প্রিয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
- আপডেট সময় : ০৮:৫৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জুন ২০২২ ০ বার পড়া হয়েছে
বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে তিনি মারা যান। বর্ষীয়ান লেখক ও সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীদীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।
যুক্তরাজ্যে আমার বসবাসকালীন সময়ে অনবদ্য অর্জনের একটি ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা প্রিয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আমার প্রিয় গাফ্ফার ভাইয়ের সংস্পর্শ। উনার সাথে আমার বয়সের ব্যবধান নাইবা বললাম উনার সঙ্গে আড্ডায় বসলে মনে হতো আমিই বোধহয় বুড়ো হয়ে গেছি। আমার সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ আবদুল গাফফার চৌধুরী। সকলেই জানেন তিনি স্বনামধন্য সাংবাদিক, স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয় বাংলার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। আমি তখন ছাত্রজীবন পার করছি সেই সময়ে তাঁর অনুপ্রেরণা আমাকে সাংবাদিকতাপেশায় টেনে নিয়ে আসে। বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বরিশাল জেলার এক জলবেষ্টিতগ্রাম উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। তিনভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ত্রিশ। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ বেশ কয়েকটি নাটক লিখেছেন।
বছর দুয়েক পূর্বে ফোনলাপে তিনিই বলেছেন, “শরীরটা বেশ ভালো না, যেকোন সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। ইকবাল অনেকদিন তোমাকে দেখি না, লন্ডনে কবে আসবে? আমি বলেছিলাম খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে ভাই।” যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে নিজের ব্যস্ততায় আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি লন্ডন। হয়তো আগামীতে সময় পেলেই আমার স্মৃতির শহর লন্ডনে ছুটে যাবো কিন্তু আমার পরামর্শদাতা, অনুপ্রেরণাদাতা গাফ্ফার ভাইয়ের সাথে আর দেখা হবেনা ভাবতেই চোখের কোনে অশ্রু এসে জমছে। লেখাপড়ায় আমার ভালো রেজাল্টের পেছনে বেশ ভূমিকা রয়েছে গাফফার ভাইয়ের। তিনি অনেক পরামর্শ দিতেন। বলতেন, যাচ্ছে তাই ভাবে লেখাপড়া করলে হবেনা, মেধাকে বিকশিত করতে প্রয়োজন সঠিক বিদ্যা, আর সে কাজটি যত্নের সাথে। একদিন সেটাই তোমাকে নিয়ে যাবে খ্যাতির শিখরে।” অনেক স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছি।
গাফ্ফার ভাই বলতেন, “ ইকবাল তুমি মেধাবী, ভবিষ্যতে অনেক ভালো পজিশনে যাবে” জানিনা ভালো কোনো পজিশনে যেতে পেরেছি কিনা কিন্তু এটাজানি আমার প্রতিটি ভালো পদক্ষেপে জড়িয়ে আছেন গাফ্ফার ভাই। আমার লেখা গল্পগ্রন্থ বিয়ান বাংলাদেশের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়। সেই বইটি প্রকাশের নেপথ্যের নায়ক তিনি। আমার মতো অসংখ্য তরুণকে তখন তাঁর মোটিভেশনাল বক্তব্যে বদলে যেতে দেখেছি জীবনের গতিপথ। বিয়ান বইটি লন্ডনে আমার হাতে পৌছার পর গাফ্ফার ভাই বললেন,‘‘তুমি কখনও এইপথ ছেড়ো না ইকবাল, লেখালেখির পথটাই সঠিক পথ। তোমার এই বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।” গাফ্ফার ভাইকে নিয়ে লিখতে গেলে লেখা শেষ করা সম্ভব না। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে যে কয়েকজন ব্যক্তির সান্নিধ্য আমাকে সকল গ্লানি মুছিয়ে দিতো তার একজন তিনি। আজকাল যখন অসংখ্য মানুষকে দেখি আমাকে নিয়ে নেতিবাচক আলোচনায় মূখর তখন চোখের দৃশ্যপটে বারবার ভেসে ওঠে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মুখ।
কত আলোচনায় বসেছি, কত অনুষ্ঠানে একসাথে গিয়েছি, কত আড্ডা হয়েছে একান্ত, কোনদিনও কাউকে নিয়ে নেতিবাচক একটি শব্দও শুনিনি। আহ! আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আপনার সান্নিধ্য না পেলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না মানুষ কতটা বিনয়ী হতে পারে। আপনি বেঁচে থাকবেন আপনার কর্মে যেকেনো বাঙালির হৃদয়ে। আপনাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে আর বেশিদূর এগোতে পারছিনা। পরকালে আপনি ভালো থাকুন। বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ তায়ালাআপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। আমীন।