যুক্তরাজ্যে তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র স্টর্ম শ্যাডো দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা শুরু করেছে ইউক্রেন। গত সপ্তাহে এই হামলার পর যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকে এখন পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখছে রাশিয়া। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা সহিংস হামলা চালাতে পারে মস্কো।
পশ্চিমাদের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের হামলার পর যুদ্ধ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। রাশিয়াও এর পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে। ইউক্রেনের ওই হামলার পর যুদ্ধে নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া।রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, ইউক্রেনের নিপ্রো শহরে শব্দের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন ওই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চলিয়েছে রুশ বাহিনী। তিনি আরও বলেছেন, ইউক্রেনের হামলার মধ্য দিয়ে যেসব দেশ কিয়েভকে দূরপাল্লার অস্ত্র দিচ্ছে, তাদের সামরিক স্থাপনায় হামলার অধিকার তৈরি হয়েছে রাশিয়ার। দেশের নাম উল্লেখ না করলেও পুতিন যে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছেন তা বেশ স্পষ্ট।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছর পূর্তি হবে। এ নিয়ে এত দিন পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার একটা ছায়াযুদ্ধ চলছিল। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে নানা বিষয়ে মস্কোর একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি চললেও প্রচলিত যুদ্ধে জড়ায়নি কোনো পক্ষই। কিন্তু সম্প্রতি শুরু হওয়া ইউক্রেন ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সঙ্গে ১৯৬২ সালে কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার নাশকতামূলক তৎপরতা নিয়ে অনেককে সতর্ক করতে দেখা গেছে। এস্তোনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস এ বছরের শুরুতে বলেন, ইউরোপে ছায়াযুদ্ধ আসলে পুতিনের ছায়া যুদ্ধ চলছে। আর কত দিন এই যুদ্ধ চলতে দেওয়া হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন তিনি।
গত মে মাসে পোল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক অভিযোগ তুলে বলেন, মস্কো একের পর এক নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। গত অক্টোবরে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫–এর প্রধান কেন ম্যাককালাম বলেন, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের সড়কে সড়কে মাতম তৈরির মিশন নিয়ে নেমেছে মস্কো। আর এর নেপথ্যে রয়েছে দেশটির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ।নেদারল্যান্ডসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ন্যাটোর নতুন মহাসচিব মার্ক রুত্তেও চলতি মাসে একই অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মিত্রদের ভূখণ্ডে কৃত্রিম হামলার তৎপরতা বাড়িয়েছে মস্কো। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে সরাসরি হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের শিল্প খাতে নাশকতার পাশাপাশি নানা সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। যুদ্ধক্ষেত্র এখন আর শুধু ইউক্রেনে সীমাবদ্ধ নেই।’
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পুতিনের ছায়াযুদ্ধ যে প্রকাশ্য হয়ে আসছে, গত সপ্তাহের এক বৈঠকেও পাওয়া গেল তার ইঙ্গিত। পোলান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে এ বৈঠকে বসেছিলেন পোল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ন্যাটো ও ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোর বিরুদ্ধে কৃত্রিম যুদ্ধ তৎপরতা বাড়িয়েছে মস্কো। ধরন ও মাত্রার বিচারে যা নজিরবিহীন। এতে করে উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে আগের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে তাঁরা পাশে পাবেন কি না। কারণ হিসেবে আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব নিতে যাওয়া ট্রাম্প ও তাঁরা প্রশাসনে জায়গা পাওয়া ব্যক্তিদের ইউক্রেন নিয়ে অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন