পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘হিজামা’ বেশ জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি, যার ঢেউ এসে লেগেছে বাংলাদেশেও। “হিজামা আমাদের দেশে নতুন আলোচিত হলেও এর ইতিহাস অনেক পুরোনো ও সমৃদ্ধ। ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর আবির্ভাবের প্রায় ১৫৫০ বছর পূর্বের এবারস প্যাপিরাস (Ebers Papyrus)-এ তথ্যমতে, ৩৩০০ খ্রিঃ পূঃ হতে মেসিডোনিয়ায় এর চর্চা ছিল। আনুমানিক খ্রিঃ পূঃ ২২০০ সাল থেকে চীনে এটির প্রচলন শুরু হয়।
হিজামা’ শব্দটি আরবি। শাব্দিক অর্থ চোষা, শোষণ করা বা টেনে নেওয়া। আধুনিক ভাষায় একে বলা হয় কাপিং (Cupping), আর প্রচলিত ভাষায় রক্ত মোক্ষণ। প্রয়োগ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন “হিজামা” প্রচলিত আছে—যেমন: আর্দ্র হিজামা, শুদ্ধ হিজামা, চমক হিজামা, অগ্নি হিজামা ইত্যাদি। সম্প্রতি গবেষণায় জানা গেছে, কেউ যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে এবং পাশাপাশি হিজামা গ্রহণ করে, তাহলে তার ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার সহজ সমাধান হতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, হিজামা প্রয়োগের ফলে রক্তনালীর এন্ডোথেলিয়াল কোষ (Endothelial Cells) হতে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) নির্গত হয়। রক্ত সংবহনতন্ত্রের ক্রিয়ার ওপর এই নাইট্রিক অক্সাইডের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এটি রক্ত পরিষ্কার করে এবং মেরুমজ্জাকে কার্যকর ও শক্তিশালী করে।
ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ—যেমন হাঁপানি, বুক ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি রোগ নিরাময়েও এটি বেশ উপকারী। বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট মাথাব্যথা, মাইগ্রেন ও দাঁতের ব্যথা দূর করে। জরায়ুর বিভিন্ন রোগ—যেমন মাসিকের অনিয়ম, কষ্টরজ এবং রজঃবদ্ধতা দূরীকরণেও এটি কার্যকর। গেঁটেবাত, সায়াটিকার ক্ষেত্রেও এটি ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও এটি উপকারী। খাদ্যের বিষক্রিয়া রোধে কার্যকর। শরীরের কোনো অঙ্গে ব্যথা হলে সেখানে হিজামা প্রয়োগ অত্যন্ত উপকারী। সুস্থ ব্যক্তিরাও হিজামা করাতে পারেন, কারণ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া, এটি মনে প্রফুল্লতা ও দেহে উদ্দামতা বয়ে আনে।
হিজামা বা কাপিং–এর মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর জন্য Suction বা মোক্ষণ তৈরির ওপর নির্ভর করে এবং সম্ভাব্যভাবে নিরাময় প্রক্রিয়াগুলোকে উদ্দীপিত করে।
তাপ বা পাম্পের মাধ্যমে অর্জিত মোক্ষণ বা শোষণ প্রক্রিয়া কাপের মধ্যে ত্বক ও পৃষ্ঠের পেশীকে আকৃষ্ট করে, টিস্যু সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করে এবং সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। এই বর্ধিত রক্তপ্রবাহ দেহের ঐ অঞ্চলে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে, পাশাপাশি বর্জ্যপণ্য ও টক্সিন অপসারণে সাহায্য করতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিতে হিজামার উপকারিতা:
রাসুল (সা.) হিজামা নিজে করিয়েছেন এবং বলেছেন:
“আলাইকুম বিল হিজামা“ — অর্থাৎ “তোমরা হিজামা করো।”
হিজামা সম্পর্কে অনেক হাদীস আছে, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত সারমর্ম:
“নিশ্চয় হিজামায় শেফা রয়েছে।” [মুসলিম: ২২০৫]
“হযরত জিব্রাঈল আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তন্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।” [আল-হাকিম, ৭৪৭০]
ডা. ফাহাদ আহমদ
ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক গবেষক, হিজামা থেরাপিস্ট
মন্তব্য করুন