আধুনিক বিশ্বে কায়িক পরিশ্রমের তুলনায় টেবিল ওয়ার্ক বা বসে বসে এক নিমেষেই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কাজ করার রীতি সবার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
এ ধরনের অলস জীবনধারার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় পিঠ, ঘাড়, কোমর ও হাঁটুর ব্যথায়। কোনো কারণে একটানা দীর্ঘসময় অস্বাভাবিক দেহভঙ্গিতে বসে থাকলে মেরুদণ্ড আর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না।
লম্বা সময় ধরে ঘাড় কুঁজো করে মোবাইল ও কম্পিউটারে কাজ করলে কিংবা বসে বসে সময় কাটালে ঘাড়, পিঠ, কোমর ও হাঁটুতে ব্যথাসহ দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা, যেমন- অস্টিওআর্থ্রাইটিস, স্পন্ডিলাইটিস ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এ ছাড়া একদৃষ্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করলে স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তিও ব্যাহত হয়। এ ছাড়া যাঁরা দীর্ঘক্ষণ একটানা বসে থাকেন, তাঁদের পায়ে পানি চলে আসে ও পায়ের পাতা ফুলে যায়। এমনকি ‘ভ্যারিকোস ভেইন’ নামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে এখন নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ বা অসংক্রামক ব্যাধি, যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ছে। সুস্থ থাকতে যেসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়া জরুরি টেবিল-চেয়ারে কিছু সময় কাজ করার পর খানিকটা সময়ের জন্য একটু হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করা ভালো। সম্ভব হলে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে ওঠানামার অভ্যাস করতে হবে।
লক্ষ্য রাখুন, চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করছেন বা টিভি দেখছেন তার উচ্চতা এমন হতে হবে, যেন বসে আরাম হয়। ঘাড় বাঁকিয়ে বা নিচু করে দীর্ঘ সময় কাজ করা বা মোবাইল ব্যবহার ঠিক নয়। তাই উচ্চতা অনুযায়ী উঁচু চেয়ার অথবা নিচু টেবিল বেছে নিন, প্রয়োজনে নির্দিষ্ট মাপমতো তৈরি করে নিতে পারেন। গদিওয়ালা চেয়ারের তুলনায় কাঠ বা প্লাস্টিকের তৈরি চেয়ার শরীরের জন্য ভালো।
একটানা বসে কাজ করার সময় মাঝেমধ্যে পা রাখার জন্য টেবিলের নিচে কাঠের তক্তা রাখা দরকার। বিশেষ করে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে যাঁদের পা ফুলে যায়, তাঁদের এই পদ্ধতি বেছে নেওয়া ভালো।
স্বল্প দূরত্বে রিকশা বা ভ্যানের পরিবর্তে হেঁটে চলাচল অভ্যাস করুন। যাঁদের দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করতে হয়, চোখের সমস্যা না থাকলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিরিফ্লেকিভ কোটিং বা আলোক প্রতিরোধী চশমা ব্যবহার করা ভালো।
মন্তব্য করুন