ভয়েস অফ আমেরিকা
২৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৭ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক রদ-বদলের মাঝে ইসরায়েলের নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার বিকেলের দিকে ওয়াশিংটনে পৌঁছান – যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর এক দিন পরেই। বাইডেনের সিদ্ধান্ত গাজা যুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কে আরেকটি অনিশ্চয়তার স্তর যোগ করে।

 

জুন মাসে যখন সফর ঘোষণা করা হয়, তখন কোন যুদ্ধ-বিরতি চুক্তি সম্পন্ন না করেই নেতানিয়াহুর সফরের সময়টা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। এখন, আমেরিকান রাজনীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তনের মুখে ইসরায়েলি নেতা পরবর্তী প্রশাসনের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে রাখতে চান।

 

কর্মকর্তারা বলছেন বাইডেন এবং নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে মিলিত হবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।

 

“আমি দ্বিদলীয় সমর্থন নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো যা ইসরায়েলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ,” নেতানিয়াহু ইসরায়েল ত্যাগ করার আগে বলেন। “আমি দু’দলকেই বলবো, আমেরিকার জনগণ তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাকেই বেছে নিক, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল আমেরিকার অপরিহার্য এবং শক্তিশালী মিত্র হয়ে থাকবে।”

 

নেতানিয়াহু যদিও প্রকাশ্যে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প আর তাঁর সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের মধ্যে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, এখানে কোনও সন্দেহ নেই যে, তিনি কার পক্ষে আছেন, বলছেন ইসরায়েলের বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্টাডিজ –এর প্রধান জনাথান র‍্যনহল্ড।

 

“রিপাবলিকানরা সাধারণত ইসরায়েলের নিরাপত্তা অ্যাজেন্ডাকে বেশি সমর্থন দেয়,” তিনি ভিও এ-কে বলেন। “তাঁরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের ডান-পন্থি সরকারের নীতির প্রতি বেশি ক্ষমাশীল।”

 

এটা বিশেষ করে ট্রাম্পের বেলায় প্রযোজ্য, যার প্রশাসন “অস্বাভাবিক মাত্রায়” ইসরায়েল-প্রীতি দেখিয়েছে যা ইসরায়েলকে “আনন্দে ভরপুর” করে দেয়, বলছেন ডেভিড মিলার যিনি এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনাকারী ছিলেন এবং বর্তমানে কার্নেগী এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এ একজন সিনিয়র ফেলো।

 

ট্রাম্প এব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্পন্ন করতে মধ্যস্থতা করেন, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের সাথে তার কয়েকটি আরব প্রতিবেশীর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয় – সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মরক্কো। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আভিভ থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে যান এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করা গোলান মালভূমির উপর ইসরায়েলি দখলদারিত্বর স্বীকৃতি দেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের জন্য অনুরোধ করেছেন। মিডল ইস্ট ইন্সটিটিউট-এর ইসরায়েল বিষয়ক সিনিয়র ফেলো নিমরদ গোরেন বলেন, ট্রাম্পের সাথে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে, এই ধারনা তিনি ভাঙ্গতে চান।

 

নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠক নিশ্চিত করতে ভিওএ-র প্রশ্নের কোন উত্তর ট্রাম্প প্রচারণা টিম দেয় নি।

 

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের সহকারী ভিওএ-কে জানায়, তিনি এই সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠক করবেন, যেটা বাইডেনের সাথে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক থেকে আলাদা হবে। “তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি ভাইস প্রেসিডেন্ট-এর অঙ্গিকার ছিল অবিচল,” সহকারী বলেন।

 

দেশের ইহুদি সম্প্রদায়ের সাথেও হ্যারিসের শক্ত যোগাযোগ আছে। তাঁর স্বামী ডাগ এমহফ একজন ইহুদী এবং তিনি ইহুদী-বিদ্বেষ মোকাবেলা করতে প্রশাসনের প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

 

তবে বুধবার নেতানিয়াহু যখন কংগ্রেসে ভাষণ দেবেন, তখন সেনেটে সভাপতিত্ব না করে হ্যারিস ইন্ডিয়ানার ইন্ডিয়ানাপোলিসে যাবেন এবং সেখানকার ঐতিহাসিক কলেজ-পড়ুয়া কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের সংগঠন ‘যেটা ফি বেটা’য় ভাষণ দেবেন।

