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা একটি জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাৎকারের বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী এখন থেকে সিলেটেই থাকব। মাঝে মাঝে ভিজিটে যুক্তরাজ্য যাব। তবে সেটা নিয়মমতো অনুমতি নিয়েই যাব।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলেও এখনো সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিদায়ী মেয়র হিসেবে এই বিএনপি নেতার হাতে সিলেট নগরীর দায়িত্ব থাকবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনে করছেন, এটি চাপের কিছু নয়। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সবার সহযোগিতা নিতে চাই। আরিফুল হক চৌধুরী যত দিন আছেন, তিনি চাইলে আমি তাকে সহায়তা করব। আবার আমি যখন দায়িত্ব নিবো, আমি অবশ্যই তার সহায়তা চাইবো। মূল ব্যাপার হচ্ছে সিলেটের উন্নয়ন। সিটি করপোরেশন হবে দল-মত নির্বিশেষে সব নাগরিকের। এখন আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘুরছি, দায়িত্ব নেওয়ার পর আই উইল বি চেঞ্জ।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী, দলের কনিষ্ঠ কর্মী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর আরেক সুযোগ্য কন্যা শেখ রেহানার স্নেহ ও নেতাকর্মীদের ভালোবাসা পেয়ে মেয়র মনোনীত হয়েছি। কিন্তু আমি নির্বাচিত হয়েছি জনগণের ভোটে। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি নাগরিকের সম্মান রক্ষা করা আমার ইমানি দায়িত্ব। আমার ওপর যারা আস্থা রেখেছেন, তারা আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েই পাঠিয়েছেন।

দল ও সিটি করপোরেশন দুটি আলাদা বিষয় উল্লেখ করে নতুন মেয়র বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর সব নাগরিক আমার কাছে সমান। একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা আমার দলের বড় নেতা, সিলেট সিটির নাগরিক হিসেবে দুজন সমান সম্মানই পাবেন।
মেয়র নির্বাচিত হবার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচনায় আছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রচারণায় অনেক আলোচিত-সমালোচিত নেতাদেরও দেখা গেছে তার কাছাকাছি।

নগর ভবন পরিচালনায় দলীয় চাপ কীভাবে সামলাবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কে কোন্ দলের বড় নেতা এটা দেখার বিষয় নয়। সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, ভূমি দখলকারীর ব্যাপারে জিরো টলারেন্স থাকবে। তিনি বলেন, নগরবাসী এবং গণমাধ্যমের কাছে আমি সমালোচনা প্রত্যাশা করব, যাতে আমি আমার কাজ ঠিকমতো করতে পারি। আগামী পাঁচ বছর যেন আমার ‘কী হনুরে!’ ভাব না আসে। কারণ শুধু কথা বললে হবে না, কাজ করতে হবে। জলাবদ্ধতা, যানজট, যোগাযোগ, পানীয় জল অনেক আবশ্যিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।

নতুন মেয়রের ওপর নাগরিকদের প্রত্যাশার পাহাড় :
সোবাহানিঘাট এলাকার ভাসমান ব্যবসায়ী নাদের মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুজ্জামানকে পাঠিয়েছেন, উনি কথা দিয়েছেন নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন শহর করবেনÑ এজন্যই তাকে ভোট দিয়েছি। নগরীতে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি বেড়েছে, গরিব মানুষের টিকে থাকা দায়। আশা করি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার দেওয়া কথা রাখবেন।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) প্রায় ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর সন্ধা ছয়টায় নবনির্বাচিত মেয়রের দেখা পান সিলেটের বিভিন্ন কলোনিতে বসবাসকারী দলিত ও হরিজন সম্প্রদায়ের অর্ধশত নারী-পুরুষ। তারা জানান, সারাদিন না খেয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু নতুন মেয়র কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তারা দেখা করতে পারেননি। সন্ধ্যায় মেয়র বঙ্গবন্ধুর ছবিতে ফুল দিতে এলে তারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

