কীভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়বেন? ফ্রিল্যান্সিংয়ের আদ্যোপান্ত

কীভাবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়বেন? ফ্রিল্যান্সিংয়ের আদ্যোপান্ত

ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আমরা স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবো। সর্ব সাধারণে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জনকে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয় । ধরাবাঁধা কোনো অফিস টাইম ছাড়া, যখন ইচ্ছা করবে তখনই কাজ করার সুযোগকে ফ্রিল্যান্সিং বলা যায় ।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুই ধরনের ফ্রিল্যান্সিং করার সুযোগ রয়েছে :
১/ ভার্চুয়াল ফ্রিল্যান্সিং
২/ সরাসরি ফ্রিল্যান্সিং

ভার্চুয়াল এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। সে সাথে এই সেক্টরে প্রচুর পরিমানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই সেক্টরে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো অফিসের প্রয়োজন নেই বরং যেকোন জায়গা থেকে কাজ করা যায়। সেই সাথে বিদেশী বায়ারদের সাথে কাজ করে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
ভার্চুয়াল ফ্রিল্যান্সিং :
1. Apps Development
2. Web development
3. Data Analyst
4. Software development
5. Digital Sales and Marketing
6. SEO
7. Plugins Development

ভার্চুয়াল ফ্রিল্যান্সিংয়ে এডভান্স লেভেল শিখতে হলে, প্রথমত ১ বছরের অধিক সময় ব্যয় করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তবে এই লেভেলের দক্ষতা অর্জনের জন্য ম্যাথ, ইংরেজী এবং প্রোগামিংয়ে একটু ভালো হতে হবে। HSC পাশ করার পর থেকে এই সেক্টর নিয়ে টুকিটাকি পড়াশোনা শুরু করলে ভালো করা যেতে পারে।

বেসিক লেভেল: উদাহরন
1. Graphics Design
2. UI Design
3. Voice/ Video artist
4. Animation
5. Data Entry
6. Customer Service

ভার্চুয়াল ফ্রিল্যান্সিংয়ে বেসিক লেভেল শিখতে হলে, নুন্যতম ৬ মাসের অধিক সময় ব্যয় করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই লেভেলে ভালো কিছু করতে হলে, Graphics Design /Animation কে সিলেক্ট করতে পারেন। এই সেক্টরের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরাসরি ফ্রিল্যান্সিং :
1. Delivery task
2. Hair dresser
3. Beauty services
4. PC Repair
5. Mobile Repair
6. Home made food
7. Cab Driving
8. Tutor Service

ভার্চুয়াল এর পাশাপাশি সরাসরি ক্লাইন্ট সার্ভিসের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। ইউরোপের মত দেশগুলোতে অনেকেই অনলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে সরাসরি ক্লাইন্ট সার্ভিস দেয়াকে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এছাড়া বিশ্বের যেকোন প্রান্তে এই মাধ্যমে আয় করা সহজ।

কিভাবে শুরু করবেন ভার্চুয়াল ফ্রিল্যান্সিংয়ে আয় ?
আপনি যখন নিজেকে কোন একটি সেক্টরে দক্ষ করে গড়ে তুলবেন , তারপর ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে নিজেদের জন্য খুব সহজে একটি একাউন্ট খুলতে পারবেন। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং আয়ের জন্য অনেক প্লাটফর্ম রয়েছে যেমন: Fiverr, Freelancer, Upwork, Seoclerks, peopleperhour, 99designs, Behance, flexjobs ইত্যাদি।

একাউন্ট খোলার পর সেটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। শুরুতে আপনি অন্য কয়েক জনের আইডিকে ফলো করে নিজের জন্য তখন তথ্য উপস্থাপন করে মার্কেটপ্লেস গুলোকে তৈরি করতে হবে। সকল বায়ার মার্কেটপ্লেসে কিছু পোর্টফোলিও এবং ভালো রিভিউ দেখতে চায়। এর পরে শুধু প্রথম কাজের জন্য অপেক্ষা।

সেই সাথে নিজের সোস্যাল মিডিয়ার আইডিগুলো ভালো ভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে। বিভিন্ন পরামর্শ ব্লগে পোস্ট / উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ কিভাবে পাবেন?
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে অনেক অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন।

