শ্রদ্ধাঞ্জলি

পঞ্চখণ্ডের আকাশ হতে খসে পড়া তারা

কবি ফজলুল হক। বিয়ানীবাজারের পঞ্চখণ্ডের আকাশে মাত্রই খসে পড়া তারা। আমি চাচা বলেই ডাকতাম। আমাদের বেড়ে উঠা থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত উনাকে সাধকের মতোই দেখেছি; দেখেছি সাহিত্য-সমাজ-রাজনীতি-ধর্ম-খেলাধুলা নিয়ে সব চাইতে আপডেটেড চিন্তার একজন চিন্তক হিসাবে। উনার কথা বলার ধরনটি এতটাই চমৎকার এবং মুগ্ধকর ছিলো যে আপনি একবার শ্রোতা হয়ে গেলে ঘড়ির কাটা তো পিছিয়ে যাবেই; কখনো কখনো ক্যালেন্ডারের পাতার দিকে মনোযোগ দিতে হতো।

বিয়ানীবাজারে যে কজন শব্দ গড়ার কারিগর ছিলেন তন্মধ্যে কবি ফজলুল হক অন্যতম সেরা একজন। জীবন নিয়ে; মৃত্যু নিয়ে এতো সহজে কথা বলতে পারতেন বলেই আমরা উনাকে গুরু বলেও ডাকতাম। কবির সাথে আড্ডাতে উনার কথা বলার মধ্যে এতো বেশি হিউমার আর উইট এর ব্যবহার ছিলো সেগুলি একটু মনোযোগী শ্রোতাদের নজর এড়ানোর সুযোগই ছিলো না। এজন্য কবি যখনই কথা বলতেন সেগুলি হয়ে উঠতো একেকটি কাব্য। মানুষকে আপন করে নেওয়ার অনবদ্য গুণের অধিকারী ছিলেন কবি ফজলুল হক। একদা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তপোধীর ভট্টাচার্য্যকে রিসিভ করতে আমরা সুতারকান্দি স্থল বন্দরের চেকপয়েন্টে গেলাম। স্যার আমাদের গুরুর গুরু। তো নিয়ম মাফিক ফর্ম ফিলাপের সময়ে কর্তব্যরত অফিসার তপোধীর ভট্টাচার্য্য স্যারের ঠিকানা লিখে কোথায় উঠবেন সেই ঠিকানায় কবি ফজলুল হকের ঠিকানা লিখার পরে বললেন-সম্পর্ক। কবি সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে বললেন-ভাই। অফিসার খাতায় লিখা নাম দুটি পড়ে একটু প্রশ্নবোধক চাহনি দিতেই কবি বললেন -হ্যাঁ, ভাই ই। শাহজালাল আইয়া আমরার কিছুরে অবায় নিছইন, আর কিছু হবায় রইছন। কলম রেখে অফিসার উচ্চারণ করলেন-অহহ।

ফজলু চাচা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে কথা বলার শক্তি হারালেন অতঃপর আমাদের ছেড়ে চলেন। পঞ্চখণ্ডের সারস্বত সমাজের পরম্পরা রক্ষায় আমাদের গুরু হয়ে ওঠা এই সাধকের জীবন নতুন প্রজন্মের নিকট পৌছানো প্রয়োজন।

Back to top button