যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অবশেষে নির্মিত হতে যাচ্ছে ভাষা আন্দোনের স্থাপত্য গৌরব শহিদ মিনার।
মিশিগানের হ্যামট্রামিক সিটি কাউন্সিলের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৪ কাউন্সিলরের উদ্যোগে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারীর আগেই স্থায়ী শহিদ মিনার নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থায়ী শহিদ মিনারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করার আশায় বুক বেধেছেন মিশিগানে বসবাসরত প্রবাসীরা।
এতোদিন স্থায়ী শহিদ মিনার না থাকায় মিশিগানে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ নানা আয়োজন বিচ্ছিন্ন ভাবে পালন করে আসছিলেন। বিভিন্ন দিবস পালন করতে নির্মাণ করতেন অস্থায়ী শহিদ মিনার।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হ্যামট্রামিক সিটির মেয়র প্রোটেম ও কাউন্সিলর মোহাম্মদ কামরুল হাসান, কাউন্সিলর নাঈম লিওন চৌধুরী, মুহিত মাহমুদ ও আবু মুসা স্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপনের বিষয়টি ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
তারা জানিয়েছেন, হ্যামট্রামিকে স্থায়ী শহিদ মিনারের নকশা অনুমোদন হয়েছে। নির্ধারণ হয়েছে স্থানও। শহিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে বর্তমান কাউন্সিল নাঈম লিওন চৌধুরী বলেন, ২০২১ সালে সিটি কাউন্সিলে আমি এই প্রস্তাব উত্থাপন করি ।
কাউন্সিল এটি অনুমোদন করে। নাঈম বলেন, বর্তমানে আমরা চারজন বাংলাদেশি কাউন্সিলর আছি। আমরা চারজনই এটি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। হ্যামট্রামিক সিটি কাউন্সিলর মুহিত মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও কৃষ্টির একটা পরিচয় হচ্ছে আমাদের ভাষা। খুব বেশি দেশ নেই যারা ভাষা নিয়ে গর্ব করে। আমরা আমাদের ভাষা নিয়ে গর্ব করি।
আমরা আমাদের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই। মিশিগানের সবাই মিলে যাতে একটি নির্ধারিত জায়গায় উপস্থিত হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও যেন এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারে সেই লক্ষেই এই শহিদ মিনার নির্মিত হতে যাচ্ছে।
শহিদ মিনার নির্মাণকে সফল করতে সকলকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করার আহবান জানিয়ে মুহিত বলেন, সবার দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসা উচিত। আপনারা আসুন, শহিদ মিনার নির্মাণে সাহায্য করুন।
জায়গা দিয়ে শহিদ মিনার নির্মাণে সহযোগিতা করায় সিটি অব হ্যামট্রামিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কাউন্সিলর মুহিত বলেন, সিটি অব হ্যামট্রামিক আমাদের জায়গা দিয়েছেন সে জন্য আমরা সম্মানিতবোধ করছি।
আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই প্রাপ্তিতে শহিদ মিনার নির্মাণের কাজটি অনেক ধাপ এগিয়ে গেল।
কাউন্সিলর আবু মুসা বলেন, ডিস্ট্রিক হলের সামনে অত্যান্ত ভ্যালুয়েবল প্লেইসে আমরা স্থায়ী শহিদ মিনার করবো। এটা আমাদের অহঙ্কার থাকবে।
এখানে লক্ষাধিক বাঙালী মানুষ থাকে। আমাদের একটা শহিদ মিনার নেই। এটা এমনভাবে নির্মাণ করা হবে যে এটা দেখতেও মানুষ আসবে। আমি সাংবাদিক ভাইদেরসহ সকলের সহযোগিতা চাই।
১ টাকা কিংবা ১শ হাজার টাকা হোক, যে যা দিবে আমরা তাই গ্রহন করবো। এটি নির্মাণে আমরা সকলের অংশগ্রহন চাই। এটা এই কমিউনিটির প্রজেক্ট। আমরাই এটা বাস্তবায়ন করবো।
হ্যামট্রামিক সিটির মেয়র প্রোটেম ও কাউন্সিলর মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আমাদের কাগজপত্র এপ্রুভ হয়ে গেছে, রেজুলেশন এপ্রুভ হয়ে গেছে, নকশা এপ্রুভ হয়ে গেছে।
এখন শুধু আমাদের টাকার দরকার। কয়েকজন বিত্তবানের কাছ থেকে আমরা অনুদান আনবো, আমরা নিজেরা ডুনেট করবো।
সর্বস্তরের প্রবাসীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে খুব শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কাউন্সিলর মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
বিচ্ছিন্ন ভাবে নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ সকল জাতীয় দিবস পালনে বাঙালী-অবাঙালীদের এক মিলনমেলায় পরিণত হবে স্থায়ী শহিদ মিনার প্রাঙ্গন।
কাউন্সিল ও প্রবাসীদের যৌথ সহযোগিতায় শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শহিদ মিনার নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে প্রত্যাশা সকলের।
মন্তব্য করুন