 

গাজা যুদ্ধ নিয়ে ঐতিহ্যগত ভাবে ডেমোক্র্যাটিক ভোটার – প্রগতিশীল, আরব-আমেরিকান এবং আমেরিকান মুসলিমদের ক্ষোভের মাঝে নেতানিয়াহুর ভাষণে করতালি দেয়ার দৃশ্য ভাল দেখাতো না। কংগ্রেসের কয়েক ডজন ডেমোক্র্যাট সদস্যও নেতানিয়াহুর ভাষণ বর্জন করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

 

তবে এ’ধরনের ইঙ্গিত সত্ত্বেও, হ্যারিস প্রশাসনের অধীনে মধ্যপ্রাচ্য নীতির খুব একটা পরিবর্তন আসবে বলে মনে হচ্ছে না, কার্নেগীর মিলার ভিওএ-কে বলেন।

 

তবে হ্যারিস “তাঁর বক্তব্যে অনেক কঠোর হবে, ইসরায়েলের বসতি স্থাপন নিয়ে, এবং তিনি ফিলিস্তিনিদের কষ্ট আর অধিকারের ব্যাপারে অনেক, অনেক বেশি সহানুভূতিশীল হবেন।”

 

কিছু দিনের মধ্যেই ইসরায়েলের সংসদ নেসেট তিন মাসের ছুটিতে যাবে এবং নেতানিয়াহু তাঁর দেশিও রাজনৈতিক লক্ষ্য এগিয়ে নিতে চাইবেন। গাজায় যুদ্ধ বিরতির বিষয় সামনে নিয়ে আসার সুযোগ থাকবে, বলেন গোরেন।

 

“নেসেট অধিবেশনে ছুটির সময়টা নেতানিয়াহুর জন্য পদক্ষেপ নেয়ার উপযুক্ত সময় হতে পারে। তখন তাঁর জোট সরকার ভেঙ্গে পরার আশঙ্কা থাকবে না,” তিনি বলেন। “নেসেট অধিবেশনে ফিরে গেলে সেটা হতে পারে।”

 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন যুদ্ধবিরতি প্রায় নাগালের মধ্যে। কিন্তু গোরেন এবং অন্যান্য বিশ্লেষকরা যুদ্ধ বিরতি চুক্তি প্রথম পর্বের চেয়ে বেশি কিছু হওয়া নিয়ে সন্দিহান। প্রথম পর্বে থাকবে যুদ্ধে ছয় সপ্তাহের বিরতি, এবং তার বিনিময়ে হামাসের হাত থেকে কিছু জিম্মির মুক্তি।

 

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ট্রেজারি সেক্রেটারি পদে স্কট বেসেন্টকে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প

মিশিগান বোর্ড অফ স্টেট ক্যানভাসাররা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যয়ন 

জাতীয় দলে ফেরা প্রসঙ্গে যা বললেন সাকিব

আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবে আহতরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে ২০২৬

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সোমবার ঢাকায় আসছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি

হবিগঞ্জে ভাতিজাদের হাতে চাচা খুন

আগের সরকারের সময়ে যেমন ছিল, এ সরকারের আমলেও সেটাই রয়েছে-ম্যাথু মিলার

মিশিগান রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান পিট কানাডায় রাষ্ট্রদূত মনোনীত

১০

মিশিগানের ওরিয়ন টাউনশিপে বিস্ফোরণ

১১

মিশিগানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইজতেমা ২০২৪

১২

মিশিগানে মাদক ও অ্যালকোহল আসক্তদের চিকিৎসা সেবা প্রসারিত

১৩

যুক্তরাজ্য ফিরেছেন হুমায়ুন কবির

১৪

প্রকৃতির পালাবদল জানান দিচ্ছে, এসে পড়েছে শীত

১৫

মিশিগানে হরিণ শিকার করে নিয়ে যাওয়ার সময় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু-২

১৬

বৃহস্পতিবার সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

১৭

মস্কো–ওয়াশিংটনের হটলাইন এখন আর চালু নেই

১৮

সাকিবের নাম নেই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে

১৯

২৯ বছরের সংসার বিচ্ছেদ

২০