আমার একটা জানালা ছিল।
সেই জানালার কার্ণিশে
বসা একটা কাকও ছিল
জানালায় গ্রিলে তারে বাঁধা
মাটির একটা হাঁড়ি ছিল,
হাঁড়িতে সবুজ অর্কিড ছিল।
সেই অর্কিডের সাথী হয়ে
নির্বান্ধব একটা ‘আমি’ও ছিল।
এলোমেলো মনটা সারাক্ষণই
টলোমলো অতৃপ্ত ছিল।
সে মনো-দীঘি জলে
কাক আর অর্কিডের
প্রতিবিম্ব, ছায়া-খুনসুটি ছিল।
আবছায়া রিলে দেখতাম,
কাকটার একটা পোড়া ক্ষত ছিল,
মন ছিল, দুঃখ ছিল, হতাশা ছিল।
দিনের তলানিতে এসে তবুও
একটু নীলচে জমানো আশাও ছিল।
সেই আশায় স্বপ্ন ছিল, বিলাসিতা ছিল
গান ছিল, গানের সুর ছিল
আর গলা ছেড়ে ‘কা’ ‘কা’ গাওয়ার
পূর্ণ স্বাধীনতাও ছিল।
অনন্ত আকাশে প্রাণ মেলে
ভেসে বেড়ানোর সুখ ছিল,
উঠোন জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর
উন্মুক্ত আহ্বানও ছিল।
কাকটার গানের গুণগ্রাহী শ্রোতা হয়ে
অপেক্ষমান স্বপ্নকামী বোবা অর্কিডটার
বেশ গভীর মাখামাখিও ছিল।
অর্কিডের ডাল ছুঁয়ে হাঁড়িতে বসে
কাকটার নানান গল্প ছিল।
জানালা খুলে পর্দা মেলে
দক্ষিণা হাওয়া জড়িয়ে দাঁড়িয়ে
সব ভুলে আমারও বন্ধু হওয়ার
অকাতর সাধটাও ছিল।
আমার খোলা জানালা ছিল,
প্যাচানো তারে বাওয়া অর্কিড ছিল,
কার্ণিশে বসা একটি কাক ছিল।
বাতাস ওড়ানো ফিনফিনে
সিলিং ছোঁয়া পর্দা ছিল,
পর্দায় তোমার মিষ্টি ঘ্রাণ ছিল,
লাল ঠোঁটের কোমল স্পর্শ ছিল,
রেশমী চুলের দু’একটা রেশও ছিল!
ওরা সবই আমারই ছিল।
ভালোবাসার এই জলজ্যান্ত কাঙ্গালের
একমাত্র তুমি ছাড়া ওরা সবাইই
শুধুমাত্র আমারই ছিল!
অথচ এ জীবনে তোমাকে ভালোবাসার,
কাছে পাওয়ার প্রগাঢ় কামনা ছিল,
তোমার মাঝে পানকৌড়ি ডুবা ডুবে
জলকেলির অদম্য বাসনা ছিল!
আমার দক্ষিণের জানালায়
ওরা সব বেশ উপচেই ছিল,
ছন্নছাড়া মনটা খুব অগোছালো ছিল,
আকুল জীবনটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল।
ভরা ঐ জানালায় দাঁড়িয়ে
তোমার জন্য এই অভাগার
আজীবন এক ঝুড়ি অপেক্ষা ছিল।
কিসের যেন আকুলতা ছিল!
কিসের যেন ভীষণ কমতি ছিল!
মন্তব্য করুন