একজন ক্লায়েন্ট কেন আপনাকেই কাজটি দিবে? তার জন্য আপনাকে অবশ্যই খুবই ভালো মানের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভালো হতে হবে। তাছাড়া আপনাকে যে কাজটির জন্য ক্লায়েন্ট পেমেন্ট করবে সেই কাজটিও আপনাকে অত্যন্ত ভালোভাবে সুসম্পন্ন করতে হবে।

মনে রাখবেন, বায়ারের সাথে যতো ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ততো বেশি সুন্দর হবে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন প্রতিটি বায়ারের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করার।

আউটসোর্সিং বিষয়টি কী?
ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেয়। নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কাউকে দিয়ে এসব কাজ করানোকে আউটসোর্সিং বলে। যাঁরা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে দেন, তাঁদের ফ্রিল্যান্সার বলে।

কীভাবে কাজ করবেন?
আউটসোর্সিং সাইটগুলোতে দুই ধরনের জব থাকে। আওয়ারলি প্রাইস এবং ফিক্সড প্রাইস। বায়ার তার ইচ্ছে মত আপনার প্রোডাক্ট গুলো কেনার জন্য আপনার প্রোফাইলে আসবে।

তাই এমন ভাবে আপনার প্রোডাক্টগুলো সাজাবেন যেন খুব ভালো প্রাইস দিতে পারেন এবং প্রাইসের সাথে সার্ভিস গুলোর বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে কারা সফল হচ্ছে ?
ফ্রিল্যান্সিং খুব একটা সহজ নয়। অনেক ফ্রিল্যান্সার এই সেক্টরে এসে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। প্রথমত ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে দক্ষতার পাশাপাশি ক্লাইন্ট মেনেজমেন্ট শিখতে হবে।

আপনি ক্লাইন্টের কাজ নিদিষ্ট সময়ে আগে জমা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে ক্লাইন্টকে খুশি রাখতে হলে, অনেকবার এডিট করে দিতে হতে পারে। তখন সময় অপচয় হলেও ভবিষতের জন্য ভালো রেজাল্ট নিয়ে আসতে পারেন। আপনার নানা ধরনের অযুহাত একজন বায়ার শুনতে রাজি নয় । অন্যথায় এই সেক্টরে আপনি ভালো কিছু করতে পারবেন না।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি জব করা কি প্রয়োজন ?
ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি জব করলে আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। যা দিয়ে খুব সহজে আপনি মার্কেটিং এবং ম্যানেজমেন্ট শিখতে পারবেন। প্রতিটা ফ্রিল্যান্সার এক একটি সম্পদ, তাই আপনার ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে চাকুরি করলে ভালো হবে।

কারন প্রতিটা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য পুরন করে থাকে । আপনি খুব সহজে সেই সকল কৌশল গুলো নিজের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার জন্য শিখে নিতে পারবেন ।

কিভাবে আপনি আপনার প্রোডাক্ট তুলে ধরবেন ?
ধরুন আপনি যদি ডিজাইন সার্ভিস দিচ্ছে সেক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে:
১. প্রোডাক্ট – আপনি কি কি ডিজাইন করেন , তা তুলে ধরুন। আপনার কাজ করা কিছু ডিজাইনের সেম্পল আপলোড করুন। আপনার প্রতিটি অথবা প্যাকেজ প্রাইস তুলে ধরুন। কত দিনের মধ্যে কাজ শেষ করবেন তা তুলে ধরুন।

২. ম্যানেজমেন্ট – ক্লাইন্ট যখন আপনাকে নক করবে, যত দ্রুত সম্ভব তাকে উত্তর দিন। আপনার সেবাকে চ্যাটের মাধ্যে তুলে ধরুন। কাজ কনফার্ম করার পর তাকে আপডেট দেয়ার চেষ্টা করুন। সেই সাথে যথাযত সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন।

৩. রিভিউ – ক্লাইন্টের কাজ বুঝে দেয়ার পর, আপনি তার কাছ থেকে রিভিউ নেয়ার চেষ্টা করুন এবং আগামীতেও তার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে রাখুন।

এই ভাবে আপনি আপনার সেবাকে তুলে ধরতে হবে ।

 

আরও পড়ুনঃ মিশিগান মাতিয়ে গেলেন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী শুভ্র দেব


Posted

in

by

Tags: