মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজার ফিলিস্তিনিদের মিশর এবং জর্ডানে স্থানান্তরের একটি বিতর্কিত প্রস্তাব দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে তিনি গাজা অঞ্চলের মানবিক সংকট সমাধানের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, গাজার ফিলিস্তিনিরা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার, তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের জন্য মিশর এবং জর্ডান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
গত শনিবার (২৫ জানুয়ারি) ট্রাম্প জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে একটি ফোনালাপে বলেন, গাজার মানুষগুলো মারাত্মক মানবিক সংকটের মুখোমুখি। তাদের একমাত্র বিকল্প হলো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া। আমি চাই আরব দেশগুলো তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক। তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপটি স্বল্পমেয়াদি অথবা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে এবং এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য একধরনের নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে। তবে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাস। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজার মানুষের জন্য তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই। তারা তাদের মাটি ও ঘরবাড়ি হারালেও, তারা কখনোই অন্য কোথাও স্থানান্তরিত হতে রাজি নয়। হামাসের এ ধরনের কঠোর অবস্থান, ট্রাম্পের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও, মিশর এবং জর্ডানও ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধাগ্রস্ত। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজস্ব ভূখণ্ডে শান্তিতে বাস করার অধিকারী। গাজার সমস্যা সমাধানে একমাত্র পথ হলো একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা, এবং সেটা পুরোপুরি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে।” তিনি আরো বলেন, মিশর কোনোভাবেই গাজার শরণার্থী সংকটের সমাধানে অন্তর্ভুক্ত হতে চায় না, এবং তারা কোনো নতুন শরণার্থী গ্রহণের জন্য প্রস্তুত নয়। এদিকে, জর্ডানের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দেশটি গাজার শরণার্থীদের গ্রহণ করতে সক্ষম নয়, কারণ এর ফলে দেশটির নিজস্ব অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুতর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। জর্ডান সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, গাজা থেকে নতুন শরণার্থীদের স্রোত আমাদের দেশের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেবে, যা আমরা সামলাতে পারব না।
গাজার মানুষের জন্য জীবন এখনো দুর্বিষহ। ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গাজা অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে, এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা কয়েক দশক সময় নিবে। এই সংকটের কারণে সেখানে লাখ লাখ মানুষ মানবিক দুর্দশায় ভুগছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাও অবিলম্বে একটি বৃহত্তর মানবিক সাহায্য প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবকে আন্তর্জাতিক মহলে কিছুটা সমর্থনও মিলেছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, গাজার পরিস্থিতি যদি তীব্রতর হয়, তবে আরব দেশগুলোকে শরণার্থী গ্রহণের বিষয়টি পুনরায় ভাবতে হতে পারে। তবে, এ ধরনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং স্থানীয় জনগণের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এখনও পর্যন্ত, গাজা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং এ ধরনের বিতর্কিত প্রস্তাবের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় পদক্ষেপ এবং সংলাপের মধ্য দিয়ে একটি টেকসই সমাধান বের করা সম্ভব হতে পারে, তবে তাতে সকল পক্ষের সমঝোতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন