আমাদের রাজধানী ঢাকা কয়েক শত বাংলা ইংরেজি প্রিন্ট মিডিয়া, শক্তশালী টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টালসহ গণমাধ্যমের জোয়ারে ভাসছে। কিন্তু মার্কিন মুলুকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী চালিকা ব্যক্তিত্ব আন্ডার সেক্রেটারী আজরা জেয়া, যিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিনিধি হিসেবেই বাংলাদেশ সফর করে গেলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার ও এদেশের সুশীল সমাজের সাথে তিনি অন্তরঙ্গ পরিবেশে বৈঠকের পর বৈঠক করলেন। এদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিক ভাষায় নানাভাবে মতামত দিয়েছেন তিনি।
আমরা গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানি, এসব শীর্ষ কূটনীতিকরা প্রকাশ্যে কিছু কথা বললেও আড়ালে আবডালে অপ্রকাশ্যেই আসল কথাবার্তা, মতামত দিয়ে যান।
বাস্তবে অপ্রকাশ্যেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়ে গেছে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। বিদেশ থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য, কনক সারওয়ার, ইলিয়াস হোসেইনসহ অনেক নামিদামী সাংবাদিক সেসবের আলামত প্রকাশ করেছেন।
একই সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিশালী একটা প্রতিনিধি টিম সরকার ও বিরোধী দলের সাথে সিরিজ বৈঠক করে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন। এসব গুলো বিষয়ই বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
কিন্তু আমাদের মিডিয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় নিয়ে কোনো ইনডেপথ স্টোরি করতে পারেনি। ডিপ্লোমেটিক রিপোর্টে ভেতরের কোনো অনুসন্ধান আমরা লক্ষ্য করিনি। যেটা আজকের বাংলাদেশের বার্ণিং পয়েন্ট।
বাংলাদেশের কোটি কোটি পাঠক বা সাধারণ মানুষ যে বিষয়টি নিয়ে উন্মুখ হয়ে আছেন। কী বার্তা দিয়ে গেলেন তারা? কিন্তু তেমন কিছুই জানাতে পারেননি আমাদের মিডিয়াওয়ালারা। ঢাকার মিডিয়ার এমন ভূমিকায় আমি রীতিমতো বিস্মিত। হতবাক।
ঢাকার মিডিয়ার এমন নিরবতার আসলে কী কারণ? তারা কি ভেতরের কিছুই জানেন না? আমার তো এমনটি মনে হয় না। শুধুমাত্র এনটিভির জহিরুল আলম একটা এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ নিয়েছেন দেখলাম।
বেশ চমৎকারই হয়তো বলবো আমি। ডিপ্লোমেটিক সাংবাদিকতার খরায় তাঁর এই সাক্ষাতকার কিছুটা রোদেলা বৃষ্টির মতো।
আমার দেশি বিদেশি অনেক বন্ধু বান্ধব আমার কাছে জানতে চেয়েছেন আসলে কী বার্তা দিয়ে গেলেন আজরা জেয়া! আমার কী মনে হয়? একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন সবাই নিশ্চয়ই।
আজরা জেয়া বারবারই বাংলাদেশে একটা কার্যকর নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন এরকমই একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাহলে বুঝা গেলো যেনতেন মার্কা কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেই। ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা জানিনা সরকারের চালিকা শক্তিকে তিনি হয়তো আরও শক্ত করে কিছু বলে গেলেন কী না!
লক্ষনীয় বিষয় হলো, বিএনপি বা বিরোধী পক্ষের কারো সাথে আজরা জেয়া কোনো বৈঠক করেননি। আমার মতে, বিরোধী দলের সাথে আলোচনায় বসলে বরং সরকারের সাথে বিরোধী দলের সমঝোতা করে দেয়ার মতো কোনো সম্ভাবনা তৈরি হতো। সেটা তো যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া নয়।
তাদের চাওয়া নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আর সেক্ষেত্রে তাদের টার্গেট প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের সাথে নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা।
যুক্তরাস্ট্র আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প ও উন্নয়নের বড় অংশীদার। বিদেশে জাতিসংঘের সেনা মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাই প্রধান। আইএমএফ সম্প্রতি আমাদের রিজার্ভের তথ্যও জানাতে বাধ্য করেছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এসব কিছুই একটা লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ঘটছে বলে আমার ধারণা।
আজরা জেয়ার জুলাই সফরের সার্থকতা ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে আমরা হয়তো জানতে শুরু করেছি। আরো জানতে হলে দু’একটা মাস অপেক্ষা করতে হবে। আমার মনে হয়, ডিসেম্বর জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যে নির্বাচনের তোড়জোড় সরকারি দলের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে তা আদতেই ভেস্তে যেতে বসেছে আজরা জেয়ার সফরের পর।
সময়মতো এই নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নতুন সময়ে, নতুনভাবে একটা নির্বাচনের দিকেই বাংলাদেশ হয়তো পা বাড়াচ্ছে বলেই আমার ধারণা।
সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কায়েম হোক।