সিলেট জেলা পরিষদে নবনির্বাচিত মেয়রের সঙ্গে দেখা করার পর হরিজন ও দলিত সম্প্রদায়ের শেফালি ঋষি, কুমুদিনি দাস ও দিলমতি ঋষি বলেন, আমরা সবাই তাকে ভোট দিয়েছি। কারণ তিনি কথা দিয়েছেন আমাদের বাসস্থান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন। তিনি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর মানুষ, তিনি এটা পারবেন।

একই স্থানে দেখা করতে আসা প্রবাসী দিলওয়ার হোসেন বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে প্রবাসীদের জমি সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়তে হয়। অনেকের জমি দখল হয়ে গেছে। আনোয়ারুজ্জামান যেহেতু প্রবাসী, তিনি এটা জানেন। তিনি কথা দিয়েছেন, তিন মাসের মধ্যে এ নিয়ে অ্যাকশন শুরু করবেন।

প্রবাসীরা জানান, পাঁচ হাজারের বেশি প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামানকে জয়ী করতে সিলেটে এসে প্রচারণা চালিয়েছেন।
এবার ভোট দিতে যাননি এমন অনেক ভোটার বলেন, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ছিল না। তবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ায় তারা খুশি। কারণ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে এই শহরকে নান্দনিক করতে বিশেষ কিছু উদ্যোগ দরকার, যা প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য হওয়ায় আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে করা সম্ভব।

নগরের বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন। একাধিক প্রার্থী থাকায় অনেক ওয়ার্ডে হারতে হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। কিন্তু মেয়র হিসেবে প্রায় ৬৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দল-মত নির্বিশেষে সচেতন নগরবাসীর ভোট পেয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সবার প্রত্যাশা জমে হয়েছে পাহাড় সমান উঁচু।

তবে কোনো কিছুকেই চাপ হিসেবে নিচ্ছেন না সিলেটের নবনির্বাচিত মেয়র। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট জেলা পরিষদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একটি পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি গ্রিন, ক্লিন এবং স্মার্ট সিটির। নগরবাসী যেহেতু আমার সাথে আছেন, প্রধানমন্ত্রীর স্নেহ যেহেতু আছে, আশা করি এটি করা সম্ভব হবে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার দুর্গাপূজায় ইলিশ না পাঠানোর সিদ্ধান্ত একদম ভালো লাগেনি: ফারুকী

তমা মির্জার সঙ্গে প্রেম নেই: রায়হান রাফী

ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আসিফ নজরুল

আত্মহত্যা নিয়ে সালমান শাহর জন্মদিনে মুখ খুললেন স্ত্রী সামিরা

ইঙ্কস্টার পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে গুলি করা ব্যক্তির খোঁজ করছে

আমি মরে গেলে তুমি শহিদ মাতার সম্মান পাবে, মা!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে ধূম্রজাল

শেষ মিনিটের আত্মঘাতী গোলে পিএসজির জয়, সিটি-ইন্টার ড্র

‘সিআইডি’খ্যাত তামিল অভিনেত্রী শকুন্থলা প্রয়াত

পয়েন্ট খুইয়েও শীর্ষের আর্জেন্টিনা, অবনতি বাংলাদেশের

১০

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক হলেন ফাহমিদা খাতুন ও রাশেদ আল তিতুমীর

১১

‘৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ওরে ছাড়াই নেন, না হলে আরও মারবো’

১২

ঢাবির হলে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক চার

১৩

যুবককে পিটিয়ে হত্যার দায়ে, ঢাবির ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

১৪

ভারতকে হারানোর মজার, মজা নিতে দিন: রোহিত

১৫

‘অদ্ভুত সব শর্তে’ বয়সে বড় প্রেমিকাকে নিয়ে বিয়ে করলেন এনদ্রিক

১৬

বিমানবন্দরে যাত্রীর সঙ্গে অসদাচরণ, তিন রাজস্ব কর্মকর্তা বরখাস্ত

১৭

বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ আবার ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

১৮

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিতে বড় পতন, আগস্টে কমেছে ২৮ শতাংশ

১৯

শেয়ার কারসাজির দায়ে সাংবাদিক হাসিব হাসানকে কোটি টাকা জরিমানা

২০