ছিলেন সৃজনশীল কাজের প্রেরণাদাতা
কবি ফজলুল হক আমাদের বলে গেলেন জীবন খরচ করে জেনেছি দুঃখের তপস্যাই জীবন।
ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন আমার বড় আপনজন। যাঁর কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে সৎ জীবন-যাপন করতে হয়, কীভাবে ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে জয় করতে হয়, এই মহান মানুষটির হাত ধরে আমি কলম ধরা শিখেছি। আমার জীবনে প্রথম যে বইটি লিখেছিলাম কবির হাতে প্রচ্ছদ করা ছিলো।
বিয়ানীবাজারে আমার ঠিকানা ছিলো ফজলু ভাইয়ের আল-আমিন প্রেস আর পেপার এজেন্সী, আর শেষ আড্ডা হতো বকুলদার হোটেল। আমার জীবনের দীর্ঘ ১৫ বছর ফজলু ভাইর সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম, আজ ফজলু ভাই নেই, বকুলদার হোটেল আছে কিন্ত হোটেলের সেই গৌরা নেই যাকে বলতেন গৌরা দুইটা চা আর দুইটা জুলাফি দে! আজ হৃদয়টা দুমড়ে-মুচড়ে খানখান হয়ে যাচ্ছে কত শত স্মৃতি আমায় নীরবে পোড়াচ্ছে। তিনি ছিলেন আমার ভরসার জায়গা। সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি থেকে শুরু করে জগৎ সংসারের সবই শেয়ার করার মতো একজন। ছিলেন আমার সব সৃজনশীল কাজের প্রেরণাদাতা। রোদ বৃষ্টিতে তিনি ছিলেন ছাতার মতো। জীবনে প্রথম যে দিন আমি কবিতা লিখি সে দিন ফজলু ভাইকে দেখালাম তিনি কবিতাটি পড়ে মুচকি হেসে বললেন তোর কবিতায় প্রাণ আছে তুই একদিন মাটির কবি হবে। একটি কথা বলি তুই যেখানে যাবি কখনো লেখা ছাড়বিনা। আজও কবিকে দেয়া কথা রেখে চলছি, জানিনা কতোটুকু লিখতে পারি তারপরেও চেষ্টা করে যাই।
মনীষাদীপ্ত পঞ্চখণ্ডের উজ্জ্বলতম ব্যক্তিত্ব, আশির দশকের কবি, বড় অভিমান নিয়ে চলে গেলেন পরপারে কিন্ত আমরা কবিকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি, দিতে পারিনি তার যোগ্য সম্মান। গত বছর দেশে গিয়েছিলাম কিন্তু বিয়ানীবাজারে যাওয়ার তাড়না খুব একটা অনুভব করিনি। কারণ বিয়ানীবাজারে যে ফজলুল হক নেই। সন্তানদের লেখাপড়ার প্রয়োজনে তিনি সিলেট শহরে বসবাস শুরু করেছিলেন। শত ব্যস্ততার পরেও একদিন ফজলু ভাইর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম উনার সিলেটের বাসায়, বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন অনেক দিন পরে তরে পেয়ে আমি অনেক কষ্ট মুহূর্তে ভুলে গেছি। ঘন্টা চার এক ছিলাম, এ দেখাই শেষ দেখা!
আমি ঘুম থেকে উঠে ফেসবুক খুলে যখন সেই দুঃসংবাদটা শোনলাম মুহূর্তে আমার পৃথিবীটা তছনছ হয়ে যায়। নিজেকে কোনভাবে বুঝাতে পারিনি, নিজের অজান্তে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলি। কবি ছিলেন আমার বড় ভাই, বন্ধু, সেই সাথে ছিলেন আমার গুরু। ছিলেন আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি এক আপনজন। ফজলু ভাই, বিয়ানীবাজারে যখনই কোনো সৃজনশীল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে তখনই আপনার প্রয়োজনীয়তা অনিবার্যভাবে অনুভূত হবে। আপনি থাকবেন আমাদের অস্থিত্বজুড়ে। আমাদের যা কিছু অর্জন তা অনায়াসে স্বীকার করবে আপনার স্বতন্ত্র উপস্থিতি। আপনাকে বিদায় বলবো না। আপনি থাকবেন আমাদের সঙ্গেই। বেঁচে থাকবেন সৃষ্টি আর সৃজনশীলতার মাঝে। আপনি পরপারে অনেক ভালো থাকবেন আমার বিশ্বাস, আমি কথা দিচ্ছি আপনার সন্তানদের মাথার উপর আপনার মতো ছায়া হয়ে থাকবো আজীবন।