বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে একটি নতুন কনস্যুলেট অফিস স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে-এটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও প্রবাসীবান্ধব একটি পদক্ষেপ। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় গত ২৩ অক্টোবর, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে, যেখানে দেশের কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক সেবা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
মিশিগান যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য, যেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। বিশেষ করে ডেট্রয়েট শহরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী বাংলাদেশি প্রবাসী কমিউনিটি, যারা প্রযুক্তি, শিল্প, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। এ অঞ্চলের প্রবাসীদের এতদিন ওয়াশিংটন দূতাবাসে কিংবা নিউ ইয়র্ক, শিকাগো কনস্যুলেটে গিয়ে সেবা নিতে হতো, যা ছিল সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং অনেকের জন্য কষ্টকর। নতুন কনস্যুলেট চালু হলে তাদের পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব, ভিসা, জন্মনিবন্ধন, এবং অন্যান্য কনস্যুলার সেবা স্থানীয়ভাবেই সহজে পাওয়া সম্ভব হবে।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় এই নতুন কনস্যুলেট শুরু থেকেই পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে-যা প্রবাসী সেবায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আবেদন ও সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া হবে দ্রুত, স্বচ্ছ ও ঝামেলামুক্ত। এতে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সরকারি সেবা গ্রহণ আরও সহজ হবে এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সংযোগ আরও দৃঢ় হবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে ওয়াশিংটন ডিসিতে, পাশাপাশি কনস্যুলেট অফিস পরিচালিত হচ্ছে নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, হিউস্টন, মিয়ামি ও নিউ অরলিন্সে। এর সঙ্গে মিশিগানের নতুন কনস্যুলেট যুক্ত হলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি আরও বিস্তৃত হবে এবং উত্তর আমেরিকার মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলের প্রবাসীদের জন্য একটি নতুন সেবাকেন্দ্র তৈরি হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বিশাল অবদান রাখে। তাই তাদের কল্যাণে নতুন কনস্যুলেট প্রতিষ্ঠা শুধু প্রশাসনিক প্রয়োজন নয়, এটি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার প্রতিফলনও বটে।
সরকারের এই উদ্যোগ যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা তত দ্রুত এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। আমরা আশা করি, মিশিগান কনস্যুলেট শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবে এবং প্রবাসী সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
মন্তব্য করুন