যুগ পাল্টেছে, বদলেছে আমাদের চারপাশের সবকিছু, বাড়ি হয়েছে বিশাল, টিভির পর্দা হয়েছে চওড়া, গাড়ি হয়েছে ভারী। তবে এই ‘বড়’ হওয়ার হাওয়ায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাবারের পরিমাণ এবং আমাদের কোমরের মাপও। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্থূলতার হার ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে ১৯৬০-এর শতকে এই হার ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত ও অতি প্রক্রিয়াজাত খাবারের আধিক্য। এই স্থূলতা ডেকে আনছে হ্ৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার সমস্যা, নিদ্রাহীনতা এমনকি ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ।
১৯৬০-এর শতকে মানুষ কম ব্যায়াম করেও তুলনামূলক বেশি হালকা গড়নের হতেন। এমনকি তারা খুব কম খেতেন বিষয়টি তেমনও নয়। এর পরও কীভাবে তারা সুস্থ থাকতেন, তা ব্যাখ্যা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক পুষ্টিবিদ অটাম বেটস।
১. ঘরোয়া রান্না
অটাম বেটস বলেন, সেই সময় বেশির ভাগ পরিবারেই প্রতিদিন রান্না করা খাবার খেতেন। সেসব খাবারে থাকত মানসম্পন্ন প্রোটিন, ফলমূল, সবজি, দুধ এবং কার্বোহাইড্রেট-জাতীয় খাবার। শিশুরাও স্কুলে প্যাক করা টিফিনে এই ভারসাম্যপূর্ণ খাবার পেত।
রোস্ট চিকেন, মিটলোফ (মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি একধরনের খাবার), বিফ স্ট্যু (গরুর মাংসের একধরনের স্যুপ), স্টেক (টুকরো মাংস ভাজা) ও আলুর মতো খাবার ছিল তৎকালীন জনপ্রিয় মেনু। তখন ফাস্ট ফুডের প্রচলন প্রায় ছিল না বললেই চলে। এর তুলনায় ফ্রেঞ্চফ্রাই, বার্গারের মতো আজকের অনেক ফাস্ট ফুড আইটেমেই ২ হাজার ক্যালরির কাছাকাছি শক্তি থাকে।
বেটসের বাবা-মা জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিদিনই পট রোস্ট (মাংস ও বিভিন্ন সবজি ধীরে ধীরে সিদ্ধ করে রান্না করা হয়), এমনকি লিমা বিনস (একধরনের শিমের বীজ) খেতেন, যা অনেকের খুব একটা পছন্দ না হলেও সেই সময়ের সাধারণ খাবার ছিল। এসব ঘরোয়া খাবারেই মিলত প্রোটিন ও অধিক সবজি।
সে সময় ঘরোয়া খাবারে চিনির পরিমাণ অনেক কম ছিল। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ঘরে রান্না করেন, তাঁরা তুলনামূলকভাবে কম চিনি, কম ফ্যাট ও কম কার্বোহাইড্রেট খান।
২. অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার
বর্তমানে আমেরিকানদের খাবারের প্রায় ৭০ শতাংশই অতি প্রক্রিয়াজাত, যার মধ্যে রয়েছে আগে থেকে তৈরি করা খাবার, আইসক্রিম, সস ইত্যাদি। এতে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন কৃত্রিম রং, বেশি দিন সংরক্ষণের জন্য ক্ষতিকর উপাদান ও অতিরিক্ত মিষ্টি। এ ধরনের উপাদান খাবারকে স্বাভাবিক স্বাদ ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করে এবং আমাদের অতিরিক্ত খেতে বাধ্য করে।
বেটস বলেন, ‘এসব খাবার আপনাকে তৃপ্ত করে না, বরং আরও খাওয়ার আগ্রহ বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রতিদিন অতিরিক্ত ৮০০ ক্যালরি খাওয়াতে বাধ্য করে।’
তিনি পরামর্শ দেন এ ধরনের খাবার বা দিয়ে ফলমূল, বাদাম, শাকসবজি খাওয়ার প্রতি মনোযোগী হতে।
৩. সক্রিয় জীবনধারা
১৯৬০-এর দশকের মানুষ সাধারণভাবে অনেক বেশি সক্রিয় জীবনযাপন করত। সে সময়ের চাকরিগুলোতে শারীরিক পরিশ্রম ছিল অনেক বেশি। আলাদা করে ব্যায়াম করার প্রয়োজন অনুভব করতেন না কেউ। বেটস জানান, তাঁর বাবা বলেছিলেন, তখন তাঁর দাদাকে জগিং করতে দেখলে বন্ধুরা ঠাট্টা করত কারণ জগিং বা আলাদাভাবে ব্যায়াম করা তখন ছিল অস্বাভাবিক; বরং পরিশ্রমে ভরা সক্রিয় জীবনই ছিল স্বাভাবিক বাস্তবতা।
এদিকে ঘরে বসে থাকাকে শাস্তি মনে করত শিশুরা। স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মতো প্রযুক্তির অভাবে তারা বাইরেই খেলাধুলা করত।
বর্তমানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান গড়ে প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা ১০ মিনিট ঘুমান। আর আধুনিক সময়ের কিছু সফল ব্যক্তি যেমন টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, দিনে মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট। অথচ ১৯৬০-এর দশকে মানুষ গড়ে ৮ দশমিক ৫ ঘণ্টা ঘুমাতেন।
মন্তব্য করুন